রেখা মনি ,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
Facebook Twitter share
অভিযান অব্যাহত থাকার পরও রংপুরে বন্ধ হয়নি মাদক ব্যবসা। করোনাকালেও কমেনি এর বিস্তার। ভারত সীমান্ত থেকে মাদকদ্রব্য আনা-নেওয়ার নিরাপদ রুট হিসেবে তিস্তার চরাঞ্চলকে ব্যবহার করায় রংপুরের বিভিন্ন এলাকাসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে মাদক ব্যবসা আশঙ্কাজনক ছড়িয়ে পড়ছে।
Surjodoy.com
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) রাতে ৭৪ বোতল ফেনসিডিলসহ শুভেন্দু বোস (৪২) নামের এক কলেজশিক্ষক ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। শুভেন্দু বোস রংপুর নগরীর দি মিলেনিয়াম স্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক। অন্য দুই সহযোগী হলেন নগরীর ধাপ হাজীপাড়া এলাকার মৃত রইচ উদ্দিনের ছেলে গাড়িচালক রবিউল ইসলাম (৩৫) এবং হারাগাছ চওড়াহাটের হবিবার রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম সিরাজ (৩৫)।
The Daily surjodoy
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুরে শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতু এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়।
রংপুর জেলা গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আশরাফুল আলম পলাশ জানান, বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্ত এলাকা থেকে প্রাইভেট কারে মাদক বহন করে মেডিক্যাল এলাকাসহ রংপুরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছে একটি চক্র। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এমন খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে মহিপুরে শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতুর উত্তর দিকে অবস্থান নেয়। পরে একটি প্রাইভেট কার তল্লাশি চালিয়ে ৭৪ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারসহ তিন মাদক কারবারিকে আটক করা হয়। এছাড়া প্রাইভেট কারটি জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গঙ্গাচড়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
The Daily surjodoy
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুরের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করার পর সেটা যাচাই করেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী এখনও বাইরে আছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, অভিযানের ভয়ে তারা ব্যবসার কৌশল কিছুটা পরিবর্তন করেছেন।
The Daily surjodoy
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে ফেনসিডিলের বোতলসহ দুই-চারজন ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হলেও জামিনে ফিরে এসে আবারও তারা জড়িয়ে পড়ছে পুরানো ব্যবসায়।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার একটি অবহেলিত ইউনিয়নের নাম গজঘন্টা। দীর্ঘদিন এ ইউনিয়নটি ‘ফেনসিডিলের আড়ৎ’ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা বিস্তৃতি লাভ করেছে। ফেনসিডিলের পাশাপাশি মদ, গাঁজা, তাড়ি, ভাং ইত্যাদি মাদকদ্রব্য খোলামেলা বিক্রি হওয়ার কারণে এ অঞ্চল পরিচিতি পেয়েছে নেশার রাজ্য হিসেবে।
The Daily surjodoy
বহিরাগত খদ্দেরের পাশাপাশি স্থানীয় যুবকরাও নেশাগ্রস্ত হওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা। তিস্তার চর পেরিয়ে মুলত এখান থেকেই রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এসব মাদকদ্রব্য।
The Daily surjodoy
অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছুদিন আগেও শুধু গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা বাজারই ছিল ফেনসিডিল কেনা-বেচার নির্দিষ্ট স্থান। বর্তমানে তা ওই ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকাসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গজঘণ্টা বাজার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মানাস নদীর ব্রিজের নিচে, হাবু পাঁচমাথা, কিশামত হাবু শ্মশানপাড়া, রাজবল্লভ বাঁধের ওপর, ছালাপাক চর, কৈপাড়া, কাস্টমবাজার, কাগজীপাড়া ও উমর গ্রামে অবাধে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হচ্ছে।
The Daily surjodoy
এছাড়া হারাগাছ সীমানার স্লুইচগেট থেকে জমচওড়ার পাশ হয়ে মহিপুর পর্যন্ত তিস্তা বাঁধের বিভিন্ন স্থানসহ চরগ্রাম ছালাপাক, জয়রামওঝা, কোলকোন্দ ইউনিয়নের কুড়িবিশ্বা এবং গঙ্গাচড়া উপজেলা সদরে জমজমাট মাদক ব্যবসা চলছে। পাশাপাশি রাতদিন নেশার আসরও বসানো হচ্ছে ওইসব এলাকায়।
The Daily surjodoy
রংপুর শহর থেকে প্রভাবশালী বখাটে ও সন্ত্রাসী যুবকরা খদ্দের হিসেবে আসে এসব স্থানে। প্রতিদিন শহর থেকে আসা নেশাখোরদের রিকশা-মোটরসাইকেলে ভরে যায় গজঘণ্টা বাজারসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। বিশেষ করে শুক্রবার ছুটির দিনসহ বিশেষ দিনে অনেকে আসে কার-মাইক্রোবাস নিয়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কালেভদ্রে পুলিশ অভিযান চালিয়ে লোক দেখানো তিন-চার বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করলেও ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
The Daily surjodoy
গজঘণ্টা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘মাদকদ্রব্য পরিবহনের সময় অনেকে গ্রেপ্তার হয়। কয়েকদিন পর ছাড়া পেয়ে আবারো তারা ওই কাজ শুরু করায় মাদকের ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না।’
গঙ্গাচড়া থানা সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর র্যাবের গুলিতে গঙ্গাচড়া ও লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সীমান্তবর্তী চণ্ডিপুর নামক চরে র্যাবের সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’ মাদক ব্যবসায়ী আলেক ফ্যাক্টরি নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন তার সহযোগী আব্দুল হক। এসময় র্যাব ঘটনাস্থল থেকে ৯৮ বোতল ফেনসিডিল ও একটি দেশীয় শটগান উদ্ধার করে। এরপরও ওই রুটে মাদক ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
The Daily surjodoy
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা স্ব স্ব এলাকায় মাদকদ্রব্য আনা-নেওয়ার সিন্ডিকেট গড়ে তোলায় মুল ব্যবসায়ীরা খুব কম ধরা পড়ে। তবে মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যবসা অনেকটা কমে এসেছে। পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাটের সীমান্ত দিয়ে মাদকদ্রব্য আনা-নেওয়ার নিরাপদ রুট হিসেবে তিস্তার চরাঞ্চলকে ব্যবহার করায় কৌশল অবলম্বন করে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy