ভূঞাপুর প্রতিনিধি :
টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা চরাঞ্চলসহ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে শত শত একর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, নিকরাইল ও অর্জুনা ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, ভালকুটিয়া ও কষ্টাপাড়া গ্রামে ব্যাপকভাবে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে উপজেলার যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। বর্ষার শুরুতে এমন ভাঙনে অসহায় হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। ইতিমধ্যেই অনেকে ভিটেবাড়ি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভাঙন কবলিত নদীপাড়ের মানুষ।
ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন জানান, গত কয়েক বছর ধরে যমুনার পূর্বপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। শতশত একর ফসলি জমি, হাট-বাজার, মসজিদ-মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাজার হাজার ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা আসলেই শুরু হয় তীব্র ভাঙন। এবছর বর্ষার প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে ভাঙন। ইতিমধ্যে ফসলি জমিসহ বেশ কয়েকটি বাড়ী-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর ভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনা পূর্বপাড়ে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়, কিন্তু বর্ষা চলে গেলে আমরা সেটির আর কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখি না।
জানা যায়, ভূঞাপুরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাবসারা ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষের। যমুনা পানি দিন দিন বাড়তে থাকায় চরাঞ্চলসহ নতুন নতুন এলাকায় পানি উঠে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার পরিবার।
উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের পুরো এলাকা, গোবিন্দাসী, অর্জুনা ও নিকরাইল ইউনিয়নের আংশিক এলাকাগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়েছে মানুষজন। ঘরে পানি উঠায় অনেকের রান্না বন্ধ হয়ে গেছে।
গাবসারা ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের মোঃ লাল মিয়া বলেন, এমনিতেই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তার ওপর আবার বন্যার কারণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে ফসলের জমি। যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে চরের শত শত একর জমির পাট, তিল, বাদাম, আউশ, কাউন ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন অন্যের জমি বর্গা ও চড়া সুদে টাকা নিয়ে চাষাবাদ করা চাষিরা।
গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম মনি বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির অর্ধেক নদীতে বিলীন চলে গেছে। বাকিটুকুতে নিজ উদ্যোগে বৌ-বাচ্চা নিয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় মাটি ভরে বস্তা ফেলানো হয়েছিল কিন্তু বন্যার কারণে ফেলানো বস্তা নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। বন্যার কারণে বাজার সদাই করতে পারছি না। গোবিন্দাসী হতে ভালকুটিয়া পর্যন্ত সড়ক ভেঙে ও তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বেশ কিছু এলাকায় রাস্তা ভেঙে গেছে।
গাবসারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমার ইউনিয়নে ৪৭ টি গ্রাম চরাঞ্চল। বন্যার কারণে ইউনিয়নের সব কয়টি গ্রামই এখন প্লাবিত। তবে বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। এখনো সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কোন ত্রাণ সহায়তা আসেনি। পানিবন্দি মানুষগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অন্যদিকে পায়খানা ও টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানি, গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভূঞাপুরের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাঙন রোধে আমরা কাজ করছি।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy