আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ভিপি নূরকে অব্যাহতির সুপারিশ, হতাশ সেই নারী শিক্ষার্থী

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে দুশ্চরিত্রাহীন বলে মন্তব্যের সত্যতার প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একই সঙ্গে এ মামলা থেকে নুরকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। রোববার পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক ফরিদা পারভীন লিয়া আদালতে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ বিষয়ে আগামী ১৩ অক্টোবর শুনানি হবে। তবে এ তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে হতাশ হয়েছেন মামলার বাদিনী সেই নারী শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে মামলার বাদিনী বলেন, ‘নুর ফেসবুক লাইভে এসে আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিল, এটা দেশের মানুষ দেখেছে। যা নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একজন মেয়ে হয়েও আদালতে মামলাটি করেছিলাম। তদন্তের জন্য সব ডকুমেন্টস দিয়েছিলাম। অথচ পিবিআই যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে, সেটা দেখে আমি সম্পূর্ণরূপে হতাশ। এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।’

প্রতিবেদনে দালিলিক সাক্ষ্যের পর্যালোচনায় বলা হয়, বাদিনীকে উদ্দেশ্য করে বিবাদী কর্তৃক প্রকাশিত ‘দুশ্চরিত্রাহীন’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ সংগ্রহের জন্য বাংলা একাডেমির পরিচালক বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে বাংলা একাডেমি দুশ্চরিত্রাহীন শব্দটি সম্পর্কে মতামত প্রদান করে। সেখানে বলা হয়, বাংলা অভিধানে দুশ্চরিত্রাহীন বলে শব্দের ভুক্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে এ রকম কোন শব্দ বাংলা ভাষায় নেই। দুশ্চরিত্রাহীন শব্দটির অর্থ যদি করা হয়, তাহলে এর অর্থ হয় উন্নত চরিত্রের অধিকারী বা সদাচারী বা সৎ স্বভাব বিশিষ্ট।

প্রতিবেদনের মতামতে বলা হয়, সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ফেসবুক আইডিটি ডিজিটাল ফরেনসিক কর্তৃক পরীক্ষার মাধ্যমে মতামত গ্রহণ করে পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিবাদী নুরুল হক ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর বাদিনীকে উদ্দেশ্য করে ‘ছিঃ আমরা ধিক্কার জানাই এতো নাটক যে করছে সে দুঃশ্চরিত্রাহীন, ধর্ষণের নাটক করছে, স্বেচ্ছায় একটি ছেলের সাথে বিছানায় গিয়ে’ নামক বক্তব্যটি প্রচার করেছে এমন কোনো বক্তব্য তার ফেসবুকে পাওয়া যায়নি। এজন্য বিবাদী নুরুল হক নুরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫ (১ )ক , ২৯(১) ৩১(২) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত গ্রহণের জন্য আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অপটিক্যাল ডিস্কে থাকা কিছু শব্দ আপাত দৃষ্টিতে আপত্তিকর ও মানহানিকর মনে হলেও পুরো বক্তব্যটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনাকালে কাউকে সরাসরি কোন অপমান, অপদস্ত করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়নি। এছাড়া সিডিটির সঠিকতা নির্ধারণ করা যায়নি।

এছাড়া ফেসবুক আইডিটি ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব কর্তৃক পরীক্ষার মাধ্যমে মতামত গ্রহণ করে পর্যালোচনায় দেখা যায়, নুরুল হক নুর বাদিনীকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, এমন কোন বক্তব্য তার ফেসবুক আইডিতে পাওয়া যায়নি। বাদিনীর আর্জিতে বর্ণিত অভিযোগ যা নুরুল হক নুরের ফেসবুক আইডি থেকে প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করেন। তা ফরেনসিক পরীক্ষায় এবং অপটিক্যাল ডিস্ক প্রামাণ্য কি-না তা নির্ধারণ করে না পাওয়ায় মামলার অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়নি।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে দুশ্চরিত্রাহীন বলে মন্তব্যের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে।

এরপর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সাম জগলুল হোসেন মামলাটির অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। এর আগে গত ১১ অক্টোবর শাহবাগ থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ না করে টাইব্যুনালে মামলা করার পরামর্শ প্রদান করেন।