লায়ন সোবহান হাওলাদারঃ
বর্তমান তিলোত্তমা মহানগরী ঢাকার আদি অংশ হচ্ছে পুরান ঢাকা। বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে শত শত বছর পূর্বে যে নগরী টি গড়ে উঠেছিলো তা আজকের পুরান ঢাকা।
মোহম্মদপুর - শঙ্কর- ধানমন্ডি - হাজারীবাগ - চকবাজার হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতাল পর্যন্ত এলাকা টি মুঘল আমলে বিস্তৃত হয়েছিল। বাবু বাজার ব্রীজ -সদরঘাট- আহসান মঞ্জিল- শ্যামবাজার - গেন্ডারিয়া - মিল ব্যারাক - ফরিদাবাদ - পোস্তগোলা এই অঞ্চলে রয়েছে সুলতানী স্থাপনা। মুঘল ও ব্রিটিশ শাসন আমলের বেশ কিছু স্থাপনা কালের সাক্ষী হয়ে এখনও বিদ্যমান।
বর্তমানে ঢাকা দুটি ভাগে বিভক্ত :
১.দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন
২. উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
পুরান ঢাকার অবস্থান দক্ষিণে।
মূলত লালবাগ,হাজারীবাগ, চকবাজার,আজিমপুর, কোতওয়ালী, বংশাল, সূত্রাপুর,ওয়ারী,গেন্ডারিয়া, পোস্তগোলা এই অঞ্চল গুলো নিয়ে আদি ঢাকা।
পুরান ঢাকা র উপ শহর হিসেবে রয়েছে মোহম্মদপুর, শঙ্কর, ধানমন্ডি, রমনা, শাহবাগ, মতিঝিল ইত্যাদি এলাকা।
সুলতানী আমলের নিদর্শন হিসেবে টিকে রয়েছে রয়েছে বিনত বিবি মসজিদ,
যা ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ।
এছাড়াও রয়েছে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রূপলাল হাউজ, রোজ গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, তারা মসজিদ, আলিয়া মাদ্রাসা,ভিক্টোরিয়া পার্ক, লালকুঠি, নুরজাহান হাউজ, বিবি রওজা নিমতলী দেউরী,হোসেনী দালান, আহসান মঞ্জিল, জয়কালী মন্দির, খান মোহম্মদ মির্ধা মসজিদ, সাত মসজিদ, ধানমন্ডি ঈদগাহ, বর্ধমান হাউজ, কার্জন হল, আর্মেনীয়াম চার্চ, ঢাকা গেট, হাজী বেগ মসজিদ, করতলব খান মসজিদ, ব্রাহ্ম সমাজ, গুরু দুয়ারা,লালবাগ কেল্লা, বড় কাটরা, ছোট কাটরা, বিবি চম্পা সমাধী, খাজা শাহবাজ মসজিদ, রমনা কালী মন্দির সহ অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনা।
পুরান ঢাকার একটি আলাদা কালচার রয়েছে। সুব্বাসি ও ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষা রয়েছে যাতে আরবী- ফার্সি- হিন্দু- উর্দু র মিশ্রণ রয়েছে।
পুরান ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন হচ্ছে রিকশা ও টমটম। বর্তমান যুগে সকল আধুনিক যানবাহন ই চলাচল করে। নদী পথের বিপরীতে সড়ক পথ হওয়ায় বেড়েছে ভিন্নতা। টাউন সার্ভিস হিসেবে রয়েছে টেম্পু- লেগুনা বা মুড়ির টিন।
পুরান ঢাকায় সব ধর্মের মানুষ ই সম্প্রতির সহিত বসবাস করে ঈদ,পূজা ছাড়াও নববর্ষ, চৈত্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি, সাকরাইন, মহরমের তাজিয়া মিছিল বের হয় ও ধর্মীয় আচার রীতি গুলো সুন্দর ভাবে পালিত হয়।
পুরান ঢাকার অধিকাংশ মানুষ ই তাদের পারিবারিক ব্যবসা বানিজ্যের সাথে যুক্ত থাকে। বর্তমান সময়ে একটা বড় অংশ বিদেশে অবস্থান করে। পুরান ঢাকায় নানান বৈচিত্র্যময় পেশার মানুষজন বসবাস করে থাকে।
পুরান ঢাকার মূল ব্যবসা কেন্দ্র গুলো হচ্ছে চকবাজার,মৌলভীবাজার, বাবু বাজার, বাংলাবাজার, শ্যামবাজার, কাপ্তান বাজার, বংশাল, নবাবপুর, মালিটোলা ইত্যাদি অঞ্চল।
পুরান ঢাকার শাসন ব্যবস্থা এক সময় ছিল পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কেন্দ্রীক। এক সময় ২২ জন সর্দার পঞ্চায়েত প্রথা য় সব কিছু নিয়ন্ত্রন করলেও বর্তমানে প্রথাটি পুরোপুরিভাবে সক্রিয় নেই। তবে পঞ্চায়েত ঘর ও এই প্রথাটি বিলুপ্ত হয় নাই।
ঢাকাইয়ারা বেশ ভোজন রসিক এখানে বিচিত্র সব খাবারের সমারোহ রয়েছে। অনেক প্রাচীন দোকান- হোটেল ও রয়েছে। অঞ্চল ভেদে রয়েছে বিশেষ জনপ্রিয়তা। বিরিয়ানী, বাকরখানী, কাবাব, লাচ্চি, ফালুদা,বোরহানী, হালিম, নেহারী, কাটলেট, ছানা, পনির, মাঠা, টিকিয়া, নান, গ্রীল, কেক, বেকারী আইটেম সহ হরেক রকম বাহারী খাবার পুরান ঢাকায় জনপ্রিয়।
ফলের ভেতর মাখনা ও ফুলের ভেতর বেলী ঢাকাইয়াদের বেশ পছন্দ। বাদামতলী পুরান ঢাকার একটি বৃহৎ ফলের বাজার ফুলের বাজারটি হচ্ছে শাহবাগে।
পুরান ঢাকা শিল্প - সাহিত্যে বেশ সমৃদ্ধ অঞ্চল।
রয়েছে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা- দীক্ষায় ও রয়েছে বহু ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট স্কুল, সেন্ট গ্রেগরী, ইসলামিয়া ও সেন্ট ফ্রান্সিস হাই স্কুল, পোগোজ স্কুল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মুসলিম হাই স্কুল, আলিয়া মাদ্রাসা, কবি নজরুল, ঢাকা, ইডেন, বদরুন্নেছা,সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মিটফোর্ড, ঢামেক, আরমানিটোলা স্কুল সহ বেশ কিছু সুনাম ধন্য প্রতিষ্ঠান।
শিল্প সংস্কৃতি তে বুলবুল ললিত কলা একাডেমি, চারুকলা,শিশু একাডেমি,শিল্পকলা, কঁচিকাঁচার মেলা সহ নানান প্রতিষ্ঠান।
ঔষধের জন্য শক্তি ঔষধালয় , সাধানা ঔষধালয় এর সুনাম আছে। হাজারীবাগ চামড়ায়, নিমতলী ক্যামিক্যাল, হাটখোলা ও মিটফোর্ড রোড মেডিকেল সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত।
একসময় পাড়ায় মহল্লায় ক্লাব ও সিনেমা হল থাকলে ও বর্তমানে এসব বিলুপ্তপ্রায়।
বুড়িগঙ্গা র তীরে গড়ে উঠা এই নগরীতে ব্যবসা- বাণিজ্যের উদ্দেশে ইংরেজ,ফরাসী,ওলন্দাজ, আফগান সহ নানান জাতি - গোষ্ঠী ই এসেছেন বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন যুগে।
সুলতানী - মুঘল - ব্রিটিশ শাসন আমলে পুরান ঢাকা পরিকল্পিত আবাস ও কম জনসংখ্যার ছিল কিন্তু পাকিস্তান ও বর্তমান আমলে দিনকে দিন দূষিত,দখল, ও অপরিকল্পিত ঘিঞ্জি পরিবেশে চলে এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি র সাথে সাথে অনেক কিছু ই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। গত ২০ বছরে ই অনেক প্রাচীন স্থাপনা বিলুপ্ত হয়েছে। দখল - দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে শত বছরের নানান ঐতিহ্য। বর্তমানে পুরাণ ঢাকায় ব্যবসা বানিজ্যে জড়িত লক্ষ লক্ষ লোক থাকে কেরাণীগঞ্জে। কৃষ্টি কালচারের রয়েছে ব্যাপক মিল শুধু বুড়িগঙ্গা মাঝখানে। প্রতিদিন লক্ষাধিক লোক নৌকাযোগে নদী পার হয়ে আসতে হয় ঢাকায়। এরমধ্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম নয় যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে সদরঘাট বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং বেশ আধুনিকতার ছাপ লেগেছে যদি পদ্মা সেতু হওয়ার পরে কমছে লঞ্চের সংখ্যা। কেরাণীগঞ্জের সাথে সহজ যোগাযোগের জন্য প্রয়োজন টানেল ও মেট্রোরেল।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy