বয়স ১৭কিংবা ১৮। পড়ে একাদশ শ্রেণীতে। এসএসসি পরীক্ষার পর মামার বাড়িতে এসে কলেজে ভর্তি হয়। কলেজে ভর্তি হয়ে প্রথমে ২-৩ মাস ক্লাস করেনি কলেজে যায়নি কারণ তখন তার কোন বন্ধু ছিল না। ধীরে ধীরে দুই তিনজন বন্ধু পায় তাদের সাথে মিশে কলেজে যায়। ভালোই চলছিল তার কলেজ জীবন। বার্ষিক পরীক্ষায় সফলভাবে দ্বাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। বাড়ে কিছু বন্ধু, দিন যায় ক্লাস হয় খুব আনন্দেই চলছে কলেজ। বন্ধুদের সাথে কোচিং করে দুই তিনটা বিষয়ের উপর। হঠাৎ করে তার উপর পরে এক কালো শকুনের ছায়া। শকুনটি স্থানীয় এক নামের ছাত্রনেতা কাজের বড়মাপের ইভটিজার। তার সম্পর্কে এলাকার সকল মেয়েরই নানা অভিযোগ। সে একদিন লাজুক ভীতু রাত্রিকে প্রেম প্রস্তাব দেয়। রাত্রি তো ভয়ে তরতর করে কাঁপছে তার এক সাহসী বান্ধবী ওই ছেলেকে অনেক বুঝালো। ছেলেটি ছিল তাদের চেয়ে ৬-৭ বছরের সিনিয়র এবং গ্রাম সম্পর্কিত বিধর্মী ভাই । রাত্রির বান্ধবী ওই ছেলেকে বুঝানো যে আপনি তো আমাদের চেয়ে অনেক বড় আমাদের ভাই আরো অনেক কিছু। কিন্তু ওই ছেলে তো কিছুতেই বুঝে না সে তাদের পেছনে বেহায়ার মত লেগে গেল। রাত্রির কলেজে ক্লাসের ওই ছেলেটা বিরক্ত করে। রাত্রির কলেজ হয়ে ওঠে অসহ্য যন্ত্রণা দায়ক। সে ক্লাস থেকে বের হতে পারে না নিচে নেমে পানিও খেতে পারে না। এমনকি রাস্তায় চলাচলের সময় ও ওই ছেলে রাত্রিকে বিরক্ত করতো। তাই বাধ্য হয়ে রাত্রি একথা তার মা বাবাকে জানায়। কিন্তু রাত্রির মা-বাবা ও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি সম্মানের কথা চিন্তা করে করে। যদি এ বিষয়ে থানা পুলিশ বা অন্য কিছু করে তাহলে উনাদের মেয়ের সম্মান নষ্ট হবে এইভাবে শত কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য হন। এদিকে রাত্রি স্বপ্ন ছিল সে একজন শিক্ষিকা হবে বিনা পয়সায় গ্রামের সকল অশিক্ষিতদের যত্নসহকারে লেখাপড়া শিখিয়ে সুন্দর একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলবে। এক সময় ওই বকাটে উৎপাত অনেক বেশি বেড়ে গেলে রাত্রির পরিবার বাধ্য হয়ে তার পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। তারপরও ওই বকাটে তাকে যেখানে পায় সেখানেই বিরক্ত করে। বাধ্য হয়ে রাত্রির পিতা-মাতা একজন প্রবাসীর কাছে রাত্রিকে বিয়ে দিয়ে দেন। রাত্রি বাবা অনেক ধুমধাম করে বিয়ে দেন। বিয়ের এক সপ্তাহ পর রাত্রির স্বামী চলে যায় প্রবাসে। রাত্রি ছিল মা-বাবার আদরের মেয়ে সে কোনদিন কোন কাজ করেনি।শশুর বাড়িতে নানা কাজে সে ছিল দুর্বল তাই শাশুড়ি দিত বকাও গঞ্জনা। নানা কাজ করতে করতে একসময় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার শশুর বাজার থেকে সামান্য ঔষধ এনে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে কি তার অসুখ সারে। তার অসুস্থতা দিন দিন বাড়তে থাকে। একদিন রাত্রি তার শ্বাশুড়িকে বললো তার মা বাবাকে দেখতে। তার শাশুড়ি নানা কথা বলে তাদের বাড়িতে খবর দিল। রাত্রির বাবা রাত্রির অসুস্থতার কথা শুনে কান্না মাখা কন্ঠে রাত্রির মাকে বলল তাদের মেয়ের অসুস্থতার কথা। রাত্রির পিতা যখন নিয়ে জানতে পারলেন রাত্রির জটিল অসুখের কথা। তিনি রাত্রির স্বামীর সাথে যোগাযোগ করলে সে বলল তার কিছু করার নাই সবই তার মা-বাবা জানে। রাত্রির বাবা তার শশুরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বললেন আমি চিকিৎসা করিয়েছি আর পারব না। রাতের বাবা শহরের এক বড় ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন। শহরের ডাক্তার সাহেব বললেন রাত্রিকে শহরে নিয়ে যেতে এবং মোটা অংকের টাকাও লাগবে। তাই রাত্রির বাবা উনার সকল সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তাদের আদরের মেয়ের জন্য। একেবারে আবাসস্থল ভিটেও বিক্রি করে দেন। রাতে যখন রাত্রির মা-বাবা সম্পত্তি বিক্রির টাকা হাতে পেয়ে ছিল তখন উনারা চোখের পানি ছেড়ে বলছিল আমাদের মেয়েটা বেঁচে থাকলে সুখে থাকলে আমাদের আর কোন চাওয়া নেই। উনারা সিদ্ধান্ত নেন আগামীকাল সকালে উনারা এর শ্বশুর বাড়ি যাবেন। পরদিন সকালে উনারা মেয়েকে দেখতে রওনা হল। এদিকে রাত্রি অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে পারছে না পাশের বাড়ির এক জা তার এই অবস্থা দেখে রাত্রির শশুর কে বলল একজন চিকিৎসক ডেকে আনতে এবং তার চিকিৎসা করাতে। শাশুড়ি বলতে লাগল নবাবের ঘরের মেয়ে সামান্য কাজ তার তনুতে সয্য হয় না আমার ছেলেটা যে এত কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে পাঠাচ্ছে তার কোন হিসেব আছে। রাত্রি স্বামী ও তার কোন খোঁজ খবর নেয় না। ঐদিন দুপুরবেলা রাত্রির অবস্থা খুব খারাপ তখন তার শশুর একজন ডাক্তার ডেকে আনতে গেলেন। ততক্ষনে রাত্রি পরকালে পারি জমিয়েছে। ডাক্তার এসে চলে গেল। এসময় রাত্রির পিতা-মাতা হাজির উনারা শুধু দেখতে পেল তাদের আদরের মেয়ের মরদেহ উনারা কান্না করতে পারছেন না। চোখের সামনে ভেসে উঠছে রাত্রের শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন গুলো তার একটি বিদ্যালয় হবে সেখানে গরীব অসহায় এতিম ছেলে মেয়েরা বিনাপয়সায় লেখাপড়া করবে সেখানে তাদের একবেলা ভালো খাবারের ব্যবস্থা থাকবে তাদের নিয়ে সে নানা স্থানে ঘুরতে যাবে এই স্বপ্নগুলো উনাদের সামনে ভাসছে। আর অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন তাদের মৃত মেয়ের মুখের দিকে।