নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন।’
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে নবনির্মিত দেশের ৩২তম বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধনের সময় দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইন সেনানিবাসের হেলিপ্যাডে পৌঁছান। এ সময় তিনি রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন।
জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাসহ হাওরাঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ৩৫০ কোটি ৩৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৭৫ একর জায়গায় আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে এ সেনানিবাসের। কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পর সেনানিবাসে চারটি ইউনিট এবং এসএসডি জাজিরার পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ইউনিটগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। ১৯৭৪ সালে তিনি একটি নীতিমালা করে দিয়ে গেছেন। তারই ভিত্তিতে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। গত চার বছরে বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে তিনটি ব্রিগেড এবং ছোট-বড় ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে। হাওর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই সেনানিবাস।’
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষ জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ এ অঞ্চল থেকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ দুর্গম এলাকার মানুষের সঙ্গে থাকা, তাদের খোঁজখবর রাখা, তাদের সুখ-দুঃখের সাথি হয়ে ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার ইচ্ছা ছিল, এ অঞ্চলে সেনানিবাস গড়ে তোলা। তিনি মনে করেন, সেনানিবাস হলে এ অঞ্চলের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন। তার ইচ্ছা পূরণেই এখানে সেনানিবাস গড়ে তোলা হয়েছে। মোঃ আবদুল হামিদ প্রতি ক্ষেত্রে যখন যে দায়িত্ব পালন করেছেন, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে থেকেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়তে তার বিরাট অবদান রয়েছে। তিনি নিবেদিতপ্রাণ এবং সৎভাবে জীবনযাপন করে গেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন রাষ্ট্রপতি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। তাই সেনানিবাসে স্কুল, কলেজ, চিকিৎসাকেন্দ্র হবে; মানসম্পন্ন পাঠদানের সুবিধা সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাওর, বিল ও জলাভূমি অঞ্চলে প্রতিটি রাস্তাঘাট হবে এলিভেটেড, যেন বর্ষাকালে পানি ও নৌকা চলাচল অব্যাহত এবং সেনানিবাস থেকে ঢাকা-সিলেট যোগাযোগ অবস্থা ঠিক থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আজ আমরা আমাদের দেশ পেয়েছি, জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি। গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার ফলে বাংলাদেশ ১৪ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তা গত ২৯ বছরেও সম্ভব হয়নি। আমরা চাই, বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। আমি আমার পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ আর্থসামাজিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই আমরা পথ চলছি। এ দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না; ক্ষুধার্ত থাকবে না। তাদের সুখে রাখতে সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
সমুদ্রসীমা নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে সমস্যা ছিল, তা সমাধান করে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করা হয়েছে। অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় গিয়েছিল, তারা এর সমাধান করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সীমানাচুক্তি বাস্তবায়ন, ছিটমহল বিনিময় করে বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যে শান্তিপূর্ণভাবেও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় করা যায়।’
অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। আর এ কারণে সব পণ্যের মূল্য ধরাছোঁয়ার বাইরে। আজ উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের দেশে আমরা এখনো অর্থনৈতিক চাকা গতিশীল রাখতে পেরেছি। বাংলাদেশে যেন এমন না হয়, তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, তার আহ্বান করা হয়েছে। সব অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা হবে।’ বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, তেল সবকিছুতেই মিতব্যয়ী হওয়ার প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে রূপকল্প বাস্তবায়ন করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, নিজের উন্নতি নিজে করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’ শেষে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর ও সেনানিবাস ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য রিভারাইন বা নদীতীরে রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের হোম স্টেশন এ সেনানিবাস। এখান থেকেই হাওর এবং নদী এলাকা অপারেট করবে সেনাবাহিনী। ২৭৫ একরের ওপর নির্মিত এ সেনানিবাসকে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। বিশ্বমানের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে এ সেনানিবাসকে। এখানে আছে সর্বাধুনিক মিলিটারি স্পিডবোট, যেগুলোর ৯০ ভাগই দেশে নির্মিত। এই সেনানিবাসের আওতায় থাকবে একটি কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল রিসেল, যা থেকে যুদ্ধকালীন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। একসঙ্গে ৫ হাজার সেনা অবস্থান করতে পারবে এ সেনানিবাসে। সব বিবেচনায় মিঠামইন রিভারাইন সেনানিবাস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy