আবুল হাশেম, রাজশাহী
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় মর্মান্তিক ব্জ্রপাতে নিহত মেধাবী কলেজ ছাত্র নাবিল খান এর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার (২৯ এপ্রিল)।শাহজাদপুরের আলোচিত, হৃদয়বিদারক এ দুর্ঘটনায় ২০১৮ সালের এই দিনে প্রাণ হারান তিনি।
নাবিলের পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ভাই বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোট শাহজাদপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাট্যকর্মী নাহিন খান এবং মেজো ভাই অনলাইন নিউজ পোর্টাল যমুনা প্রতিদিনের সম্পাদক ও দৈনিক তরুণ কন্ঠ পত্রিকার রাজশাহী প্রতিনিধি নিহাল খান সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) শাহজাদপুর উপজেলার ছয়আনিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,এলাকার মানুষ এখনও ভুলতে পারেনি সেই দুর্ঘটনায় তাদের প্রিয় মানুষকে অকালে হারানোর ব্যাথা।প্রতি বছরের ন্যায় আবারো ফিরে এসেছে দিনটি।
গতকাল গ্রাম ঘুরে দেখা যায়,স্বজনরা তাদের সন্তানদের ছবি ও স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে বিলাপ করছেন।পাঁচ বছর আগের সেই দুঃসহ সেই স্মৃতি এখনো কাঁদায় স্বজনহারা এই মানুষগুলোকে।
নাবিলের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে এখনো গুমরে কাঁদেন তার বাবা মা।নাবিলের মা জানান,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো নাবিল।এছাড়াও খুব ভালো ক্রিকেট খেলতো।বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছিলো।পড়ালেখায় সে ছিলো মেধাবী।ছেলের ছবিগুলো বুকে চেপে ধরে এখনো তিনি কাঁদেন।
নাবিলের মা বলেন,প্রতিদিন ভোর হতেই ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তো।এখন নামাজ পড়ার সময় ওর কথা খুব মনে পড়ে।দুর্ঘটনার ৫ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও তার অশ্রুধারা এখনো থামেনি।
পরিবারের অতি আদরের সন্তান নাবিলকে নিয়ে তারা অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন।নাবিলের মৃত্যুর পর থেকে বই-খাতা,প্রাপ্ত পুরস্কারসহ যাবতীয় জিনিসপত্র আলমারিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তার বাবা মা সবাই এসব স্মৃতিচিহ্ন দেখেন আর কান্নার সাগরে বুক ভাসান।
অন্যদিকে নাবিলের ভাইরাও দুর্ঘটনার পর একটি দিনও ভুলে থাকতে পারেনি আদরের ছোট ভাইকে।
নাবিলের স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোয়া।বড় হয়ে দেশসেরা ক্রিকেট হওয়ার।কিন্তু সেদিনের সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেলো এক নিমিষেই,বজ্রপাতে নিঃশেষ হয়ে গেলো তরতাজা প্রাণ।সেইসাথে তার স্বপ্নেরও চিরঅবসান ঘটলো।
নাবিলের মেজো ভাই সাংবাদিক নিহাল খান বলেন,ভীষণ কষ্ট হয়,একদিন যার সাথে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে আত্নীয়স্বজনদের কবর জিয়ারত করেছি,৫ বছর হলো সেই আদরের ছোট ভাইয়ের কবরই জিয়া’রত করতে হচ্ছে আমাদের।বিশেষ দিনগুলোতে যখনই আমি আর আব্বু নাবিলের কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াই,আব্বু কেঁদে ফেলেন।আজকের এই দিনে নাবিলের কথা খুবই মনে পড়ছে।একটাই চাওয়া আমার কলিজার ছোট ভাই নাবিলকে মহান আল্লাহ যেন বেহেশত নসীব করেন(আমিন)।
উল্লেখ্য,২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল বেলা তখন প্রায় ১২ টা! হঠাৎ আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে এলো।দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির ছিটেফোটা পড়ছিলো।সে সময়ে শাহজাদপুর পৌর সদরের শাহজাদপুর থানা ও উপজেলা ভূমি অফিসের দক্ষিণের দুটি পুকুরের মাঝস্থলের পরিত্যাক্ত একটি ভবনের কাছে বন্ধু রিয়াজের সাথে ক্রিকেট নিয়ে গল্প করছিল নাবিল।দশ হাত দূরে বসে ছিল নাবিলের বন্ধু পলিন।ঠিক সেই সময় বিকট শব্দে সেখানে বাজ পড়ায় নাবিল ও তার বন্ধু পলিন গুরুতর আহত হয়।দ্রুত এলাকাবাসী তাদের আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় নুরজাহান হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার দ্রুত তাদের পোতাজিয়াস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেররা জরুরী ভিত্তিতে আহতদের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিলে এ্যম্বুলেন্সযোগে নাবিল ও পলিনকে সেখানেই নেওয়া হয়।ওই হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক আহত নাবিল খান ও পলিনকে পরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।
কোলের মানিক সবার আদরের নাবিল ও পলিনকে হারিয়ে ভেঙে গেলো দুজনের পরিবারের স্বপ্ন।
নাবিল ও পলিনের অকাল মৃত্যুতে থমকে দাঁড়িয়েছিলো শাহজাদপুর,থমকে দাঁড়িয়েছিলো শাহজাদপুরের সকল মানুষ।আর থমকাবেই না কেন,এলাকাবাসীর চোখের সামনেই বড় হয় তারা।করুণ ওই মৃত্যু সংবাদ শুনে মুহুর্তের মধ্যে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পরিবার, আত্নীয়-স্বজন,বন্ধুবান্ধব,প্রতিবেশীসহ চেনা-অচেনা শত শত মানুষ।
প্রিয়জন হারানোর শোকে ও আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠে গোটা পরিবেশ।দুজনের এই অনাকাঙ্ক্ষিত অকাল মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারে নাই।তাদের মৃত্যুতে পুরো শাহজাদপুরে শোকের ছায়া নেমে এসেছিলো।পরদিন সকালে একই সাথে দুজনের নামাজের জানাযা পড়ানো নয়।এরপর পারিবারিক কবরস্থানে নাবিল ও পলিনকে দাফন করা হয়।দুজনের মৃত্যু সবার মনে দাগ কেটে গেলো এক বেদনার কাব্যকথা।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy