রংপুর ব্যুরো :
রক্ষক যখন ভক্ষক রংপুরে পাঠশালার মোড়ে পুলিশের বিলাশ বহুল বাড়িতে তরুণী হত্যাকে আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের। পুলিশ কর্মকর্তা মাইনুলের ইসলাম এর বাড়িতে কাজ করতেন সুন্দরী তরূণী মৌসুমি ১৭।
রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়র বাথরুমের ছাদে মৌসুমি নামে ১৭বছরের তরুণীর মরদেহ উদ্ধার। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্যাতন পরবর্তী হত্যা করে পার্শ্ববর্তী পুলিশ বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে তরুণীর মরদেহ।
স্থানীয় সুত্র বলছে, ৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং কয়েক জন ব্যাংকার ও সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মিলে বিলাশবহুল এই আবাসন তৈরি করেছেন।
সেখানেই প্রায় ন’মাস যাবৎ গৃহ-চারিকার কাজ করে আসছিলেন সুন্দরী তরূণী মৌসুমি। কুড়িগ্রাম জেলার সদর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মাইনুল ইসলাম’র বাড়িতে কাজ করতেন মৌসুমী। নিহত তরুণী মৌসুমী রংপুর সদর উপজেলার চন্দন পাট ইউনিয়নের আ: জলিল মিয়ার মেয়ে। মৃত মৌসুমির মা কল্পনা আক্তারের মৃতুর পরে রংপুর মহানগরীর ১২নং ওয়ার্ডে তার মামা মঞ্জুরুল ইসলাম এর বাড়িতে বেড়ে ওঠেন সে। মামা মঞ্জুরুল ইসলাম এর দারিদ্রতার কারণে, রংপুর সরকারি কলেজের পিওন সুরুজ মিঞার মাধ্যমে তারই সু-পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তা মাইনুলের ইসলাম এর বাড়িতে কাজ নিয়ে দেন তাকে। হঠাৎ করেই গত ১৩ ফেব্রুয়ারী ২৩ ইং সকালে স্থানীয়রা রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাথরুমের ছাদে তরুণীর মরদেহ দেখতে পেয়ে, জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দেন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের বাড়ি নামে পরিচিত
“প্রয়াস এপার্টমেন্ট” এর কারো সাথেই এলাকাবাসীর তেমন কোন সম্পর্ক নেই। স্থানীয়দের সাথে তেমন মিশেন না এই বাড়ির মানুষ। তবে প্রায়ই রাতে এই বিলাশবহুল ফ্ল্যাট থেকে কান্নাকাটি ও চিৎকার চেচামেচি শোনা যেত। পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম জানান, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে স্কুলের আয়া সুমাইয়া স্কুলে গিয়ে বাথরুমের উপরে মরদেহের পা দেখতে পান। পরে স্কুল সংলগ্ন সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌসির বাসায় গিয়ে বলেন। ফেরদৌসী খবর পেয়ে আমাকে জানালে আমি দ্রুত স্কুলে যাই, তখন সময় আনুমানিক সকাল ৯টা আমি গিয়ে শুনি পুলিশ এসে তড়িঘড়ি করে লাশ নিয়ে গেছেন।
এলাকাবাসী প্রতক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ তরুণির লাশ উদ্ধারের সময় আমরা দেখেছি তার দুই পায়ের রগ কাটা ছিলো। আমাদের ধারণা হয়তো তাকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়রা আরও জানান, তার মৃত নিশ্চিত করতেই পায়ের রগ কাটা হতে পারে। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার গভীরভাবে তদন্ত করা অত্যন্ত জরুরী। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই, অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করা নাহলে আমরা এলাকাবাসী মানববন্ধন সহ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবো। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা: আয়শা পারভিন জানান, মৌসুমির পোষ্ট-মোর্টেম করা হয়েছে, ভিসেরা রিপোর্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। এবং ধর্ষণ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে ভ্যাজাইনাল সোয়াব পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছেনা। এবিষয়ে জানতে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান-কে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। একই বিষয়ে ওসি দতন্ত মো: হোসাইন জানান আমি ছুটিতে আছি এব্যাপারে তেমন কিছু বলতে পারিনা। তবে ইউডি মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। পোষ্ট মোর্টেম রিপোর্ট আসলে প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা হতে পারে।
রংপুর মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ জানান, নিহত তরুণী কুড়িগ্রাম জেলার সদর ফাড়ি ইনচার্জ মাইনুল এর বাসায় কাজ করতো, আপাতত মরদের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আপাতত একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে। এব্যাপারে প্রয়াস এপার্টমেন্ট এর নাইটগার্ড, কেয়ারটেকার, স্থানীয় ও বাড়ির সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান তিনি।
নিহত মৌসুমির বিষয়ে জানতে চাইলে, তার মামা মঞ্জুরুল ইসলাম সাংবাদিক পরিচয় জানার সাথে সাথেই বলেন ভাই আমার নিউজ-টিউজ লাগবে না। যা হয়েছে তা আমরা সবকিছু মেনে নিয়েছি। কি মেনে নিয়েছেন? এমন প্রশ্ন করার সাথে সাথেই ফোন কেটে দেন। পরে তাকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। পরে রাত আনুমানিক রাত ১১টার দিকে তার নানার বাড়ী রংপুর মহানগরীর ১২ নং ওয়ার্ড, ধোরার পাড় উত্তর রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার স্থানীয় কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পাদন করা হয়।