1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
রাতের অভিযানে নারীদেরও ধরে নিয়ে যেত ওসি প্রদীপ
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কসবায় বিএসএফের এলোপাথাড়ি গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত! চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৩ হাজার পিস ইয়াবা সহ আটক ১ঃ মাদক পরিবহনে নিয়োজিত মোটর সাইকল জব্দ ট্রেনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে আন্ডাররেটেড ঘাতকের রহস্য এবং “হ্যাবিচুয়াল কনফিডেন্স” চট্টগ্রামে ১৪ পিছ বিদেশী স্বর্নের বার সহ আটক ১ সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ছেড়ে দিয়েছে আদালত আওয়ামীলিগের সময়ে আওয়ামীলিগের নেতা , বিএনপির সময়ে বিএনপির নেতা সেজে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা ! নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এলজিইডি কুমিল্লার মতবিনিময় কলেজ ছাত্র আব্দুল আলীম হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ! সাভারে বিরুলিয়ায় নিহত নারী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা : স্বামী গ্রেফতার । ফেসবুকে মানহানিকর লেখা প্রচারের অভিযোগ এনে এক কোটি টাকার মানহানি এবং হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রাতের অভিযানে নারীদেরও ধরে নিয়ে যেত ওসি প্রদীপ

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০, ১০.১৯ এএম
  • ২৫২ বার পঠিত

তৌহিদ আহমেদ রেজা:  টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল এলাকাবাসী। ইয়াবাপ্রবণ এলাকা হওয়ায়, মাদকবিরোধী অভিযানের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে করা হতো হয়রানি। শুধু তাই নয়, এসব থেকে বাদ যায়নি নারীরাও। আসামিদের পরিবারের নিরপরাধ নারী সদস্য ও আসামি পরিবারের বাইরে সাধারণ নারীদের থানায় তুলে এনে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, নারীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। সিনহা হত্যা ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক-এক করে বেরিয়ে আসছে তার এমন নানা অপকর্মের তথ্য। তবে এখনো নির্যাতিত নারীরা মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। সরেজমিনে সাংবাদিকরা অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছেন। কেউ কেউ মানহানির কথা চিন্তা করে যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো গোপন রাখছে। তবে এলাকাবাসী বলছেন, গত বাইশ মাসে শতাধিক নারীকে থানায় তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন তিনি।
তারা বলছেন, ফিল্মস্টাইলে চলাফেরা করতেন ওসি প্রদীপ। গত বছরের ঘটনা। রাত দু’টা। নাজিরপাড়ায় একটি বাড়িতে এসে হানা দেন ওসি প্রদীপ। সেইদিন রাতে ওই বাড়ির তিন মহিলাকে তুলে নিয়ে যান তিনি। ঘুম থেকে তুলে থানায় নিয়ে যান ওই পরিবারের দুই পুত্রবধূকে। এরপর তিন নারীকে ত্রিশ হাজার ইয়াবা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখান তিনি। এর আগে তাদের গায়ে হাত তোলাসহ শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ নূর বেগম। তিনি বলেন, গত বছরর একদিন রাত দুইটায় ওসি প্রদীপ আমাদের বাড়িতে আসে তার পুলিশ নিয়ে। এরপর আমার ছেলে জিয়াউর রহমানকে খুঁজে। আমি তাদেরকে খোঁজার কারণ জানতে চাইলে ওসি তার হাতের অস্ত্রটি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। পরে আমি আর কিছু বলতে পারবো না। একদিন পর দেখি আমি সদর হাসপাতালে। আমাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ নিজে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। ওই নারীর ছোট ছেলে, প্রবাসী কামাল হোসেন বলেন, আমার বড় ভাই লবণ ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানকে খুঁজতে আসে পুলিশ। তখন আমার ভাই ব্যবসার কাজে গোপালগঞ্জে ছিল। আমার ভাইকে না পেয়ে আমার মা ও আমার দুই ভাবীকে তারা ধরে নিয়ে যায়। আমার দুই ভাবীকে তারা অশ্লীল নানান ইঙ্গিত দেয়। এতে রাজি না হওয়ার তারা আমাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে এসআই সঞ্জিতের মাধ্যমে। এতো টাকা তখন আমাদের কাছে ছিল না। পরে ছয় লাখ টাকা ম্যানেজ করে দিলেও তারা আমার ভাবী ও মাকে ৩০ হাজার ইয়াবা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে। এখানেই থেমে থাকেনি ওসি প্রদীপের কুকর্ম। তাদের পরিবারের বড় ছেলে জিয়াউর রহমানকে গোপালগঞ্জ থেকে টেকনাফে নিয়ে কথিত ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ মিলে। কামাল হোসেন বলেন, এখান থেকেও ক্রসফায়ার না দেয়ার কথা বলে পনেরো লাখ টাকা নিয়ে যায়। তারপরও ক্রসফায়ার দেন ওসি প্রদীপ। আমাদের বাড়িটি তারা ভেঙেচুরে সব লুটপাট করে নিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়েও মিলে এমন দৃশ্য। তবে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় মামলা ছিল। কিন্তু নারীদের কোনো দোষ ছিল না। তবে পরিবারসূত্র অভিযোগ করেন, ওসি ইচ্ছা করেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়েছে ঘুষ নেয়ার জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষাও হলো না তার।

এদিকে চলতি বছরের ২৬শে জুলাইয়ের ঘটনা। টেকনাফের মণ্ডলপাড়ায় ইউনুসের স্ত্রী হাসিনা আক্তারকে রাতের বেলায় নির্যাতন করে গ্রেপ্তার করার অভিযোগ উঠেছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সরজমিন গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে জায়গা দেয়ার অভিযোগে তাকে আটক করেন টেকনাফ থানা পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, তখন সেখানে কোনো নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ছিল না। পুরুষ পুলিশ সদস্যরাই তাকে নানানভাবে শারীরিক নির্যাতন করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে এক হাজার ইয়াবা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এবং তার বাড়িটি পুলিশ আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। একই ঘটনায় পাশের গ্রাম মৌলভীপাড়ার আরো দুইজনকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের মধ্যে মিনি টমটম চালক আব্দুল মোত্তালেব ও তার বোন রহিমা আক্তারকে সাক্ষী দেয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। একই সঙ্গে তাদের বাড়িটি ভাঙচুর চালানো হয়। কিন্তু রহিমা খাতুন পুলিশের সঙ্গে না যেতে চাইলে মরিচের গুঁড়া তার নাকে-মুখে ছিটিয়ে দেয়। পরে ওই নারীকে অসুস্থ অবস্থায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এই অভিযানে ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিল পুলিশ সদস্য সাগর, সঞ্জিত দত্ত ও রুবেল। পরে আব্দুল মোত্তালেবের শ্বশুর নূরুল ইসলাম থানার দালাল মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে তিনলাখ টাকা পুলিশ সদস্য সাগরের হাতে দিলেও ছাড়া পাননি কেউ। উল্টো দুইজনকে দুই হাজার ইয়াবা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখায় টেকনাফ থানা পুলিশ।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই এলাকার নারীদেরকে শুধু তুলে নিয়ে যাওয়াই নয়, যখন-তখন তাদেরকে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে টেকনাফ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, অনেক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগও আছে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে। তেমনি একজন টেকনাফ পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড অলিয়াবাদ গ্রামের একজন নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছে ওসি’র বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ওই এলকার একজন বাসিন্দাকে ওসি’র লোকজন টাকা দাবি করে নিয়মিত হুককি-ধমকি দিতো। টাকা না দেয়ার কারণে তিন মাস আগে ওসি নিজে তাদের বাড়ি ঘর ভেঙে দেন। ওই দিন, বাড়ির মালিকের ছেলের স্ত্রীর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন ওসি। সেই সময় তিনি পরিবারের লোকজনদের সরিয়ে দেন। অভিযোগ ওঠে ওই নারীকে ওসি প্রদীপ শ্লীতহানীর চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্লীলতাহানী না করতে পেরে তাকে মারধর ও লাথি দেন তিনি।

নাজির পাড়ার বাসিন্দা দুদু মিয়াকে হ্নীলা থেকে আটক করে কথিত ক্রসফায়ার দেন ওসি প্রদীপ। গত বছরের রমজান মাসে তাকে আটক করে বিশ লাখ টাকা দাবি করেন ওসি’র ডান হাত বলে পরিচিতি এএসআই সঞ্জিত। রাতের মধ্যে টাকা জোগাড় করলেও রাতেই তাকে ক্রসফায়ার দেয়া হয়। দুদু মিয়ার স্ত্রী নাসিমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমি সঞ্জিতের পায়ে পড়েছিলাম। তখন সে আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছে। ওসি’র কাছে গিয়েছিলাম। উল্টো আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। এর আগে ৫০ লাখ টাকা চেয়েছিল পুলিশ। পরে দশ লাখ টাকায় রাজি হয়। কিন্তু একদিনের মধ্যেই গরু মহিষ বিক্রি করে তিন লাখ টাকা জোগাড় করে দিলেও রাতের মধ্যেই মেরে ফেলে আমার স্বামীকে। স্বামীকে মারার পর ওসি’র লোকজন বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। বলেছে এসব বিষয়ে কথা বললে, আমাদেরও একই অবস্থা হবে।

এখানেই থেমে থাকেনি ওসি’র অপকর্ম। দুদু মিয়াকে ক্রসফায়ার দিয়ে একই মামলায় আসামি করা হয় তার বড় ভাই স্কুলশিক্ষক সৈয়দ আলম ও ছোটভাই প্রবাসী সোনা মিয়াকে। একই মামলায় গত বিশদিন ধরে জেল খাটছেন সোনা মিয়া। তিনি বলেন, কি কারণে আমার ভাইকে ক্রসফায়ার দিলো আজও তা জানতে পারলাম না। উল্টো আমাকে আসামি করে দিলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews