স্টাফ রিপোর্টার
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র অ্যান্দোলন ও সরকার পতনের ফলে দিশেহারা হয়ে অজানা আতংকে এলাকা ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আওয়ামিলীগ ও তার অঙ্গ- সংগঠন এর নেতারা। অন্যদিকে দীর্ঘ ১৫ বছরের বিভিন্ন গায়েবি মামলায় হয়রানির শিকার বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন।
সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ আতংকিত ছিলেন। এহেন পরিস্থিতিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফজলে আকবর মো: শাহজাহান ব্যাক্তিগত উদ্যোগে উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে গিয়ে সভা সমাবেশ করে আতংকিত না হয়ে এলাকায় অবস্থান সহ হিংসা বিদ্বেষ ও হানাহানি মুলক কর্মকাণ্ড যেন কেউ না করতে পারে সেই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ জানিয়ে যাচ্ছেন। সংখ্যালঘু পরিবার সহ কোন মন্দিরে যেন কেউ আক্রমণ করতে না পারে এ ব্যাপারে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী ও অনুসারীদের সজাগ থাকার দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এলাকাবাসীর মতে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামিলীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সহাবস্থান ছিল। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী আওয়ামী লীগের নেতার কারনে গোটা আওয়ামি লীগ কলংকিত হয়। জানা যায় বিগত সরকারের আমলে অনৈতিক সুবিধা আদায় সহ বিভিন্ন অফিস আদালতে খুটি গেড়ে বসেন উপজেলার গুটিকয়েক আওয়ামি লীগের নেতা। তাছাড়া নিজেদের আখের গোছানোর জন্য প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন গায়েবি মামলায় আসামি করে পুলিশি হয়রানির মাধ্যমে এলাকা ছাড়া করে। ফলশ্রুতিতে সরকার পতনের পর তাদের মধ্যে অজানা আতংক বিরাজ করছে। অন্যদিকে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নি সংযোগ, হামলা ও ভাংচুর দেখে আওয়ামী লীগের নেতার কর্মীদের ভয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধবপুর উপজেলার সমন্বয়ক মো: জুয়েল বলেন ” বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ৪ আগষ্ট আমরা শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করতে মিছিল নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু কয়েকজন আওয়ামি লীগের নেতা তাদের দলবল সহ লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের মিছিল প্রতিরোধ করার অপচেষ্টা দেখে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষেপে যায়। আমাদের প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন আমরা কোন দলীয় পরিচয়ে আন্দোলনে আসিনি। দুষ্কৃতকারীরা আমাদের আন্দোলন কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আমাদের মিছিলে ঢুকে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ভাংচুর চালিয়েছে।” খোঁজ নিয়ে জানা যায় এলাকা ছেড়ে নিরুদ্দেশ হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাদের উপর তলে তলে ফুঁসে উঠছে দলীয় কর্মীদের একাংশ। এব্যাপারে কথা বলতে আন্দিউড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আতিকুর রহমান আতিক এর মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও উনার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফজলে আকবর মো: শাহজাহান বলেন,” বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফষল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস নেতৃত্বে গঠিত সরকারকে দেশ পুনর্গঠনের জন্য সহযোগিতা করতে আমরা কাজ করছি । ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, সরকারি স্থাপনা, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষের জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় যা করার দরকার সবকিছু আমরা করবো। এই দেশটা আমাদের সবার। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সুদীর্ঘকাল যাবত আমরা একসাথে মিলেমিশে বসবাস করছি। এই ঐতিহ্য আমরা মাধবপুরে নষ্ট হতে দিব না।”