বান্দরবানে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৬৬ সদস্য। দেশটির বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে টিকতে না পেরে সীমান্ত পেরিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ফাঁড়িতে আশ্রয় নেন তারা। এদের মধ্যে ১০ জন গুলিবিদ্ধ। ওপার থেকে আসা গুলিতে আহত হয়েছেন প্রবীর ধর (৫২) নামের তুমব্রু এলাকার এক ব্যক্তি।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টা থেকে শুরু হয়ে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন থেমে থেমে সীমান্তের ওপারে এ ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সীমান্তে চলছে মুহুর্মুহু মর্টার শেল ও গুলিবর্ষণ।
এতে নাইক্ষ্যংছড়ির মিয়ানমার সীমান্ত তুমব্রু ও ঘুমধুম এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তুমব্রু সীমান্তের কাছে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় সরে গেছে।
এদিকে, সংঘর্ষে টিকতে না পেরে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। গুলিবিদ্ধদের বিজিবি ক্যাম্পে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আরো অনেক বিজিপি সদস্য সীমান্ত দিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী পদক্ষেপে এদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত ৩টার দিকে মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। এই ক্যাম্পটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে সে দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি। এ সংঘর্ষের জেরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি মর্টার সেলের গোলা ও গুলি এসে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি। এ সংঘর্ষ রাত গড়িয়ে আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ চলছিল।
প্রচণ্ড সংঘর্ষের কারণে সীমান্ত এলাকার কোনার পাড়া, ভাজা বুনিয়া, আমতল, বাইশফাড়ী এলাকার শতাধিক পরিবার নিরাপদ জায়গায় সরে যায়। দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় এক ব্যক্তি। সকাল ৯টার দিকে আরাকান বাহিনীর প্রচণ্ড হামলায় প্রথমে ৯ জন ও পরে ১৪ জন বিজিপির সদস্য বান্দরবান সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে। বিকেলে সব মিলিয়ে ৭০ জন সদস্য আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। এদের মধ্যে পাঁচজন ছিল গুলিবিদ্ধ।
এদিকে, এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকার পাঁচটি স্কুল ও একটি মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত সড়কে জনসাধারণের অবাধ যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিকেলে মিয়ানমার সীমান্তে হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে হামলার পর উত্তেজনা বেড়ে যায় সীমান্তে। তুমব্রু বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত চৌকিগুলোতে বিজিবি সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল জোরদার করা হয়। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে সে দেশের সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষের জের ধরে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তেও উত্তেজনা চলছে। বর্তমানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত জুড়ে। সীমান্ত জুড়ে চলছে আতঙ্ক। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, ব্যাপক সংঘর্ষের কারণে সীমান্ত এলাকার মানুষ প্রাণভয়ে দিন কাটাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দীল মোহাম্মদ জানান, তিন গ্রামের হাজারো মানুষ গত রাত থেকে বসতবাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ মালামাল নেয়ারও সুযোগ হয়নি।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy