রফিকুল ইসলাম বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
যশোরের শার্শা উপজেলার ৮২ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই। অথচ সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করার নির্দেশনা রয়েছে। সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই, সেখানে তা নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছে শিক্ষা অফিস।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরেও যশোরের শার্শা উপজেলা ও বেনাপোল পোর্ট থানার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদমিনার নির্মিত হয়নি। উপজেলা ও পোর্ট থানার ৩৩টি মাদরাসার একটিতেও নেই শহিদ মিনার। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও একই। যদিও এসব কলেজ, স্কুল ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটিতে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রয়েছেন।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শার্শা ও বেনাপোলে ২৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১২৬টি প্রাথমিক ও প্রি-ক্যাডেট এবং কমিউনিটি মিলিয়ে আরো রয়েছে ৫৪টি। এদের মধ্যে শহিদ মিনার আছে মাত্র ১৮টিতে। ৩৮টি হাইস্কুলের মধ্যে ২৬টিতে শহিদ মিনার আছে। ১২টি কলেজের মধ্যে মাত্র তিনটিতে আছে শহিদ মিনার। ৩৩টি মাদরাসার একটিতেও শহিদ মিনার নেই। মাদরাসাগুলোর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ শহিদ মিনারে ফুল দেওয়াকে ধর্মীয় বিধি সম্মত নয় বলে মনে করেন। সাধারণ যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই, সেগুলোর শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ একুশে ফেব্রুয়ারিতে অন্য কোনো শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আর মাদরাসাগুলোর কোনো কোনোটিতে ওই দিন মিলাদ মাহফিল হয়।
উপজেলার নাভারন বুরুজবাগান ফাজিল মাদরাসার সুপার একিউএম ইসমাইল হোসাইন জানান, তাদের মাদরাসাটি ১৯৬৫ সালে স্থাপিত। এখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবস পালন করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
একই দাবি করে উপজেলার ল²ণপুরের রহিমপুর আলিম মাদরাসার সুপার মাওলানা শহিদুল্লাহ বলেন, এখানে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।
ধান্যখোলা ডিএস সিনিয়র মাদরাসার সুপার মাওলানা আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, মাদরাসা মানুষের দানে চলে। তাছাড়া জায়গা সংকট রয়েছে। এ কারণে শহিদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবসে দোয়া অনুষ্ঠান করেন।
নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শারমীন নাহার বলেন, ‘আমাদের কলেজে শহীদ মিনার না থাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বুরুজবাগান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়। অথচ আমাদের কলেজের পরিচালনা পরিষদে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন। তারা ইচ্ছা করলেই শহিদমিনার নির্মাণ করে দিতে পারেন।’
নাভারন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘আমাদের কলেজের পাশেই হাইস্কুলে শহিদমিনার থাকায় এখানে আর তা নির্মাণ করা হয়নি।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদমিনার থাকার বাধ্যকতা থাকলেও শার্শা-বেনাপোলের অনেক প্রতিষ্ঠানে তা নেই। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণে পত্র দেওয়ার পরও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদমিনার নির্মাণ করা দরকার। তাছাড়া সরকারের কাছে শহিদমিনার নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে একটি পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে জেলা শিক্ষা অফিসার এএসএম আব্দুল খালেক জানান, শহিদ মিনার নির্মাণে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শহিদমিনার নেই তাদেরকে নির্মাণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এবং পর্যায়ক্রমে তা নির্মান করা হবে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy