মোঃ ইউসুফ,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ৫ বছরেও ফেরেনি একই পরিবারের ১৮জনসহ লক্ষ্মীপুরের দেড় শতাধিক জেলে। বেশিরভাগই একমাত্র উপার্জনক্ষম হওয়ায় পরিবার কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন।
স্বজনদের দাবি, এতদিনেও খোঁজ দিতে পারেনি প্রশাসন, পাননি ক্ষতিপূরণ। তবে এসব জেলেদের সঠিক কোন তথ্য না থাকলে ও বিষয়টি খতিয়ে দেখে তালিকা তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতির সোনালী গ্রামের আমির হোসেন।
একটি জরাজীর্ন ঘরের মধ্যে ছেলে শরীফ হোসেনের ছবি নিয়ে কাঁদছে। ছেলের কথা মনে করে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৃদ্ধ বাবা আমির হোসেন। আর বলেন বাবা কোথায়? বাবা আসো? ছেলের ছবি দেখে আর বাবা বলে ডাকে। ছবি ধরতেই ছেলের জন্য কেঁদে উঠেন তিনি। তখন কোনো সান্তনাই বৃদ্ধ বাবাকে থামাতে পারেনি। ছেলেসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে হারিয়ে প্রায় পাগল পরিবারের অন্য সদস্যরাও। কি করবে, কোথায় যাবে।
পাশাপাাশি পরিবারের শিশু সন্তানসহ অন্য সদস্যদের নিয়ে দু:চিন্তায় হয়ে পড়েছেন এসব জেলেদের পরিবার। এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন সহায়তা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এ সময় আমির হোসেন জানান, পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হারিয়েছে মেঘনায়। ২০১৮ সালের ২১ জুলাই মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাসহ নিখোঁজ হন তারা। একসাথে এতজন উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে দুবছরেও উঠে দাড়াতে পারেননি স্বজনরা।
এদিকে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ মাছ শিকারে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন একই এলাকার আলমগীর মাঝি। স্বামীকে হারিয়ে তিন সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছেন নিখোঁজ আলমগীর হোসেন মাঝির স্ত্রী লাকি বেগমের। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন লাকি বেগম। একই অবস্থায় সদর উপজেলার চররমনী মোহন এলাকার মেজর আলী ও আবুল কাশেমসহ শতাধিক নিখোঁজ জেলে পরিবারের। প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে লক্ষ্মীপুরের জেলে পরিবারগুলো হারাচ্ছে স্বজন।
এ দিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল গনি, হুমায়ন কবির,জসিম উদ্দিন, মোসলেহ উদ্দিন ও পারভেজ খাঁনসহ অনেকেই জানান, জীবিকার টানে প্রাকৃতিক দূযোর্গের মধ্যে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রতিবছর নিখোঁজ হন একের পর এক জেলে। জেলের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। গত ৫ বছরে প্রায় দেড় শতাধিক জেলে মেঘনায় মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিদের হারিয়ে পাগল প্রায এসব পরিবার।
সংসারে চলছে মানবেতর জীবন-যাপন। কিন্তু সরকারীভাবে নিখোঁজ জেলে ও প্রাকৃতিক দূযোর্গে মারা যাওয়া জেলেদের ক্ষতিপূরন দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
প্রিয় স্বজনের মরদেহ পাওয়া তো দূরের কথা, খবরটি পর্যন্ত পাওয়াও অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে। এই জেলে পরিবারগুলোর জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। কিন্তু সরকারী ভাবে নিখোঁজ জেলে ও প্রাকৃতিক দূযোর্গে মারা যাওয়া জেলেদের ক্ষতিপূরন দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ ছৈয়াল জানান, গত পাঁচ বছরে নিখোঁজ জেলের সংখ্যা দেড়শ’রও বেশি। পরিবারগুলো এখনো অপেক্ষায় প্রিয়জনের ফিরে আসার কিংবা তাদের মরদেহ পাওয়ার। সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তাদের।
রামগতি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মোমিন জানান, তাদের কাছে নেই নিখোঁজদের কোনো তথ্য। তবে তালিকা তৈরীর কাজ শুরু হবে বলে জানান তারা। আর প্রশাসন বলছে, তালিকা পেলে দেয়া হবে ক্ষতিপূরণ। মৎস্য কর্মকর্তাদের হিসাবে, জেলার সদর, রামগতি, কমলনগর ও রায়পুর মিলিয়ে মোট জেলের সংখ্যা ৫২ হাজার। জেলেদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয়ার পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার দাবি তাদের ওপর নির্ভরশীল স্বজনদের।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy