নিজস্ব প্রতিবেদক
২ বছরের ব্যবধানে গাজীপুরে রাস্তায় বসে পিঠা বিক্রেতা
লাভলী বেগম এখন কোটি টাকার মালিক। ৬তলা একটি
ভবনসহ একাধিক বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির
মালিকানা তার। চলেন বিলাশবহুল গাড়িতে। তার বাড়িতে
এখন বিট পুলিশিংয়ের কার্যালয়। কমিউনিটি পুলিশের
যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে এলাকায় বিচার-আচারও করে
বেড়াচ্ছেন লাভলী। তার ওঠে আসাটা সিনেমার গল্পকেও হার
মানায়। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা লাভলী ৬ বছর কাজ
করেছেন স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় (এ্যাডভান্স
গার্মেন্টস)। চাকরি চলে যাওয়ার পর জীবিকার তাগিদে
রাস্তায় বসে পিঠা বিক্রি করেন এ নারী। স্থানীয়রা জানান,
পিঠা বিক্রির সময় পরিচয় হয় ব্যবসায়ী চান মিয়ার
সঙ্গে। গড়ে ওঠে সখ্যতা। ঠিকাদারি ব্যবসায়ী চান মিয়া
লাভলীকে তার বাসায় থাকার সুযোগ করে দেন। মাসিক ৫
হাজার টাকা বেতনে তত্বাবধায়কের চাকরি করে সংসার
চলছিল অসহায় মামুন-লাভলী দম্পতির। চান মিয়া বধুয়া
বিউটি পার্লার নামে আয়ের বিকল্প উৎস গড়ে দেন
লাভলীকে। পার্লারের অন্তরালে সুন্দরী ও উঠতি বয়সী নারীদের
এনে দেহ ব্যবসা চালাতেন বলেও লাভলীর বিরুদ্ধে
জনশ্রæতি রয়েছে। জানা যায় একসময় গাজীপুর বারের
সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের বাসায় গৃহকর্মী ছিলেন লাভলী।
ভ্যানচালক মামুন মিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক করে বিয়ের
পিড়িতে বসেন লাভলী। ২ কন্যা ও আর ১ ছেলে নিয়ে
অভাবেই দিন কাটছিল মামুন-লাভলী দম্পতির।
২০১৮ সালে আকস্মিকভাবে মৃত্যু হয় চান মিয়ার। মৃত্যু
নিয়ে তৈরি হয় নানা রহস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
স্থানীয়রা জানান লাভলী ঠান্ডা মাথায় চান মিয়াকে হত্যা
করে এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেয়। চান
মিয়ার সঙ্গে লাভলীর অবৈধ সম্পর্কের গুঞ্জন থাকায় মৃত্যুর
পর চান মিয়ার পরিবার বিষয়টি এড়িয়ে যান। গাজীপুর
সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর
আব্দুল মতিন ওরফে মতি কমিশনারের স্ত্রী ইসমিতা জাহান
পপি বলেন, চান মিয়া একসময় তার স্বামী মতি
কমিশনারের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। যে কারণে চান
মিয়ার মৃত্যুর পর লাভলী বেগম বিভিন্ন দপ্তরে আটকে থাকা
বিল উত্তোলনে তার সহায়তা চান। আর তখন মানবিক
কারণে সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন অফিসে বিল
উত্তোলনে লাভলীকে সহায়তা করেন তিনি। কিন্তু এর
কিছুদিনের মধ্যেই একাধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে
যান লাভলী। হঠাৎ আলাদিনের চেরাম পাওয়ার রহস্য নিয়ে
স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয় নানা কৌতুহল। সূত্র জানায়
চান মিয়া পড়ালেখা জানতেন না। আর অষ্টম শ্রেণি পাস
লাভলী চান মিয়ার থেকে সই করা বø্যাঙ্ক চেক রেখে দিতেন
ব্যবসায়িক প্রয়োজনের কথা বলে। পরে সেইসব চেকে
ইচ্ছেমত টাকার অংক বসিয়ে আত্মসাৎ করেছেন কোটি
টাকা। পপি জানান তারাও লাভলীর চেক জালিয়াতির শিকার
হয়েছেন। পড়ালেখা না জানা তার স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা
করে চেকের অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
করেছেন পপি। তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে প্রথমে ৩
লাখ ও পরে ২ লাখ টাকা নিয়েছেন। অথচ ২ লাখ টাকার চেক
ফেরত দেননি লাভলী। চেক হারিয়ে গেছে দাবি করে
প্রশাসনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে অঙ্গীকারনামার
বিনিময়ে টাকা দিতে মতি কমিশনারকে বাধ্য করা
হয়েছে বলে অভিযোগ পপির। মামুন-লাভলী দম্পতি
বর্তমানে গাজীপুরের লক্ষèীপুরা ইন্টারমেক্র গেইট
সংলগ্ন মতি কমিশনারের অফিসের পাশে আড়াই কাঠার
প্লটে ৬ তলা বাড়ির মালিক। তার এ বাড়িতেই এখন স্থানীয়
বিট পুলিশ কার্যালয়। এছাড়া ৬তলা বাড়ির সঙ্গে দেড়
কাঠার সেমি বিল্ডিং বাড়ি রয়েছে। নগরীর ২৬ নং
ওয়ার্ডে সাবেক কমিশনার করিমের বাড়ির পাশে বটতলায়
আড়াই কাঠার সেমিপাকা বাড়ি। শিববাড়ি মোড়
নাদিয়া ফার্নিচারের পাশে ১৪ শতাংশ জমিতে তার পাকা
বাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে। লক্ষèীপুরায় মতি
কমিশনারের ৫তলা বাড়ির সামনে ৫ কাঠা জমির মালিকানা
দাবি করে লাভলী বেগম। এতে জমির মালিক সিদ্দিক ও তার
স্ত্রী ফাতেমা বেগমের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা হাজী আব্দুল মান্নান জানান, দলিল
টেম্পারিংয়ের মামলায় তাকে জেল খাটিয়েছেন লাভলী।
কিশোরগঞ্জের মেয়ে লাভলী নিজেকে রাষ্ট্রপতি,ওখানকার
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার
আত্মীয় পরিচয় দিয়ে লোকজনকে ভয় দেখান বলেও
অভিযোগ মান্নানের। আরেক ভুক্তভোগী রুমি জানান
লাভলীর পালক ছেলে জুয়েল স্থানীয় মাদক কারবারি। মতি
কমিশনারের পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক থাকায় তার
ছেলেকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করান লাভলী। আরেক
ভুক্তভোগী খোকন জানান তার জমি নিয়ে বিরোধকে
কেন্দ্র করে নানাভাবে হয়রানি করেন লাভলী বেগম।
জনপ্রতিনিধি নাহয়েও কিভাবে তার জমির ব্যাপারে লাভলী
হস্তক্ষেপ করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে খোকন বলেন,
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সহ ভিভিন্ন দপ্তরে তার লোক
আছে। তাই সব ব্যাপারে তার দেখার অধিকার রয়েছে বলে
তার কাছে দাবি করে লাভলী। এসব অভিযোগের বিষয়ে লাভলী
বেগমের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে তিনি সরাসরি সব
অভিযোগ অস্বীকার করেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে সংবাদ
প্রকাশ করা হলে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।