আশ্চর্য হওয়ারই কথা! গাছের প্রতিযোগিতা। তাও আবার সেরা হওয়ার লড়াইয়ে বিশ্বের নানা দেশের গাছেরা নির্বাচিত হয়। না এখানে অন্যান্য প্রতিযোগিতার মতো প্রতিযোগিতে স্বশরীরে উপস্থিত হতে হয় না। কারণ গাছকে তো কেটে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়া সম্ভব না। তাই এই প্রতিযোগিতা হয় অনলাইনে।
২০১১ সাল থেকে সেরা গাছ প্রতিযোগিতা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে আয়োজন করা হয়। এনভায়রনমেন্টাল পার্টনারশিপ অ্যাসোসিয়েশন (ইপিও) এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে। প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপীয় ভূমি মালিক সমিতি এবং ইউরোপীয় কমিশন দ্বারা সমর্থিত। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ নিজেদের দেশে ভোটের মাধ্যমে একটি গাছ নির্বাচন করে। পরে সব দেশের মনোনীত গাছের মধ্য থেকে অনলাইন ভোটের মাধ্যমে একটি সেরা গাছ নির্বাচন করা হয়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই অনলাইন ভোট গ্রহণ হয়। ব্রসেলসে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে মার্চ মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী গাছের নাম ঘোষণা করা হয়।
চেক প্রজাতন্ত্রের এনভায়রনমেন্টাল পার্টনারশিপ ফাউন্ডেশন বেশ কয়েক বছর সেরা গাছ নির্বাচনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। ইপিও এর থেকেই উদ্ভুদ্ধ হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জুড়ে প্রতিযোগিতাটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত কিংবা মনোনীত গাছ গুলো নিয়ে অসাধারণ গল্প প্রচলিত আছে। তেমনই কয়েকটি গাছ সম্পর্কে আজকের লেখা।
গুবেক লিন্ডেন, ক্রোয়েশিয়া
প্রাচীন এই গাছটি ১৫৭৩ সালে সংঘটিত মহাকৃষক বিদ্রোহের একটি জীবন্ত সাক্ষী। জনশ্রুতি অনুসারে, কৃষক নেতা মাতিজা গুবেক এই গছটির নিচে নিজের সমর্থকদের নিয়ে জড় হয়েছিলেন। সেখান থেকেই শ্রেণিবদ্ধ অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই লিন্ডেন গাছটির বয়স এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কারণে ১৯৫৭ সালে সুরক্ষিত প্রাকৃতিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে গাছটির উচ্চতা ৯ মিটার। এর কাণ্ডের ব্যাস ৪ দশমিক ৭ মিটার। লাইম ট্রি অব লিবার্টি, চেক প্রজাতন্ত্র
১৯১৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। সেসময় জনগণ ভেলকে অপাটোভিসে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির প্রতীক হিসেবে ১৬টি লাইম ট্রি রোপণ করেছিল। এই গাছগুলোর মধ্যে একটি রোপণ করা হয়েছিল জাডভোরিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর স্থানীয় একজন দেশপ্রেমিক এবং শান্তিবাদী ব্যক্তি জান পোসপিল এটি রোপণ করেছিলেন। ১৯১৮ সালে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে রোপণ করা ১৬টি গাছের মধ্যে জান পোসপিলের রোপণ করা গাছটি এখনো জীবিত আছে। গাছটি পাঁচ রাস্তার মোড়ে অবস্থিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জার্মান এবং রেড আর্মি উভয় বাহিনীই এই গাছের চারপাশের রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই লাইম ট্রিটি ধীরে ধীরে চেক প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতা এবং সহনশীলতার প্রতীক হয়ে ওঠে।রাউদন ক্যাসেল লাইম, লিথুনিয়া
লিথুনিয়ার রাউদন দুর্গের পাশের বাগানে একটি লাইম ট্রি আছে। গাছটির তিন মিটার উচ্চতায় দুটি কাণ্ডের মধ্যে একটি ধাতব রড আছে। জনশ্রুতি প্রচলিত আছে সাতজন ভূমিদাসকে এই রডের সঙ্গে বেঁধে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছিল। এই ভূমিদাসদের কষ্ট অনুধাবন করে সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। এর প্রতিটি কাণ্ড থেকে দুটি বা ততোধিক অংশে বিভক্ত হয়ে প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়েছে। সেগুলো দেখলে মনে হয় যন্ত্রণাকাতর মানুষের হাতের মতো।
দ্য বার্ড ট্রি, ঘিসুনাকিয়া, ফ্রান্স
দ্য বার্ড ট্রি মূলত কর্সিকান কর্ক ওক গাছ। গাছটির আকৃতি দেখলে মনে হবে শিকারি পাখি ডানা মেলে আছে। গাছের কিছু অংশ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ডানার মতো রূপ ধারণ করেছে। ধারণা করা হয় কোনো অগ্নিকাণ্ডের ফলে গাছটি এমন আকৃতি ধারণ করেছে। গাছটি কাছে যাওয়া কেউ কেউ দাবি করেছেন, এর কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষার অনুভূতি আসে। আর গাছটি থেকে দূরে চলে গেলে রহস্যজনকভাবে সে অনুভূতি চলে যায়। দ্য অ্যাব্রামতেসভো ওক, মস্কো
এই ওক গাছটির অবস্থান অ্যাব্রামতেসভো স্টেট মিউজিয়ামের সংরক্ষিত অঞ্চলে। গাছটির বয়স প্রায় আড়াই’শ বছর। রাশিয়ার শিল্প সাহিত্যের সঙ্গে গাছটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিখ্যাত চিত্র শিল্পীরাও গাছটির কাছে চিত্রকর্ম সম্পাদন করেছেন।সূত্র: অ্যামিউজিংপ্লানেটস
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy