রিয়াজুল হক সাগর
বাবুখাঁর গৌরব, বাবুখাঁর একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র আব্দুর রউফ মিয়া। তিনি বাবুখাঁর স্বনামধন্য মুসলিম পরিবারে ২০ ডিসেম্বর ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নয়া মিয়া ও মাতার নাম রূপজাহান বেগম। শৈশবে তিনি তার নানাবাড়ি কেরানীপাড়ায় থেকে মুন্সিপাড়া পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তার নিজ এলাকা বাবুখাঁ গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং যথারীতি ১৯৫৭ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ১৯৫৭ সালেই প্রথমে নিসবেতগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী প্রাপ্ত হন। তিনি নিসবেতগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাত মাস শিক্ষকতা করার পর গনেশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে আসেন। অতপর তিনি ১৯৬৫ সালে পি.টি.আই করে সম্মানের সহিত দীর্ঘ ২৪ বছর শিক্ষকতা করার পর বাবুখাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে আসেন। তিনি বাবুখাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর সুনামের সহিত শিক্ষকতা করার পর চাকুরী জীবন শেষ করে অবসর গ্রহন করেন। চাকুরী জীবনে তিনি রংপুর সদর থানাধীন সম্মানীপুর এলাকার মিনাজ উদ্দিনের কনিষ্ঠ কণ্যা আবেদা খাতুনের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তিনি জেনারেল লাইনে লেখাপড়া করেও ছোটকাল থেকেই ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থ সংগ্রহ করে বাসায় চর্চা করতেন। তিনি পবিত্র কুরআন থেকে অধিকাংশ আয়াত অর্থসহ আয়ত্বে আনেন। যৌবনকালে তিনি তার বন্ধু মাওলানা আব্দুর রহিমকে সাথে নিয়ে মুলাটোল পাকার মাথায় একটি মাদ্রাসা স্থাপনের চেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে মাদ্রাসার জায়গা নির্ধারণ করেন এবং সেখানকার ঝাড়-জঙ্গল পরিস্কার করে বড় বড় দুইটি কুঁড়েঘর স্থাপন করে মাদ্রাসার কাজ শুরু করেন। উক্ত মাদ্রাসা পরিচালনা করার জন্য তিনি হাজী ওমর উদ্দিনের আর্থিক ও সামাজিক সহযোগিতা গ্রহন করেন। অতপর মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের আর্থিক সহযোগিতার জন্য শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে নিয়ে বাবুখাঁসহ আশপাশের এলাকায় ধান ও নগদ অর্থ সংগ্রহ করেন। আল্লাহর বিশেষ রহমতে রংপুরের ধার্মিক ব্যক্তিগণের সাহায্য ও সহযোগিতায় পরবর্তীতে মাদ্রাসাটি মুলাটোল মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসায় রূপান্তরিত হয়। তিনি ইসলাম ধর্মে সুশিক্ষিত হওয়ার কারণে কবর পূজাকে ঘৃণা করতেন। তাই ধর্মীয় কুসংস্কার,কবরপূজাকে উচ্ছেদের জন্য এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। এছাড়াও ইসলাম ধর্মে মানুষকে দীক্ষিত করার জন্য বাবুখাঁসহ কামারপাড়া, গনেশপুর এলাকায় নিজ উদ্যোগে মাওলানা সাইয়েদুর রহমানকে সাথে নিয়ে ও স্থানীয় মুরব্বি,গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বিরাট ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন। তিনি উত্তর বাবুখাঁ ঈদগাহ মাঠে তিন বছর ঈদের জামাতে ঈমামতি করেন। তার জীবদ্দশায় তিনি পাঁচ সন্তানের গর্বিত জনক। তার বড় ছেলে হাফেজ মোঃ ইয়াহিয়া-সরকারি চাকুরে, দ্বিতীয় কণ্যা মারিয়ম বেগম-গৃহীনি, তৃতীয় পুত্র এ্যাডভোকেট ইসহাক-আইনজীবী, চতুর্থ সন্তান মোঃ ইলিয়াস-শিক্ষক,পঞ্চম সন্তান ফাতেমা-তুজ-জোহরা -শিক্ষক।
তিনি গত ১ আগস্ট ২০২০ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮২ বছর। তিনি অসংখ্য গুণধর ছাত্র, গুণগ্রাহী ও শুভাকাঙ্খী রেখে গেছেন।