সম্প্রতি ডেইলি বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিলেন মৌসুমি। শফিকুল ইসলাম রাসেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যক্তিগত ও খেলোয়াড়গত জীবনের নানা দিক দিয়ে কথা বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন একবার হলেও সাফের শিরোপা জেতার স্বপ্নের কথা।
কিভাবে ফুটবলে আসা?
- ২০১১ সালে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল থেকেই আমার যাত্রা শুরু। আমাদের স্কুলের স্যার বলেছিলেন তোমাদের বঙ্গমাতা ফুটবল খেলতে হবে। আমি তখন খুশিতে আটখানা।
মেয়ে হিসেবে শুরুতে কেমন বাঁধা ছিল?
- ফুটবলার হওয়াটা আমার জন্য কঠিনই ছিল। খেলার জন্য আমার পরিবারকে হুমকি-ধামকিও পেতে হয়েছে। মেয়ে হয়ে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম। ছেলেদের মতো জার্সি, ট্র্যাকস্যুট পরতাম বলে এলাকার লোকজন মা–বাবাকে হুমকি দিতেন। মাঝে এক বছর তো খেলাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরের বছর আবারো বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে অংশ নেই। তখন এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমার খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে আমার মা–বাবাকে আমাকে মেয়েকে ফুটবল খেলতে দিতে বলেন এবং আমার নিরাপত্তার দায়িত্বও নেন।
কিভাবে বয়স ভিত্তিক দলে আসা?
- আমার খেলা দেখে জাতীয় দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন স্যার আমাকে অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ দেন। এভাবেই পথ চলা শুরু, এখনো চলছি। খেলেছি নেপালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ, ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে, থাইল্যান্ডে এই টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে, ভারতের এসএ গেমসে। সবশেষ সাফে ভারতের শিলিগুড়িতেও খেলেছি।
জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল কবে?
- ২০১৪ ইসলামাবাদে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল।
খেলার সুবাদে কোথায় কোথায় ঘোরার সুযোগ হয়েছে?
- অনেক দেশেই ঘোরা হয়েছে। যেমন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভারত, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান ও সিঙ্গাপুর।
কোয়ারেন্টাইনে কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
- বাসায় টেলিভিশন দেখছি, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগা করছি। পরিবারকে সময় দিচ্ছি, অনুশীলন করছি এভাবেই দিন কাটছে।
ফিটনেস ধরে রাখতে কি কি করছেন?
- ফিটনেস ধরে রাখতে বিভিন্ন কোর এক্সারসাইজ যেমন স্ট্রেচিং, ওয়ার্মিং আপ, ডায়নামিক এগুলো করার চেষ্টা করছি। যেহেতু আমি ঢাকায় তাই বাইরে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই তাই বাসাতেই চেষ্টা করছি। আমাদের সবাইকে নিয়ে একটা হোয়াটস এপ গ্রুপ খোলা হয়েছে। সেখানে আমাদের কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন স্যার আমাদের যে দিক নির্দেশন দিচ্ছেন তা পালন করছি। এভাবেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি।
ফুটবল মাঠে ফেরার ব্যাপারে আপনার চাওয়া কি? - মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অনেকদিন মাঠে ফুটবল নেই। আর আমরা তো ফুটবল ছাড়া বাঁচি না। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই যাতে খুব দ্রুতই তিনি আমাদের মাফ করে দেন। এই দুর্যোগ চলে যায়। আর আমরা যেন খুব তাড়াতাড়িই আবার মাঠে ফিরতে পারি।
নারী লিগ সম্পর্কে কিছু বলুন?
- আমি প্রথমবারের মত নারী লিগ খেলছি। তো সব কিছু মিলিয়ে ভালই লাগছিল। তবে এই মহাদুর্যোগে সব ভেস্তে গেছে। নারী লিগ মাঠে ফিরুক এই প্রত্যাশা। তবে আমি বাফুফের কাছে এবং সকল ক্লাবগুলোর কাছে অনুরোধ করি যেন লিগটা প্রতিবছরই মাঠে গড়ায়।
কোচ বা বাফুফের কাছ থেকে করোনা কালীন সময়ে কেমন সাহায্য পাচ্ছেন?
- এই দুর্যোগের মধ্যেও বাফুফে আমাদের মাসিক স্যালারিটা দিয়ে যাচ্ছে। এ সময় এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সাপোর্ট। এটা কন্টিনিউ না করলে আমরা বেশ সমস্যায় পড়তাম। এছাড়া বাফুফে নারী উয়িংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ম্যাডাম, আরো অন্যান্য অফিশিয়াল এবং স্যাররাও হোয়াটস এপ গ্রুপের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
একজন অধিনায়ককে মাঠে কেমন ভূমিকা পালন করেত হয় বলে মন করেন?
- একজন অধিনায়কের উপর খুব বেশি দায়িত্ব থাকে। মাঠ ও মাঠের বাইরেও তাকে ভূমিকা রাখতে হয়। অধিনায়কের সকলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হয়। সবাইকে মোটিভেট করতে হয়। লিডিং পয়েন্ট নিতে হয়। স্যারদের দেয়া দায়িত্ব নিজে পালন করতে হয় এবং অন্যকে পালনে সাহায্য করতে হয়। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হয়। সব খেলোয়াড়কেই সাপোর্ট দিতে হয়।
বাংলাদেশের ফুটবলকে কি দিতে চান আপনি? মানে নারী ফুটবল নিয়ে আপনার টার্গেট কি?
- আমি একজন ফুটবলার হিসেবে সব সময় চাই আমার দেশ যেন ভালো পারফর্ম করে। ভালো রেজাল্ট আনে। আমি এটা চাইবো আমার খেলাকালীন যতগুলো ম্যাচ পাবো, আমি আমার সেরাটা দিয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চাই। দেশবাসীকে কিছু দিতে চাই। আমি মন থেকে চাই বাংলাদেশ নারী টিম ও যেন একদিন বিশ্বকাপ খেলে। এখন নারী ফুটবল নিয়ে সব থেকে বড় টার্গেট সাফ। সাফের সিনিয়র টিমে আমরা কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। আল্লাহ যেন আমাদের সদয় হন। আমরা যেন একবার হলেও এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy