মমিন আজাদ স্টাফ রিপোর্টার ।। শমসের হোসেনের জন্ম এক গরিব পরিবারে। ঠিকমতো খাবার না জোটায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় ১০ বছর বয়সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তিনি। এরপর কেটে যায় তার জীবনের ৫২ বছর। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানান কাজ করে দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরলেন তিনি।
শনিবার (২২ জুলাই) বাড়িতে ফিরে দেখা পেলেন মা সবেজান বেগমের। মা-ছেলের সাক্ষাতের মুহূর্ত কাঁদিয়েছে উপস্থিত সবাইকে।
শমসের সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর-কদমতলীর বাড়াইশালপাড়া গ্রামের বজর মামুদের ছেলে। তার বাবা ২০ বছর আগে মারা গেছেন।
শমসেরের পরিবারের লোকজন জানান, শমসেরের বাবা ছিলেন দিনমজুর। আট ভাই ও দুই বোনের মধ্যে শমসের বড়। অর্থের অভাবে একবেলা খেয়ে তো অন্যবেলা না খেয়ে থাকতে হতো তাদের। অভাবের তাড়নায় খাবার না পেয়ে ৫২ বছর আগে বাড়ি থেকে রাগ করে বের হন ১০ বছরের শমসের। এরপর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে একটি হোটেলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন দুই বছর। সেখান থেকে চলে যান পুরোনো ঢাকার কলতাবাজার এলাকায়। সেখানে গিয়ে কয়েক বছর হোটেলে কাজ করেছেন তিনি। পরবর্তীকালে রিকশা চালান। থাকতেন রিকশার গ্যারেজেই।
দুই বছর আগে শমসেরের ছোট ভাই মোতালেব হোসেন ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালানো শুরু করেন। সম্প্রতি মোতালেবের সঙ্গে পুরোনো ঢাকায় দেখা হয় শমসেরের। প্রথমে চিনতে না পারলেও কথাবার্তার একপর্যায় একে-অপরের পরিচয় দেন। এ সময় নিশ্চিত হন তারা সম্পর্কে আপন ভাই। পরে মোতালেব বাড়িতে ভাই শমসেরকে ফিরিয়ে আনেন বলে জানান পরিবারের লোকজন।
পরিবার খুঁজে পেয়ে শমসের হোসেন বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। ট্রেনে করে পার্বতীপুর নামি। এরপর মা-বাবার নাম বলতে পারলেও ঠিকানা ঠিকভাবে বলতে পারছিলাম না। তাই আর বাড়ি ফেরা হয়নি। সেখানে কিছুদিন হোটেলে কাজ করি। পরে হোটেলের আরেক কর্মচারীর সঙ্গে ঢাকায় যাই। এত দিন সেখানেই ছিলাম।
দীর্ঘদিন পর নিজের ইচ্ছে পূর্ণ হওয়ায় আনন্দিত বলে জানান শমসের। তিনি বলেন, আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ভেবেছিলাম মা-বাবা কেউই বেঁচে নেই। এত দিন পরে মায়ের সঙ্গে দেখা। জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এটি। তবে কষ্ট হচ্ছে বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো না!
তিনি বিয়ে করলেও স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বর্তমানে তার কোনো স্ত্রী-সন্তান নেই বলে জানান শমসের।
শমসেরের মা সবেজান বেগম বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছেলের সন্ধান না পেয়ে দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে চোখের জল ফেলেছি। কিন্তু এত দিন পর হলেও সৃষ্টিকর্তা ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমার যে কত আনন্দ হচ্ছে তা বোঝাতে পারব না।
বাঙ্গালীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজাদা সরকার বলেন, সবেজান বেগমকে অনেক দিন ধরেই চিনি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রায়ই পরিষদে এসে জানতে চাইতেন কেউ তার ছেলের কোনো খোঁজ দিয়েছেন কি না। এত দিন পর হলেও মা তার ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। এতে আমরাও আনন্দিত।
তিনি আরও বলেন, সবেজান বেগমের পরিবার এতটাই দরিদ্র যে পরিবারের আট সদস্যের থাকার জন্য নিজস্ব কোনো বাড়ি ছিল না। পরে তাদের থাকার জন্য বাড়াইশালপাড়ার আবাসনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের দুটি ঘর তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy