নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর এক মাদককারবারি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চর আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা শিকদার লিটন। প্রকাশ্যে কোনো স্থায়ী পেশা থাকলেও তার চাকচিক্যময় জীবনের আড়ালে রয়েছে অন্ধকার ওই জগতের ছায়া।
দীর্ঘ একযুগের বেশির সময় ধরে দক্ষিণাঞ্চলের মাদক ব্যবসায়ীদের তার সখ্য। নামে বেনামে নানা সময় এই কাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তার ঘনিষ্ট ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে মিলেছে এসব তথ্য।
ওদিকে অর্ধডজনের বেশি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কীভাবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে শিকদার লিটন তাও এক ধরনের বিস্ময়। পুলিশ তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। অথচ পাচ্ছে না। শিকদার লিটনের ঘনিষ্টদের সূত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পেরেছে, আজ এখানে তো কাল ওখানে-এই করে নিজেকে রক্ষা করছেন তিনি। এর চেয়েও ভয়ঙ্কর হচ্ছে ঘন ঘন বেশ বদলে আইনের চোখ ফাঁকি দিচ্ছেন চতুর এই ব্যক্তি। এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে তাকে ‘ছদ্মবেশী লিটন’ বলেও ডাকেন।
স্থানীয় সূত্র খোঁজ নিয়ে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফরিদপুর, খুলনা, নড়াইল, বরিশাল ও বেনাপোল অঞ্চলের মাদকবাণিজ্যের বড় চক্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ আছে শিকদার লিটন। তবে অধিকাংশ জায়গাতেই তিনি নিজের সঠিক পরিচয় দেন না। একেক জায়গায় একেক নাম ও পরিচয়ে পরিচিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত এই মাদককারবারি।
তার ঘনিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, মাদক বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শিকদার লিটন। এসব টাকার বড় অংশ যশোরের বেনাপোলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের চোরাকারবারে বিনিয়োগ করা আছে। ভারত থেকে অবৈধপথে বাংলাদেশ ঢোকা মাদকের চালান খুলনা, বরিশাল ও ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় কখনো নিজে, কখনো তার বাহিনী দিয়ে সরবরাহ করে।
বিশেষ করে বেনাপোল, নড়াইল, কালনাঘাট, ভাটিয়াপাড়া, মুকসুদপুর, ভাঙ্গা এবং বরিশাল অঞ্চলে মাদকের বড় বড় চালান ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে আছে শিকদার লিটনের বড় ভূমিকা। নিজেকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি মানুষ হিসেবে সমাজের মানুষের চোখে ধুলো দিলেও ভেতরে ভেতরে সমাজকে ধ্বংস করে দেওয়ার কাজে লিপ্ত আছে শিকদার লিটন। আলফাডাঙ্গা ও কাশিয়ানিতে কান পাতলে তার অপকর্মের এসব ফিরিস্তি শোনা যায়।
কাশিয়ানীর বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘শিকদার লিটন ও তার বাহিনীর কারণে এই এলাকার মানুষ তাদের সন্তানদের নিয়ে ভয়ে আছে। কারণ লিটন এই এলাকার বখাটে কিছু ছেলেদের নিয়ে বাহিনী করেছে। তারা লিটনের নির্দেশ অনুযায়ী ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাজা এনে কোমলমতি সন্তানদের হাতে তুলে দেয়। তাকে যতদ্রুত আইনের আওতায় আনা যাবে ততই মঙ্গল।’
জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, ‘শিকদার লিটনের নানা অপকর্মের অভিযোগ শুনেছি। কিন্তু সে খুবই চালাক প্রকৃতির লোক। একেক সময় একেক জায়গায় থাকে। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’
স্থানীয় পর্যায়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, মানুষকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শিকদার লিটন। একবার তার হাতে টাকা গেলে সেই টাকা কেউ ফেরত পেয়েছেন এমন নজির নেই। চাকরি দূরের কথা, টাকা চাইতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এসব অপরাধের দায়ে একাধিক মামলাও আছে তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফরিদপুর খুলনা ও পাবনা জেলায় শিকদার লিটনের বিরুদ্ধে প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে। চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে এসব মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ। মামলা নম্বর ২৪। চাঁদাদাবি এবং প্রাণনাশের হুমকির অপরাধে এ মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া পাবনা জেলার আটঘরিয়ায় একটি সি.আর মামলার আসামিও সে। মামলার নম্বর ৪৯/১৪। এই মামলাটি করা হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে। পাবনার আমিনপুর থানাতেও করা প্রাণনাশের একটি মামলার আসামি তিনি। ২০১৪ সালের ১৮ মে মামলাটি করা হয়।
দুষ্কর্মের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৯ মে তা বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় আলফাডাঙ্গা থানায়। একের পর এক মামলার আসামি হলেও দিনকে দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শিকদার লিটন।