ইসমাইল হোসেন, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আজ ২৫ জুন -২০২০ তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ময়মনসিংহের ভালুকা ১১ আসনের এমপি জনাব আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনুর মাতা,শহীদ জননী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুন নেছা আফসার আজ না ফেরার দেশে চলে গেলো ভালুকা বাসী কে ফেলে। মৃত্যুকালে মরহুমার বয়স (৯৮) বছর। ওনার ছেলে, মেয়ে,নাতী,নাতনী এবং আত্মীয়-স্বজন সহ বহু গুণগ্রাহী ও শুভাকাঙ্খী রেখে গেছেন। বাদ আসর ভালুকা ডিগ্রি কলেজ মাঠে মরহুমার জানাযা নামাজ শেষ উপজেলা সদরের মেজর ভিটায় পারিবারিক গোরস্তান- মুক্তিযুদ্ধের ১১ সাব সেক্টর কমান্ডার কিংবদন্তি স্বামী মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদের কবরের পাশেই দাফন করেন। মরহুমার মৃত্যুতে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী ও অন্যান্য আসনের এমপি মহোদয় গন ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সহ যোগী সংগঠনের বিভিন্ন সিনিয়র নেতা সহ সরকারী কর্মকর্তা- ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক খোকা, সাধারণ সম্পাদক এড. মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও জেলা উপজেলা পযায়ের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সহ সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতারা সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। বয়সের ভারে খায়রুন নেছা আফসার ১০ জুন অসুস্থ হন। অবস্থা ভালুকা এবং ঢাকার বাসায় চিকিৎসা করার পর ১৫ জুন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ইতিমধ্যে ১৪ জুন ওনার করোনা পজেটিভ ধর পড়লে–উন্নত চিকিৎসার পর ২৩ জুন পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট হয় । উন্নত চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ৪০ ঘণ্টার মাথায় মারা গেলেন সংবাদে রয়েছে। খায়রুন নেছা আফসার সাহেবের দম্পতির সুযোগ্য সন্তান বর্তমান এমপি আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু করোনা যুদ্ধের অন্যতম অগ্রনায়ক। বাংলাদেশে করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরেন।১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে ভালুকাবাসীর কথা চিন্তা করে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকার পরও এলাকায় যান। মানবিকতার প্রশ্নে তিনি মানুষের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন। যেক’জন এমপি ঝুঁকি নিয়ে এলাকায় অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা এবং অসহায় পরিবারের মধ্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। ঝুঁকির কারণে ভালুকাবাসী তাকে করোনা যুদ্ধের অগ্রনায়ক বলছেন। দিনব্যাপী বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে তদারকি করেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ বিতরণ এবং নিজ উদ্যোগের খাদ্যপণ্য সহযোগীতা কার্যক্রম। মহিয়ষী নারী ও রত্নগর্ভা মরহুমা খায়রুন নেছা বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ অনুসারী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কিংবদন্তি মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ-এর স্ত্রী। মেজর আফসার মুক্তিযুদ্ধের অনিয়মিত ৩ টি বাহিনীর অন্যতম ‘আফসার বাহিনী’র প্রধান ছিলেন। পরে তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে এপ্রিলের প্রথম দিকে নিজ উদ্যোগে ‘আফসার বাহিনী’ গঠন করেন। ভারত সরকারের কোনো প্রকার সহযোগিতা ছাড়াই ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়ার ঢালুয়া থেকে ৫ সহস্রাধিক সদস্যের সমন্বয়ে ৭৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যান। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভারত সরকার এ বাহিনীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ ৮ মাসের টানা যুদ্ধে মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ-এর ছেলে নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ও শ্যালক মতিউর রহমান সহ ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছে আফসার বাহিনীর দেড় শতাধিক উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ। এর মধ্যে ২৫ জুন ভালুকা উপজেলা ভাওয়ালিয়া বাজু শিমুলীয়া নদীর পাড়ের সম্মুখ যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত। দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টার যুদ্ধে ১৯৫ জন পাক সেনা নিহত এবং আব্দুল মান্নান নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৫ জুন শুক্রবার সকালে ভালুকা আক্রমণ ও ক্যাম্প করার জন্য দেড় হাজার পাক সেনা গফরগাঁও থেকে ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে শিমুলীয়া ঘাট দিয়ে ভালুকা প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ খবর পেয়ে মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। সর্ব প্রথম তিনি এলএমজি দিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। দেশ মাতৃকার টান, স্বামী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতা করার জন্য আফসার উদ্দিন আহম্মেদ-এর স্ত্রী খায়রুন নেছা আফসারও অংশ নিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। মাঝে মধ্যেই স্মৃতিচারণ করতেন একাত্তরের বিভিষিকা ময় দিন গুলোর। একই পরিবারে নারী সহ ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা থাকার বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত। মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত