লন্ডন থেকে জমির উদ্দিন সুমন :
ব্রিটেনে প্রায় প্রতিটি বাঙালি পরিবার এখন স্বজন হারানোর শোক নিয়ে বেঁচে আছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটি মানুষের জীবন বদলে দেয় করোনা ভাইরাস। করোনায় তছনছ হয়ে গেছে অনেক পরিবার। অনেকে হারিয়েছেন বাবা, মা, ভাই, বোন।পরিবারের প্রিয় মানুষগুলো কে হারিয়ে শত শত পরিবার নীরবে কাদঁছেন।
ব্রিটেনে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। মুসলিম গোরস্থানগুলোতে মরদেহ সমাহিত করতে রীতিমত সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না। গোরস্থানগুলোতে মেশিনে মাটি কেটে একের পর এক মরদেহ দাফন করা হচ্ছে। মর্গগুলোতে লাশের সারি। বেঁচে থাকা মানুষের চোখে উদ্বেগ। সন্তান নিয়ে উদ্বেগ বাবা-মায়ের। আবার বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে সন্তানদেরও উদ্বেগ চরমে।কিন্তু স্বজন হারাবার বেদনা প্রবাসী বাংলাদেশিরা আর নিতে পারছেন না।
ব্রিটেনে এই দফার করোনা সংক্রমণের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। মারা গেছেন কমিউনিটির পরিচিত মানুষগুলো।গত কয়েক মাসে করোনায় পরপারে চলে গেছেন বাংলা টাউনের বিলাতের প্রতিষ্ঠিত অনেক মানুষ ।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রবাসী সংগঠক আবুল লেইস মিয়া,সর্ব ইউরোপিয়ান আ.লীগের উপদেষ্টা এম এ গণি প্রবাসী সংগঠক মজুমদার আলী,সাবেক ভিপি জনাব আব্দুস সাত্তার,বার্কিংয়ের বাসিন্দা বিশিষ্ট সংস্কতিকর্মী মো. আবদুল হামিদ,জগন্নাথপুর বৃটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান এম এ আহাদ,ক্যামডেনের বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা আব্দুল কালাম,সান্ডারল্যান্ডের সৈয়দ জামাল মিয়া,বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের সাবেক সভাপতি রউফুল ইসলাম,ইস্ট লন্ডন ব্রিকলেনের হাজি মোহাম্মদ আব্দুর রহমান,হান্সলো এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক স্বামী-স্ত্রী দুজনই মুহাম্মদ দায়ীম উল্লাহ ও স্ত্রী রিজিয়া উল্লাহ,বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা আব্দুস সালাম, ইস্ট লন্ডনের আপন দুই ভাই শেখ ময়নুর রহমান বাদশা মিয়া, শেখ একবালুর রহমান বাহার মিয়া, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবী আলহাজ্ব খসরু চৌধুরী,এ্যারোমা আইসক্রিমের প্রতিষ্ঠাতা কাজী খালেদ,আবুল কাসেম খালিসদার সোয়েব,আব্দুল গাফফার নছির মিয়া,আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা মজুদার আলীর মৃত্যু,ব্রিটিশ বাংলাদেশী ডাক্তার আব্দুল মামুদ চৌধুরী বার্মিংহাম হেল্পিং হ্যান্ডস ইউকে এর শফিকুর রহমান ইছহাক,ওল্ডহ্যামে আলকাছ আলী ওরফে গয়াছ মিয়া,আব্দুল হান্নান,সমাজকর্মী তছির আলী, খলিলুর রহমান, সোনালী অতীতের ফুটবলার আখলিছ,বদরুল আমিন, সমাজসেবী মজুমদার আলী, সিরাজ উদ্দিন, শোয়েব খালিছাদার, ডার্বির সমাজসেবী হারুন মিয়া, কিলবার্নের হাজী আব্দুল কাদির, কবি দেওয়ান হাবিব চৌধুরী, রাজনীতিবীদ আবু লেইস মিয়া ও তার আপন ভাই হাজী আকদ্দছ আলী, আবুল বশর,আবু শাহাদাত কালাই, ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল বাতিন, কাজী আবু খালেদ, সোয়ানসীর দুই ভাই কবির উদ্দিন ও বদরুল ইসলাম,কবির মিয়া, নিউহ্যামের আলম নাম না জানা আরো অনেকে।করোনায় এখন পর্যন্ত ডাক্তার, নার্স, আইনজীবি, টেক্সি ড্রাইভার, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি সহ ৫ শতাধিক ব্রিটিশ বাংলাদেশীকে হারিয়েছে কমিউনিটি।
ইউরোপের সর্ববৃহৎ ইস্ট লন্ডন মসজিদ-এর ডাইরেক্টর দেলওয়ার খান বলেন-বর্তমানে আমরা প্রতিদিন ৩/৪ জন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী লাশের জানাজা পড়াচ্ছি। আগে অনেক বেশি ছিলো। প্রতি জানাজায় ৩০ জন অংশগ্রহণ করতে পারেন। ব্রিকলেইন মুসলিম ফিউনারেল সার্ভিসের (লাশ দাফন-কাফনকারী) ডাইরেক্টর পারভেজ ক্রোরেশি বলেন, গত বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও এই বছরের জানুয়ারী এই তিন মাসে ২০০ শত লাশ দাফন-কাফন করেছি। এর মধ্যে ৯৯ পার্সেন্ট করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে। তবে মোট হিসাব দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ আমরা একা দাফন-কাফন করি না। আরো তিনটি ফিউনারেল সার্ভিস রয়েছে। আমরা আগে প্রতিদিন ৫/৬ জন করে দাফন-কাফন করতাম, এখন লকডাউন জারি রয়েছে এবং মানুষও সচেতন হয়েছে, পাশাপাশি ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হওয়ায় একটু কমে গেছে।
তিনি বলেন, বেশী দাফন করা হয় চিংওয়েলের গার্ডেন অফ পিসে এবং সাউথ লন্ডনের সিডকাপের ইটারনেল গার্ডেন গোরস্থানে। ইটারনেল হলো টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নিজস্ব জায়গা। এখানে কাউন্সিলের বাসিন্দারা কম খরচে দাফন করতে পারেন।
করোনাভাইরাস মহামারিতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন ব্রিটেনের আট লক্ষাধিক বাংলাদেশি। ব্রিটেনের ব্ল্যাকক অ্যান্ড মাইনোরিটি এথনিক (বিএমই) কমিউনিটিগুলোর মধ্যে করোনায় বাংলাদেশিদের মৃত্যুরহার সর্বোচ্চ।