কাজী আনিছুর রহমান,রাণীনগর (নওগাঁ) :
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা আমাদের এ বাংলাদেশের একেকটি ঋতু একেক রূপে ও রঙ নিয়ে হাজির হয়। তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে সাদা ফুলের বর্ণিল সাজে সেজেছে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সজিনা গাছগুলো। বর্তমানে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বাড়ির আনাচে-কানাচে ও রাস্তার পাশে অযতেœ বেড়ে ওঠা সজিনার গাছগুলো থোকায় থোকায় সাদা ফুলে ভরে উঠেছে। সজিনা ফুলের মিষ্টি গন্ধে মৌ মৌ করছে চারপাশ। সজিনা গাছের ডালের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফুল আর ফুল। পাতাশুন্য ডালে সজিনা ফুল দেখে বিমোহিত হন অনেকেই। এই সজিনা গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হন বাড়ির গৃহিনীরা। তারা সজিনা মৌসুমে সজিনা বিক্রি করে হাতের খরচ হিসেবে অর্থ সঞ্চয় করেন।
এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজিনার পুষ্টিগুন অনেক বেশি। এ গাছের অনেক গুণ থাকায়, এ গাছকে জাদুর গাছ বলা হয়। কাঁচা সবুজ পাতা রান্না করে, ভর্তা করে ও বড়া ভেজে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। ফল সবজির মতো রান্না করে খাওয়া যায়, ফল পাকলে সে সব ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫ হাজার ৯শ’সজিনা গাছ আছে। প্রতি বাড়িতে কমপক্ষে ৩-৪ টি গাছ রয়েছে। এসব গাছ বাড়ির পাশে ও ক্ষেতের আইলে লাগানো হয়। গাছে ফলনও বেশি হয়। যতœ ছাড়াই এসব গাছ বেড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে ২টি জাত আছে সজিনা ও নজিনা। সজিনার ফুল আসে জানুয়ারিতে আর নজিনার ফুল আসে মার্চ মাস থেকে। তবে সব ফুল থেকে ফল হয় না। একটি থোকায় সর্বাধিক ১৫০টি মত ফুল ধরে। ফুল ৪০ সেমি. থেকে ৮০ সেমি. পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল ফুটার ২ মাস পর ফল তোলা যায়। একটি বড় গাছে ৪০০টি থেকে ৫০০টি ফলটি ধরে। প্রতিটি ফলে ৩০-৪০টি বীজ হয়। দেশে সাধারণত ডাল কেটে রোপণ করলে সজিনা গাছ জন্মে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ঠা-া-গরম, লবণ, খরা সহিষ্ণু পরিবেশে এই গাছ বাংলাদেশের সর্বত্রই জন্ম নেয়। এ উপজেলার মাটিতে সজিনা আবাদ ভাল হচ্ছে। উপজেলার প্রতি বাড়িতে কমবেশি ৩-৪টি করে সজিনা গাছ আছে। এ বছর সজিনা গাছে ব্যাপক ফুল ধরেছে। বড় ধরনের দুর্যোগ না হলে সজিনার বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে উৎপাদিত সজিনা ঢাকাসহ পুরো দেশে চালান হয়। দিন দিন পরিত্যক্ত জায়গায় সজিনা গাছ তৈরির আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই উপজেলায় সজিনা গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃষকরা সজনের উচ্চ মূল্য পাওয়ায় তারা লাভবানও হচ্ছে।”