মিরসরাই প্রতিনিধি
তিন ফসলি জমিতে সরকারি বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর মিরসরাইতে একের পর স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এখানকার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন একাধিকবার উপজেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে স্থানীয় পৌর মেয়র ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে তাগিদ দেন। তিনি নিজেও এলাকায় কৃষিজমি রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
অথচ এমপির খুব বিশ^স্ত হিসেবে সুখ্যাতি থাকা উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি সোনা মিয়া তিন ফসলি জমিতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণে অনুমতি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এটা কিছুতেই করতে পারে না। এসিল্যান্ডকে আপনারাও জানান, আমিও বলছি। কৃষিজমিতে এ ধরণের স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হবে।’
ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতিপত্রে (অনলাইন) দেখা গেছে, মো. সাদেক হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান ৩ হাজার স্কয়ার ফুটের ৫ তলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদান করেন। সরেজমিন ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আজম নগর মৌজার পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৯২৮ বিএস দাগে এস.কে এন্টারপ্রাইজ নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ওই স্থানে ২৫ শতক পরিমাণ জমি মাটি দিয়ে ভরাট করে সীমানা প্রাচীর ও ভবন নির্মাণ করছে। যেখানকার চারপাশে তিনি ফসলি কৃষিজমি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় পাশ^বর্তী দুই কৃষক অভিযোগ করেন, আমরা এখানে আমন আইশ এবং রবিশষ্য আবাদ করি। এখন জমির পাশে এত বড় ভবন নির্মাণ হলে জমিতে রোদ পড়বে না, ফলন হবে না। বরং জমি নষ্ট হবে।
এ বিষয়ে ভবনের মালিক মো. সাদেক হোসেন দাবি করেন, তিনি সরকারি নিময় মেনে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য অনুমতি নিয়েছেন।
নির্মাণাধীন ভবন আবাসিক হিসেবে অনুমোদন হলেও ভবনের মূল ফটকে বাণিজ্যিক সাইনবোর্ড কেন জানতে চাইলে মো. সাদেক হোসেন বলেন, ‘আপাতত এটি লাগিয়েছি। মূলত আমি এখানে বাড়ি করছি।’
তিন ফসলি জমিতে বহুতল আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান সোনা মিয়া বলেন, ‘আমরা আসলে এতকিছু দেখি না। বাড়িঘর নির্মাণের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে ইউপি সদস্যরা সরেজমিন দেখে আমাদের সুপারিশ করেন আমরা অনুমতি দিয়ে দিই।’
এদিকে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের তৎকালীন উপ-সচিব কামরুন্নাহার স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে মিরসরাই উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়, ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় থাকা এলাকাগুলোতে বিভিন্ন সময় ভবন, স্থাপনা বা ইমারত নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়। যা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ।
ওই চিঠিতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ২য় তফসীলের কার্যাবলী ও কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, আইন/বিধি বহির্ভূতভাবে কোন ইউনিয়ন পরিষদ যদি এ ধরণের কর্মকান্ডে যুক্ত থাকে। তাহলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসব বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিনের কাছে আইনি ব্যাখ্যাসহ বক্তব্য চাইলে তিনি জানান, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ইউনিয়ন ও উপজেলা আওতাধীন ইমারত বা ভবনের নকশা অনুমোদন এবং ভবনের গুণগতমান নিশ্চিত করতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
তিনি এসময় বলেন, ‘কমিটির সিদ্ধান্তের বাহিরে কোন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমারত বা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়ার ইখতিয়ার রাখেন না। এটির বিরুদ্ধে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি।’