1. dailysurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
রহমত উল্লাহ চৌধুরী : আওয়ামী লীগের তেজস্বী নেতা রেল শ্রমিক লীগের কিংবদন্তী
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বাদশার ব্যাপক গণসংযোগ। সাভার উপজেলার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ জনসহ মোট ১১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ভিজিডি কাড না দেওয়ায় সৈয়দপুর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও পথসভা নৈতীক স্খলন ও সিমাহীন আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদে সৈয়দপুর পৌর মেয়রের অপসারনের দাবীতে \ সংবাদ সম্মেলন টেলিভিশন ক্যামেরা র্জানালিস্ট অ্যাসোসয়িশেন (টিসিএ) নেতৃত্বে   সোহলে ও জুয়েল কলাতিয়া বাজারের যানজট ও ফুটপাত দখল মুক্ত করলেন কলাতিয়া পুলিশ ফাঁড়ি “বাংলাদেশ সূফী ফাউন্ডেশন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে রমজান মাসে যাত্রা শুরু করবে” নীলফামারীতে উৎসবমুখর পরিবেশে চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নীলফামারী টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন এস আই আল মামুন এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে – ভুক্তভোগী সজল

রহমত উল্লাহ চৌধুরী : আওয়ামী লীগের তেজস্বী নেতা রেল শ্রমিক লীগের কিংবদন্তী

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩, ১০.৪৩ পিএম
  • ১৩৩ বার পঠিত

 

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

আওয়ামী লীগ শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি আরম্ভ করে ১৯৬৯ সালে। সে বছরের ১২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে জাতীয় শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা ব্যক্তিগতভাবে তারও আগে থেকে শ্রমিক রাজনীতি করতেন। যেমন জহুর আহমদ চৌধুরী, জামশেদ আহমদ চৌধুরী ও রহমত উল্লাহ চৌধুরী। নিছক ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে তাঁরা শ্রমিক রাজনীতি করতেন। সে রাজনীতির সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির কোন যোগ ছিলো না। সেটা ছিলো অর্থনীতিবাদী আন্দোলনের যুগ। শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁদের জীবনমান উন্নয়নই ছিলো তৎকালীন শ্রমিক রাজনীতির মূল কথা। শ্রমিকদের ওপর মালিকদের শোষণ-নির্যাতনের প্রতিকারের চেষ্টাই ছিলো তাঁদের ট্রেড ইউনিয়নের অন্যতম লক্ষ্য।

জহুর আহমদ চৌধুরী শ্রমিক রাজনীতি এবং জাতীয় রাজনীতি একই সঙ্গে করেছেন। প্রথম জীবনে শ্রমিক রাজনীতির ভাগটা ছিলো বেশি, মধ্য ও শেষ বয়সে জাতীয় রাজনীতিটাই তাঁর জীবনে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। রহমত উল্লাহ চৌধুরী ট্রেড ইউনিয়ন দিয়েই রাজনীতি আরম্ভ করে পরে জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং শেষ জীবনে শ্রমিক রাজনীতিতেই তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে নিবেদিত করেন। তিনি মূলত রেল শ্রমিক নেতা হিসেবে প্রসিদ্ধি ছিলেন। তিনি রেলওয়ে শ্রমিক লীগের দীর্ঘকাল সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

কমিউনিস্টরাই রেলওয়েতে প্রথমে শ্রমিক রাজনীতি আরম্ভ করেন। দেবেন শিকদার, চৌধুরী হারুনুর রশিদ, এমএএস হক-রা ছিলেন রেলওয়ের প্রথম যুগের শ্রমিক নেতা। একাউন্টেন্ট অর্থাথ হোয়াইট কালার শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি আরম্ভ করেছিলেন চৌধুরী হারুনুর রশিদ। তাঁদেরকে নিয়ে যে সংগঠন তিনি গড়ে তোলেন, তিনি নিজেই ছিলেন তার সভাপতি। ষাটের দশকে ধীরে ধীরে রেলওয়েতে ‘রহমতউল্লাহ যুগ’ আরম্ভ হয়। ক্রমশ রেলওয়ের সম্পূর্ণ নেতৃত্ব তাঁর হস্তগত হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত রহমত উল্লাহ চৌধুরী একাই রেলওয়ে শ্রমিক রাজনীতির ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে ওঠেন। তখন তিনি রেলওয়ে শ্রমিক রাজনীতির প্রবাদপুরুষ।

রহমত উল্লাহ চৌধুরী ১৯৩৮ সালের ১২ মে নোয়াখালী জেলার তৎকালীন বেগমগঞ্জ বর্তমান সোনাইমুড়ি থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কেরামত আলী চৌধুরী ও মাতা মেহেরুন্নেসা। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। রহমত উল্লাহ চৌধুরী নোয়াখালী জেলার সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। লাকসাম সরকারি হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯৫২ সালে মেট্রিক পাস করেন, পরীক্ষা হয়েছিলো ১৯৫১ সালে। তার আগেই তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে ঢুকে যান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে তিনি পড়াশুনা সম্পূর্ণ করেন।

ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন রহমতউল্লাহ চৌধুরী। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের শিক্ষা লাভ করেন কৈশোরে এবং তখন থেকেই তিনি প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেন। ১৯৪৮ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ইস্টার্ণ পাকিস্তান রেলওয়ে এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন গঠিত হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের ব্যপক নিপীড়নের মুখে তার কর্মকা- আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে যায়। ১৯৪৯ সালে লাকসাম রেলওয়ে স্টেশনে শ্রমিকদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রমিক নেতা মাহবুবুল হক, যিনি পরে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদক এবং ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। হাজার হাজার মানুষের সেই সমাবেশে মাহবুবুল হক বলেছিলেন “এই পাকিস্তান সরকারের অধীনে শ্রমিকের অধিকার আদায় সম্ভব নয়, আমাদের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে”। সমাবেশে মাহবুবুল হকের বক্তব্যে রহমতউল্লাহ চৌধুরী প্রচ-ভাবে আলোড়িত হন। শ্রমিক রাজনীতির প্রতি তিনি আকর্ষণ অনুভব করেন। সমাবেশের কিছুদিন পর গঠিত হয় ইস্টার্ন পাকিস্তান রেলওয়ে এমপ্লিয়েজ লীগ। দ্রুত পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়েতে এই সংগঠনের ৩০-৩২ টি শাখা গঠিত হয়।

ইস্টার্ন পাকিস্তান রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের লাকসাম শাখার সভাপতি ছিলেন এম এ কাসেম। শ্রমিকদের মধ্যে এই সংগঠনের বিস্তার পাকিস্তান সরকারের রোষ দৃষ্টিতে পড়ে। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সরকারের তোপের মুখে পদত্যাগ করেন এম এ কাসেম। তাঁর পদত্যাগের পর অনেকেই পাকিস্তান সরকারের মামলা, হামলা, চাকরিচ্যুত হবার ভয়ে সভাপতির দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রদর্শন করেন। তখন লাকসাম জংশনে ১০-১২ হাজার কর্মচারি ছিলেন। তাদের সকলের সিদ্ধান্ত মতে পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে এমপ্লিয়েজ লীগের লাকসাম শাখার সভাপতি হন তরুণ রহমতউল্লাহ চৌধুরী। সেই যে প্রথম শ্রমিক নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন রহমতউলাহ চৌধুরী, জীবনে আর কখনো পিছু তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে শ্রমিক সংগঠনের সবগুলি পথ অধিকার করে শেষ পর্যন্ত তিনি তার শীর্ষদেশে আরোহন করেছিলেন।

তখন ভাষা আন্দোলনের সময়। ৪৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিলো ভাষা আন্দোলন। ৫২ সালে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায় উপনীত হয়েছিলো। মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু তখন ফরিদপুর জেলে ছিলেন। ৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার, সালামসহ কয়েকজন ছাত্র নিহত হবার ঘটনায় সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কুমিল্লার টাউন হলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় সংগ্রাম পরিষদের কর্মীদের সাথে সরকার সমর্থক ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে পুলিশ কুমিল্লা সরকারী কলেজের তৎকালীন ভি.পি,জি এস ও রহমত উল্লাহ চৌধুরী সহ ৬০-৭০জনকে থানায় ধরে নিয়ে যায়।

১৯৬০ সালে সরকার শ্রমিক আন্দোলনের ওপর ধর্মঘট কিংবা অবরোধ করা যাবে না এমন কিছু শর্ত আরোপ করে। শ্রমিকদের নায্য পাওনার দাবিতে ১৯৬৩ সালে রেলে ধর্মঘট ডাকা হয়। রহমতউল্লাহ চৌধুরী উক্ত ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন। জেলখানা থেকে যেদিন তিনি মুক্তি পান, সেদিনই চট্টগ্রামে লালদিঘীর ময়দানে ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশ ছিলো। জেল থেকে বেরোতে না বেরোতেই রহমতউল্লাহ চৌধুরী জেলের গেট থেকেই সরাসরি লালদিঘির সমাবেশে চলে যান। সে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত জননেতা এম এ আজিজ ও জহুর আহমেদ চৌধুরী, শহর আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী এন জি মাহমুদ কামাল ও ডা. ছৈয়দুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। ১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাতদিন আগে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলে রহমতউল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সে সময় জাতীয় শ্রমিক লীগের সংগ্রামী সভাপতি রহমতউল্লাহ চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামের একজন বিশিষ্ট রেল কর্মচারি লীগ নেতা। তাঁর গঠনমূলক ভূমিকায় কর্তৃপক্ষ আতংকিত হয়। ধর্মঘট ডাকায় তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় সাময়িকভাবে। এমনকি নিরাপত্তা কর্মচারীরা তাঁকে ঘর থেকেও উচ্ছেদ করে। রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট ইদরিস আলম তাঁর এক স্মৃতিচারণমূলক লেখায় লিখেছেন, “আমার এখনো মনে আছে সেই সময় বদন, বদি, আশরাফ খান ও আমি তাঁর ঘর থেকে নিক্ষেপিত জিনিষপত্র গাছতলায় জড়ো করেছিল। সে এক ভয়ংকর নিষ্ঠুর দিন গিয়েছে তাঁর উপর দিয়ে। চাকরি নেই, আশ্রয় নেই কিন্তু আছে অটুট মনোবল ও সংগ্রামী চেতনা। রেল শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ডা. ছৈয়দুর রহমানের বরাবর ঘনিষ্ঠতা ছিলো। তিনি তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে বিবেচিত হতেন। রহমতউল্লাহ চৌধুরী লায়ন সিনেমার উত্তরের অট্টালিকায় অবস্থিত হোমল্যান্ড ইন্সিওরেন্স কোম্পানিতে যোগ দেন। আমি এজেন্সি গ্রহণ করি এবং জাফরের বাপের অর্থাৎ খোন্দকার জাকেরের ইন্সিওরেন্সও করি।”

১৯৬৬ সালে শহর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে (২৬.২.৬৬ ইংরেজি) রহমতউল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই সময়ে শ্রম সম্পাদকের পদ ছিলো না। তবে সহকারী সম্পাদকের পদ ছিলো। ৬৬-৬৭ সাল পর্যন্ত রহমতউল্লাহ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন, কারণ এমএ মান্নান তখন পর্যন্ত জেলে ছিলেন। রহমতউল্লাহ চৌধুরীর পর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন বিধান কৃষ্ণ সেন।

এদিকে ৬৯-এর গণআন্দোলনে পাকিস্তান সরকার কাবু হয়ে যায়। যাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, হাইকোর্টের রায়ে তারা চাকরি ফিরে পান। রহমতউল্লাহ চৌধুরীও সেসময় তাঁর চাকরি ফিরে পেয়েছিলেন। তখন তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় ইস্টার্ণ পাকিস্তান রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। চাকরি ফিরে পাবার পর বঙ্গবন্ধু রহমতউল্লাহ চৌধুরীকে রেলওয়ে শ্রমিক লীগকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব দেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ লালদীঘির ময়দানে চট্টগ্রাম শহর ‘জয় বাংলা বাহিনীর’ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে রহমতউল্লাহ চৌধুরী অংশ নেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তাঁর বাসায় স্থানীয় মাইকে তিনি শুনতে পান বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ২৬ মার্চ সকালে রহমত উল্লাহ চৌধুরী তাঁর গ্রামের বাড়িতে তাঁর পরিবার নিয়ে চলে যান। নোয়াখালীতে কিছুদিন থেকে রহমতউল্লাহ চৌধুরী রিটায়ার্ড ইপিআর, আনসার ও পুলিশ সদস্যদের একত্রিত করে নোয়াখালীর ডিসি’র সাথে সাক্ষাৎ করে কিছু রাইফেল ও এস এম জি অস্ত্র সংগ্রহ করে যুদ্ধে যান। তখনো পাকিস্তানিরা নোয়াখালী আসেনি। কুমিল্লা হাইস্কুলের মাঠে পাকিস্তানিদের সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পরাজিত হন। এরপর পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনারা। রহমতউল্লাহ চৌধুরী ছোট্টাখোলা দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিণা ক্যাম্পে যান। সেখানে ছিলো ১নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ও ইয়ুথ ক্যাম্প। তিনি এম এ হান্নান ও মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সঙ্গে কাজ করেন এবং বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হলে ১৮ ডিসেম্বর রহমতউল্লাহ চৌধুরী ভারত থেকে মুক্ত স্বদেশে ফিরে আসেন।

১৯৭৫-এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে নিশ্চুপ করে দেওয়ার এক অপচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু রহমতউল্লাহ চৌধুরী বরাবরই ছিলেন একজন সাহসী যোদ্ধা। তিনি সে অবস্থায়ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করতে থাকেন।

৭৫-এর পরে রহমতউল্লাহ চৌধুরীকে সভাপতি এবং হাবিবুর রহমান সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় শ্রমিক লীগ গঠন করা হয়। তিনি শ্রমিকদের আধিকার আদায়ে পুনরায় কাজ শুরু করেন। ১৯৮২ সালে রহমতউল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ পাঁচ দফা দাবিতে সারাদেশে রেলপথ, রাজপথ অবরোধ করে আন্দোলন সংগ্রাম করে। শ্রমিকদের নিয়ে রহমতউল্লাহ চৌধুরীর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পাঁচ দফা দাবির পক্ষে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা রহমতউল্লাহ চৌধুরীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত করেন। তিনি পরপর কয়েকবার এ দায়িত্ব পান এবং নিষ্ঠার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন।

দলকে ভালোবেসে শ্রমিকদের ভালোবেসে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, তা আজো মানুষ স্মরণ করে পরম শ্রদ্ধায়। বলা হয়ে থাকে রহমতউল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ ঐক্যবদ্ধ ছিল।

২০০৪ সালের ১৭ মে শ্রমিক শ্রেণীর এই মহান নেতা স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে, অজ¯্র শুভাকাক্সক্ষী ও দলের কর্মীদের শোক সাগরে ভাসিয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

৬৯ সালে শ্রমিক লীগ গঠিত হলে এম এ হান্নান চট্টগ্রাম শ্রমিক লীগ গঠনে তৎপর হন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের বৃহৎ সংগঠন রেলওয়ে কর্মচারী লীগে রহমতউল্লাহ চৌধুরী তাঁর ত্যাগ ও বহুমুখী অবদানের জন্য আওয়ামী লীগপন্থী নেতা হিসেবে স্বীকৃত হন। ফলে, ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের নগর কমিটিতে তিনি রইলেন না। তিনি রেলওয়ে শ্রম সংগঠনেই পূর্ণ আত্মনিয়োগ করলেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে ছয়দফা-পন্থী ও বঙ্গবন্ধুর শক্তিশালী শ্রম সংগঠনে পরিণত করতে সক্ষম হলেন।

এই বিশাল প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ সহজ ছিলো না। নিছক স্লোগান দিয়ে শ্রম আন্দোলন করা তখন কঠিন ছিলো। নেতার যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, ত্যাগ ও তাঁর প্রজ্ঞাও বিবেচনা করা হতো। এইসব দিক দিয়ে বিবেচনা করলে রহমতউল্লাহ চৌধুরী ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ সংগঠক ও দুর্দান্ত শ্রমিক নেতা। ভয়ডর বলে তাঁর কিছু ছিলো না।

রহমতউল্লাহ চৌধুরী ছিলেন অতিশয় তেজস্বী শ্রমিক নেতা। তাঁর বিস্তর লেখাপড়া ছিলো। তিনি একাধারে ছিলেন একজন ভালো বক্তা, সাহসী নেতা, ত্যাগী ও আদর্শবান রাজনীতিবিদ এবং দক্ষ সংগঠক। দেশের ক্রান্তিকালে নিজের সৃজনশীল কাজের মাধ্যেমে তিনি দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি ও সংকটের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতেন।

মানুষকে নিয়ে রহমতউল্লাহ চৌধুরীর অনেক স্বপ্ন ছিল। পিতার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে রহমতউল্লাহ চৌধুরীর সন্তানেরা “জননেতা রহমতউল্লাহ চৌধুরী” ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে।

 

লেখক:

মুক্তিযোদ্ধা, জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, গবেষক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রধান সম্পাদক দৈনিক দেশ বর্তমান।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Comments are closed.

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews