আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বুড়ি হইলাম তোর কারণে কোন বা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’ খ্যাত বাউল সম্রাজ্ঞী, অসংখ্য মাটি ঘেঁষা ও শেকড়ের গন্ধমাখা গানের ফেরিওয়ালা, কালজয়ী লোকসঙ্গীত রচয়িতা, সুরকার ও শিল্পী সুফিয়া খাতুন যিনি কাঙালিনী সুফিয়া হিসেবেই অধিক পরিচিত। বর্তমানে এই শিল্পী বাস করছেন সাভারের জামসিং এলাকায়। এখানে তিন শতাংশ জমির ওপর একটি টিনশেড ঘরে কাঙালিনী মেয়ে পুষ্প ও নাতনিদের নিয়ে থাকেন।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত অসুস্থতায় দিন কাটিয়েছেন, পরে প্রধানমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা পান তিনি। তারপরও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একপ্রকার মানবেতর দিন কাটাচ্ছিলেন এই খ্যাতনামা বাউল শিল্পী।
যাবতীয় দায়িত্ব নিলেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) কাঙ্গালিনী সুফিয়া ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে লাঠি ভর দিয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এই ঘোষণা দেন।
এব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা জানান, ছাত্রজীবন থেকেই আমি কাঙ্গালিনী সুফিয়ার গান শুনে আসছি। আজ (মঙ্গলবার) তিনি তার মেয়ের স্বামীর জন্য প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন।
এই-ই তাঁর সঙ্গে আমার জীবনে প্রথম দেখা।
এত বড় মাপের একজন কণ্ঠশিল্পীকে ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই। পরে তাঁকে আমার কক্ষে নিয়ে তাঁর সাথে আলাপচারিতায় বুঝতে পারি তিনি অর্থকষ্টে আছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর পরবর্তী জীবনে যাবতীয় চিকিৎসা সেবা সহ সকল ওষুধ বিনামূল্যে হাসপাতাল থেকে প্রদানের ঘোষণা দিই।
এসময় তিনি আরো জানান, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ফান্ড রয়েছে, সেখান থেকে তাকে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে সকল প্রকার ঔষধ ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য তাকে একটি ভিআইপি সেবা কার্ড দেওয়া হবে।
একই সঙ্গে হাসপাতালের যে কোনো অনুষ্ঠানে কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে ডাকা হবে বলেও জানান সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা।
এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদাকে কাঙ্গালিনী সুফিয়া তাঁর সাম্প্রতিক বের হওয়া একটি অ্যালবাম উপহার দেন। পরে, উপস্থিত অন্যান্য ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদ্দেশে তাঁর বিখ্যাত গান ‘পরাণের বান্ধবরে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে’ গেয়ে সকলকে মুগ্ধ করেন