রোস্তম আলী: রংপুর জেলা প্রতিনিধি
রংপুরের মিঠাপুকুরে চাঞ্চল্যকর মোসলেমা খাতুন (১৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। প্রেমের সম্পর্ক এক পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্কে গড়ালে গর্ভবতী হয়ে পড়ে মোসলেমা। কিন্তু গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে না চাওয়ায় তাকে গলায় ওড়না পেচিয়ে হত্যা করে প্রেমিক। এ ঘটনায় হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নাহিদ হাসান (২২) নামে ওই প্রেমিককে আটক করা হয়েছে।
রোববার (২৫ এপ্রিল) বিকালে নাহিদ হাসান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। পরে বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নাহিদ হাসান মিঠাপুকুর উপজেলার দলসিংহপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকালে মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনি ইউনিয়নের বউরাকোট গ্রামের মোতালেব মিয়ার মেয়ে মোসলেমা খাতুন বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরে পরিবারের লোকজন মোসলেমাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে মিঠপুকুর থানা পুলিশকে অবগত করেন। শনিবার বিকালে মোসলেমার বাড়ির পাশের একটি ভূট্টা ক্ষেত থেকে হঠাৎ পচা গন্ধ ভেসে আসে।
গন্ধের সূত্র ধরে ভূট্টা ক্ষেতের মাঝখানে গিয়ে স্থানীয়রা মোসলেমার অর্ধগলিত মরদেহ দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোসলেমার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মোসলেমার বাবা বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশসহ পিবিআই ও সিআইডি। মরদেহ উদ্ধারের ১২ ঘন্টার মধ্যে রাত পৌনে তিনটার দিকে নাহিদ হাসানকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ হাসান হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতে পাঠানো হলে সেখানে নাহিদ হাসান জানায়, মোসলেমা খাতুন সম্পর্কে তার চাচাতো বোন।
তাদের মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও হয় তাদের। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর নাহিদ হাসান দিনাজপুরে চাকুরীতে চলে যায়। ১৫ দিন আগে মোসলেমা নাহিদকে জানায় সে গর্ভবতী। কিন্তু নাহিদ হাসান তা অস্বীকার করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাহিদকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলে মোসলেমা। কিন্তু নাহিদ আসতে চায় না। মোসলেমা বার বার জিদ করলে সে দেখা করতে রাজি হয়। পরে বাড়ির পাশের একটি ভুট্টা ক্ষেতে গিয়ে তারা দেখা করে। এ সময় মোসলেমা তার গর্ভের বাচ্চা রাখতে চেয়ে বিয়ের দাবি করেন। কিন্তু নাহিদ এতে রাজি হয়নি। সে যেকোন ভাবে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে।
মোসলেমা এতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে নাহিদ রেগে গিয়ে ভুট্টা ক্ষেতেই তাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মেরে ফেলে। এরপর সে বাসায় চলে গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকেন।
মিঠাপুকুর থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডির তৎপরতায় অল্প সময়ের মধ্যে মোসলেমা হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে হত্যার সঙ্গে জড়িত নাহিদ হাসানকে। নাহিত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।