রেখা মনি নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
যেভাবে ধরা খেলেন কুমারী পরিচয়ে ৮ বিয়ে করা সেই নীলা
অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন কুমারী পরিচয়ে আট বিয়ে করা খুলনার আলোচিত সেই সুলতানা পারভীন নীলা। তাকে গ্রেফতার করে রাজধানীর বাড্ডা থানা পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাড্ডা থানার এসআই মো. হানিফ। গ্রেফতার নীলা খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার সুলতানুল আলম বাদলের মেয়ে।
এসআই মো. হানিফ ও এএসআই রফিকুল ইসলাম জানান, নীলার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৭ অক্টোবর পূর্ব বাড্ডার শাহাবুদ্দিন মোড়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, চলতি বছরের ২০ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নীলার বিরুদ্ধে মামলা করেন সাবেক স্বামী আব্দুল বাকী। তার বিরুদ্ধে চেক ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগ আনা হয়। বাকী খুলনা মহানগরীর নাজির ঘাট এলাকার বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, একই এলাকায় থাকার সুবাদে ২০২০ সালের ৪ মে নীলাকে বিয়ে করেন বাকী। বিয়ের পর তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার গুলশানে থাকতেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকে নীলার বেপরোয়া জীবন-যাপনসহ বিভিন্ন কারণে তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এর মধ্যেই মনিরুল ইসলাম বর্ষণ নামে এক যুবককে নিজের খালাতো ভাই পরিচয়ে প্রায়ই বাসায় নিয়ে আসতেন নীলা।
একপর্যায়ে ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই বাকী দেখেন কথিত খালাতো ভাই মনিরুলকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্ত্রী। স্বামীকে দেখে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন নীলা। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে চড়াও হয়ে বাকীকে মারধর করেন মনিরুল ও নীলা। একই সঙ্গে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাকীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘রূপসী বাংলা ট্যুরস’র তিন লাখ টাকার দুটি সিটি ব্যাংকের চেকও ট্রাস্ট ব্যাংকের ৫০ লাখ টাকার একটি চেকে স্বাক্ষর বসিয়ে বেরিয়ে যান তারা। এ ঘটনায় ২৯ জুলাই বাড্ডা থানায় জিডি করেন ভুক্তভোগী বাকী। একই সঙ্গে ৩১ জুলাই নীলাকে তালাক দেন তিনি।
এদিকে, সাবেক স্বামী বাকীর কাছ থেকে নেয়া ৫৩ লাখ টাকার দুটি চেক উদ্ধারে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় নীলার ভাড়া বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। তবে অভিযুক্ত নীলা বাসায় না থাকায় চেক খুঁজে পাননি সোনাডাঙ্গা থানার এসআই তহিদুর রহমান।
অভিযান শেষে এসআই তহিদুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশেই দুটি চেক উদ্ধারে নীলার ভাড়া বাসায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তিনি বাসায় ছিলেন না। এ কারণে চেক দুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে সুলতানা পারভীন বৃষ্টি ওরফে সুলতানা পারভীন নীলা এ পর্যন্ত আটটিরও বেশি বিয়ে করেছেন। বিয়ে করে কিছুদিন পর সেই স্বামীকে ছেড়ে দিতেন। একই সঙ্গে তালাক দেওয়া স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ নানা কৌশলে বাড়ি-গাড়ি হাতিয়ে নেয়াই ছিল তার ব্যবসা। তার মূল টার্গেট সম্পদশালী, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী পুরুষ। টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলতেন।