নিরেন দাস,জয়পুরহাট
Facebook Twitter share
একজন পুলিশ কর্মকর্তা (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান। পেশাগত কাজের বাইরেও মানুষের জন্য যে অনেক কিছু করা যায় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। বেদে, হিজড়াসহ সমাজের বঞ্চিত দরিদ্রদের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। শিক্ষার উন্নয়নেও তিনি অশেষ অবদান রেখেছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি যা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন, তা দেখে যে কোনো শুভবোধসম্পন্ন মানুষ মুগ্ধ হতে বাধ্য। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে কেবল পেশাগত দায়িত্বই শেষ নয়, মানবিক চিন্তা থাকলে সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায় মানুষের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব।
Surjodoy.com
তিনি একজন ক্রীড়া সংগঠকও। বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সেক্রেটারি এবং এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহসভাপতি এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি নিজেকে পেশাগত কর্মের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সাধারণের সেবায়। সমাজ পরিবর্তনে, মানুষের কল্যাণে, মানবতার স্বার্থে পুলিশের কার্যকর ভূমিকায় অবিরাম ব্যতিক্রমী অবদান রেখে চলছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
The Daily surjodoy
পরিশ্রমী পুলিশ কর্মকর্তা (ডিআইজি) হাবিবুর রহমানের একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর, যা এক ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দায়বদ্ধতা থেকেই তার এই মহান উদ্যোগ। মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের বেদে ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর অনেকের সামাজিক অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ও মূলধারায় উঠিয়ে আনতে তিনি অবাক করার মতো কাজ করছেন।
The Daily surjodoy
২০২০ সালের শুরুতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় বহু পুরোনো যৌনপল্লিতে প্রথমবারের মতো একজন যৌনকর্মীর পুরোপুরি ইসলামী প্রথা মেনে জানাজা পড়িয়ে দাফন করা হয়। পরে চেহলামেরও আয়োজন করা হয়। এসব উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন মানবিক পুলিশ হিসেবে সুনাম পাওয়া ডিআইজি হাবিবুর রহমান। এখন নতুনভাবে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লির শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেছেন তিনি। যৌনপল্লির শত শত শিশুকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে তার হাতে গড়া ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন। করোনা দুর্যোগে অনেক পুলিশ সদস্যকে ডিআইজি হাবিবুর রহমান নিজে মুঠোফোনে কল দিয়েছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন, মনোবল বাড়ানোর জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে রাত-দিন কাজ করছেন, পাঠিয়েছেন নানা উপহার সামগ্রী।
The Daily surjodoy
তিনি ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর মাদারীপুর জেলা ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক’-এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। এ সময় মাদারীপুর জেলা ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক’-এ পুলিশ সদস্যরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন এবং আজীবন রক্তদানের শপথ করেন।
এ ছাড়া পুলিশ লাইন্স প্রধান ফটক, ড্রিলসেডের পুনঃসংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন, পুলিশ লাইন্স সালামি মঞ্চ এবং নবনির্মিত পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রধান ফটকের শুভ উদ্বোধনসহ মাদারীপুর জেলা পুলিশের চলমান বৃক্ষরোপণ অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশ লাইন্স মাদারীপুরে একটি আম্রপালি বৃক্ষরোপণ, মাদারীপুর জেলা পুলিশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুটি পিকআপ এবং একটি মাইক্রোবাস হস্তান্তর, মাদারীপুরে বেদেপল্লিতে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।
The Daily surjodoy
এ রকম কাজ তিনি অনেক জায়গায়ই করেছেন। পুলিশি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ করা ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তা ও ভূমিকা তাকে দিয়েছে বিশেষ খ্যাতি।
তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় গোপালগঞ্জের চন্দ্রদীঘলিয়া মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি তার প্রয়াত মা-বাবার নামে বালিকাদের জন্য একটি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
The Daily surjodoy
এরপর তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের পুলিশ ক্যাডারের জন্য মনোনীত হন। ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি বেশ কয়েকটি স্থানে স্কুল, কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার, গাড়ি চালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বুটিক হাউসসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ও বাল্যবিবাহ রোধে ভূমিকা পালন করেছেন।
The Daily surjodoy
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদান ও ঢাকায় তাদের প্রথম প্রতিরোধ বিষয়ক ঘটনা নিয়ে তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি বই লিখেছেন। সেবা, সহযোগিতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’ লাভ করেন। এ ছাড়া ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)’সহ পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭ উপলক্ষে ২০১৬ সালে প্রশংসনীয় ও ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে আইজিপি’স ব্যাজ প্রদান করা হয়।
The Daily surjodoy
তিনি মোট তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পেয়েছেন এবং দু’বার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) সেবা পেয়েছেন। তিনি সৌদি আরবের বাদশাহর রয়াল গেস্ট হিসেবে কয়েক বছর আগে পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন। পুলিশ সম্পর্কে মানুষের যে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তিনি তা পাল্টে দিয়েছেন। পুলিশ কতটা মানবিক, কতটা সহায়ক, কতটা প্রয়োজন, কতটা আন্তরিক এসব দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।
The Daily surjodoy
বাংলাদেশ শত শত বড় কর্মকর্তা আছেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর আর কোনো কাজে তাদের দেখা যায় না। কিন্তু হাবিবুর রহমান পেশাগত দায়িত্ব পালনের শুরুতেই দেশের সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছেন, তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন, এখনও বিরামহীন শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ছড়াচ্ছেন মানবিকতার আলো।