বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে ভারতের একটি আদালত। এর আগে মেঘালয়ের একটি নিম্ন আদালতও একই নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল মেঘালয় সরকার। তবে সেই আপিল খারিজ করে দিয়েছেন শিলংয়ের অ্যাডিশানাল ডেপুটি কমিশনারের আদালত। মি. আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আশা করব এবারে ভারত সরকার আন্তরিক হয়ে দ্রুত আমাকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করবে।“
মেঘালয়ের রাজধানী শিলংএ ২০১৫ সালের ১১মে সকালে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তার ঠিক দু মাস আগে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। উদ্ধার হওয়ার পরে কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মি. আহমেদ, তবে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করার অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করে বিদেশী আইনের ১৪নম্বর ধারায় মামলা করে পুলিশ।
মেঘালয় সরকারের আপিল খারিজ
শিলংয়ের একটি আদালত ২০১৮ সালেই সালাউদ্দিন আহমেদকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু মেঘালয় সরকার সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করায় এতদিন মামলা চলছিল।
“আমরা মামলার চূড়ান্ত রায় এখনও হাতে পাই নি, কিন্তু নির্দেশটা পেয়েছি। সরকার যে আপিল করেছিল, তা খারিজ হয়ে গেছে।এরপরেও প্রক্রিয়াগত কাজে কিছু হয়তো সময় লাগবে সরকারের। কিন্তু আশা করব ভারত সরকার এবার আন্তরিক হয়ে আমাকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে,” বুধবার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
তবে এই বিষয়ে মেঘালয় সরকারের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায় নি এখনও। দেশে ফেরার জন্য তিনি উদগ্রীব বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা।
বাংলাদেশে নির্বাচন আসছে, তিনি কি আবার রাজনীতিতে ফিরে যাবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মি. আহমেদ বলেন, “আগে তো দেশে ফিরি।“
রহস্যজনকভাবে ঢাকায় ‘নিখোঁজ’
আট বছর আগে ঢাকায় তিনি রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। মি. আহমেদ বলছেন “ডিবি পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। দুমাস আটক ছিলাম তাদের কাছেই। তারপরে চোখ বেঁধে জবরদস্তি আমাকে নিয়ে আসা হয় এখানে। বাংলাদেশে তো আইন বহির্ভুত হত্যা, গুম করে রাখা এগুলো তো এই সরকার আসার পরে নিয়মিতই হচ্ছে।“
মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরে গল্ফ কোর্সের কাছে ২০১৫ সালের ১১ মে খুব সকালে কেউ বা কারা মি. আহমেদকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
ওখানে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মী বিবিসি বাংলাকে সেই সময়ে বলেছিলেন যে ওই ব্যক্তি অচেনা জায়গায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করছিলেন যে এটা কোন জায়গা। তারপরে তিনি নিজের পরিচয় দেন যে বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য। নিজের নামও বলেন তিনি।
তারপরে তাকে পুলিশ নিয়ে যায়। বেশকিছুদিন তার চিকিৎসা চলে, অন্যদিকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে সালাউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
তারপর জামিন পেয়ে শিলং শহরেই একটি বাড়িতে থাকেন সালাউদ্দিন আহমেদ। মাঝে আদালতের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসা করাতে অবশ্য মেঘালয়ের বাইরেও গেছেন তিনি একাধিকবার।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে কী করে আনা হল?
এখন তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ এলেও যে বিষয়টা এত বছর পরেও রহস্যাবৃতই থেকে গেল, তা হল কারা ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত পার করে মি. আহমেদকে শিলংয়ে নিয়ে এসেছিল।
কোনও না কোনও জায়গা দিয়ে তো তাকে সীমান্ত পার করাতে হয়েছে। সেটা যদি শিলং থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরের ডাউকি হয়, তাহলে বিএসএফ কেন দেখতে পেল না? আবার সীমান্ত থেকে গাড়িতে চাপিয়ে একজনকে নিয়ে আসা হল, এতটা রাস্তাতেও কোথাও কোনও নজরদারি ছিল না?
আবার শিলংয়েই বা কেন নিয়ে আসা হয়েছিল, সেই প্রশ্নেরও জবাব কোনও দিনই পাওয়া যায় নি।