প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ২৯, ২০২৫, ১০:০০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ২৩, ২০২১, ১:৩৯ পি.এম
বানর ও বাঁধ মিলিয়ে ‘বান্দরবান; কথিত সেই বানর এখন বিলুপ্তির পথে

আকাশ মার্মা মংসিং বান্দরবানঃ
বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি কথিত রয়েছে। আছে প্রচলিত রূপকথায়, রয়েছে বান্দরবান শহর নিয়ে বিভিন্ন কথা আর সেই কথা ভিতরে বলা আছে কিভাবে বান্দরবান শহর গড়ে উঠেছিল। সেই বান্দরবানে একসময় অসীমাহীন প্রানী বানর বসবাস করত। আর এই বানরগুলো দলবদ্ধসারি করে খাবার যোগাতে শহরের মুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। আর সেই লবন খেয়ে জঙ্গলে চলে যেত প্রতিদিন। কোন এক সময় লবন খেয়ে আসলে অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে যায় বানর । ফলে নদীর পাড় হওয়ার নিয়ে বিস্মিত ও চিন্তায় পড়ে যায় বানরে দল। সেই বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পানি মাঝখান দিয়ে পাড় হয়। সেই বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখা মিলে বান্দরবান জনপদের মানুষের।
সেই সময় হতে বান্দরবানে কথিত এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে ম্যাঅক ছিঃ ছড়া নামে। অর্থাৎ মারমা ভাষায় ম্যঅক অর্থ বানর আর ছিঃ অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান নাম হিসাবে। বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মারমা ভাষায় বান্দরবানের প্রকৃত নাম চিল ‘রদ ক্যাওচি চিম্রো’।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জেলা ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন সময়ে বান্দরবান ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার অধীনে। তৎকালীন সময়ে বোমাং সার্কেলের অর্ন্তভুক্ত ছিল বান্দরবান। বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এই জেলার আদি নাম ‘বোমাং থং’। ১৯৫১ সালে মহকুমা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয় বান্দরবানে। এটি ছিল রাঙামাটি জেলার প্রশাসনিক ইউনিট। ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন লামা মহকুমার ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক সীমানাসহ সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এই দিকে পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবান জেলায় এখন বিলুপ্ত পথে বানর, এক সময় বানরের অভয়ারণ্য থাকলেও তা এখন বিলুপ্তির পথে। খাবার ও আবাস সংকট আর প্রতিকূল পরিবেশের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে এই প্রাণীর সংখ্যা। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে অবহেলা আর অনাদর চলতে থাকলে এক সময় পাহাড় থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যাবে এই প্রজাতি।
বানর বলতেই আমরা বুঝি বুদ্ধিমান ও সামাজিক প্রাণী। বনে-বাদারে এবং লোকালয়ে- দু’জায়গাতেই তারা বসবাস করতে পারে স্বাচ্ছন্দে। বান্দরবান জেলায় বেশকিছু এলাকায় এক সময় ছিলো বানরের অভয়ারণ্য। কিন্তু দিনে দিনে লোকসংখ্যা বৃদ্ধিতে এই প্রাণীটির দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। আর এতে কমে গেছে বানরের সংখ্যা।
এক সময় বান্দরবানে বানরের নিরাপদ আবাসস্থল বান্দরবান পার্বত্য জেলার অরণ্যে ঘেরা সবুজ পাহাড় হলেও বর্তমানে মানুষের অবাধ বিচরণ, বন উজার করার ফলে পাহাড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বানর।
বান্দরবানের আদিকালে বসবাসরত বাসিন্দা উথোয়াই চিং(৭৬) বলেন, আগে অনেক বানর ছিল। বানরা মাঝে এই শহরে আসত। হাজার হাজার বানর ছিল,এইপার ওপার বান্দর আনাগোনা ছিল বলার বাইরে। আজ সেই বানর দেখা নাই,জঙ্গলে পর্যন্ত নাই আজ। বানর দেখলে শিকার করে নিয়ে যায়। এইভাবে হলে বান্দরবান সেই কথিত কথা আর থাকবে নাহ।
বান্দরবানের মেঘলা কর্মরত সৌমিত তংচঙ্গ্যা জানান, ‘বান্দরবানে এক সময় প্রচুর বানর ছিলো, খাদ্য অভাবে ও সঠিক পরিচালনা না করায় বান্দরবানে বানর এখন বিলুপ্তির পথে, তিনি আরো বলেন, সদরের মেঘলা ও পার্বত্য জেলা পরিষদ ছাড়া আর কোথাও বানরের দেখা নেই।’ সব বিলুপ্তি হয়ে গেছে। বানর পাশাপাশি হরিণ, শেয়াল, ইত্যাদি আর দেখা ও শোনা যায় নাহ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের বন কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে বান্দরবানে কি পরিমান বানর আছে আমাদের কাছে সঠিক তথ্য নেই। কোন ভাবে বন্যপ্রাণী শিকার করা না হয়, শিকার ও পাচার করলে বন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পাহাড়র বেড়ে ওঠা বানরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকারের এগিয়ে আসার অপেক্ষায় স্থানীয়রা।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy