আমান উল্লাহ
আফগানিস্তানে তালেবান মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দেবে বলে কথা দিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে যদি অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়, তাহলে কী হবে? বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আফগানরা মাদক উৎপাদন এবং মাদকব্যবসা ছাড়তে পারবে না। কারণ বিশ্বে আফিম রপ্তানির শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তান। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পপি ও আফিমের ব্যাপক উৎপাদন হয়। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তকমা পাওয়া তালেবানরা গত ২০ বছর ধরে পপি আর আফিম থেকে নিজেদের অর্থনৈতিক ব্যয় সামলাত।
জাতিসংঘ বলছে, তালেবানরা মাদকের ব্যবসা থেকে বছরে ৩০ কোটি থেকে ১৬০ কোটি ডলার পর্যন্ত আয় করত। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধভাবে মাদক চোরাচালান আর চাঁদাবাজি।
এদিকে কাবুল দখলের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান নেতারা জানান, তারা মাদক উৎপাদন বন্ধ করবেন। তবে মাদকের বিকল্প কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও চেয়েছে তারা।
জাতিসংঘের সাবেক বিশষেজ্ঞ হানস-ইয়াকোব স্নাইডার বলেন, এ গোষ্ঠীটি গত বিশ বছর অবৈধ মাদক ব্যবসা আর চাঁদাবাজির উপর টিকে ছিল। আসলে তাদের আয়ের একমাত্র পথ এটি। আর তাই মাদক নির্মূলে তাদের যে প্রতিশ্রুতি সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
আফগানিস্তানের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো কৃষি ও কৃষি থেকে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা। প্রতিবেশী পাকিস্তান, ভারত ও আরব আমিরাতসহ আরো কয়েকটি দেশ তাদের বড় বাণিজ্যিক সহযোগী। এ দেশগুলোতে আফগানিস্তান থেকে শুকনো ফল ও মসলাসহ নানা ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।
দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতির বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে ফুঠে উঠেছে। আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে অন্যের উপর নির্ভরশীল ও নড়বড়ে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক জানায়, আফগানিস্তানের জনবল দেশটির কম উৎপাদনশীল কৃষিখাতে নিয়োজিত।
অর্থাৎ বলা যায় যে, গত কয়েক দশকেও কৃষিখাত ছাড়া নতুন তেমন কোনো উৎপাদনশীল খাত দাঁড়ায়নি যা দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী রাখবে।
আফগানিস্তান এমনিতে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় আফিম রপ্তানিকারক দেশ। আফিম থেকে হেরোইনের মতো মাদক তৈরি করা হয়। তবে তারা যে কেবল আফিমই উৎপাদন করে তা নয়, মেথামফেটামিনের মতো মাদকও তারা তৈরি করে। মেথামফেটামিনকে সংক্ষেপে স্পিড, ক্রিস্টাল কিংবা মেথ নামেও ডাকা হয়। গত চরা বছর ধরে আফগানরা মেথের দিকে ঝুঁকেছে। খবর আল-জাজিরার।