ডেস্ক : বাংলাদেশে এখন সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য আনসার সদস্যদের দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উত্তরের জেলা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রশাসনের মাঠের কর্মকর্তার নিরাপত্তার বিষয় আলোচনায় এসেছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমিতি বলেছে, এই হামলার ঘটনার অনেক আগে থেকেই মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের মুল কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল।
নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে কিনা-সেই প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন। রাতের অন্ধকারে সরকারি বাসভবনের একেবারে বেডরুমে ঢুকে ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনার কারণ জানতে সময় প্রয়োজন বলে কর্মকর্তারা বলেছেন। তবে এই ঘটনার প্রেক্ষাপটেই নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে এসেছে।
উত্তরের একটি জেলা বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহান বলেছেন, মাঠ পর্যায়ে সরকারি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বার্থন্বেষী অনেকে ক্ষুব্ধ হয় এবং সেজন্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে তারা পড়েন।
“আমরাতো কাজ করি মাঠ প্রশাসনের একেবারে সামনে থেকে। যে কোন ধরণের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তগুলো আমরা যখন বাস্তবায়ন করতে যাই, সেখানে অনেকেই সংক্ষুব্ধ হয়ে যায়। তাতে আমাদের কিছু করার থাকে না। সেই জায়গা থেকে আসলে নিরাপত্তহীনতার প্রশ্নটা চলে আসে। এখানে যারা সংক্ষুব্ধ হয় বা বঞ্চিত হয়, তাদের মধ্য থেকেই বিষয়গুলো মাথা চাড়া দেয়।”
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, এখন দেশের সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনওদের বাসভবনে আনসার ব্যাটালিয়নের পাঁচজন করে সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছে।
তবে প্রশাসনের বিসিএস কর্মকর্তাদের সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, এখনকার হামলার ঘটনার অনেক আগে ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে ইউএনওদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার দাবি এসেছিল এবং প্রধানমন্ত্রীও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়শনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, বিভিন্ন সময় ইউএনও’র অফিস বা গাড়ি ভাঙচুরের মতো ঘটনায় নিরাপত্তার প্রশ্ন এসেছে। তবে এখন হমলায় ঘটনায় বিষয়টি আবার উঠেছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
“সরকারের বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ পালন করতে গিয়ে মোবাইল কোর্ট করা এবং এলাকায় যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বা বালুমহাল, জলমহালসহ সরকারি জায়গা যারা অবৈধভাবে দখল করে থাকে, এদের বিরুদ্ধে ইউএনও আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এসব বিভিন্ন কারণে ইউএনও’র অফিস বা গাড়ি ভাঙচুর করা, ইউএনও’র সাথে রাগারাগি করা বা গালাগালি করা বা অফিসে হামলা করা- বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হয়েছে এসব। আমাদের কাছে নজির আছে।”
মি: আহমেদ আরও বলেছেন, “এই প্রথম দেখলাম যে, ইউএনও’র বাসভবনে রাতে প্রবেশ করে ইউএনওকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে আঘাত করা হয়েছে। তখন এই নিরাপত্তার বিষয়গুলো সামনে চলে আসে।”
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সাবেক একজন সচিব আলী ইমাম মজুমদার আশির দশকের শুরুতে বিভিন্ন উপজেলায় সাত বছর ইউএনও হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি মনে করেন, সময়ের সাথে সাথে মাঠ প্রশাসনের কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে।
“আমরা কাজ করেছিতো। তখন পরিবেশটা এরকম ছিল না। এখন সন্ত্রাসের প্রেক্ষাপট সারা পৃথিবীতেই ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হয়েছে। এটার প্রতিফলন আমাদের সমাজেও ঘটেছে। ক্ষোভ তখনও ছিল। কিন্তু ক্ষোভ প্রকাশের অভিব্যক্তিটা বর্তমানে অনেকটা হিংসাশ্রয়ী হয়ে গেছে। আমরা যখন ছিলাম, আমরাতো পুলিশ ছাড়াই এ জাতীয় অনেক কাজ করেছি। কিন্তু এখন পুলিশকে নিলে পুলিশকেও হামলা করে।”
নিরাপত্তা ঝুঁকির পেছনে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ ওঠে। হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, নিরাপত্তার ঝুঁকি যারা তৈরি করে, তারা অনেকে রাজনীতিকে ব্যবহার করে।
“যারা ধরেন প্রভাবশালী বা যারা অবৈধ কাজ করে, তারা কিন্তু রাজনীতি তাদের উদ্দেশ্য না, তারা রাজনীতিকে ব্যবহার করে। তারা যাতে এই অবৈধ কাজগুলো করতে পারে, তখন তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যানারে সামনে চলে আসে। তারা সন্ত্রাসী হোক বা চর দখলকারি হোক- তারা রাজনৈতিক ব্যানারে কাজগুলো করতে থাকে।”
ঘোড়াঘাটে ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন আটকদের কেউ কেউ যুবলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে পুলিশ বলেছে।
বিষয়টাতে সরকারের একাধিক মন্ত্রীকেও কথা বলতে হয়েছে। তারা বলেছেন, হামলাকারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় নেয়া হবে না। সূত্র : বিবিসি বাংলা।