শহিদুল ইসলাম সোহেল নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নিয়ামুল হক নাইম। বাড়ি ঢাকার সাভারে। ছোটবেলা থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তবুও লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ তার। নিজের ইচ্ছে শক্তির জোরে বেশ ভালোভাবেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। ২০১৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় আনোয়ারা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে জিপিএ- ৪.১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। পরে ২০২০ সালে আমিন মডেল টাউন কলেজ থেকে জিপিএ-৪.২৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। এখন স্বপ্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার।
স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আসন্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বসবেন তিনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার নিয়মতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ প্রায় অনিশ্চিত। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রুতিলেখক না পাওয়া।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য শ্রুতিলেখক নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। সেগুলো হলো- শ্রুতিলেখক অনুর্ধ্ব দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত হতে হবে; স্কুল প্রধান শিক্ষক কর্তৃক শ্রুতিলেখক নিয়োগ মর্মে প্রত্যয়নপত্র পত্র দিতে হবে; স্কুল আইডি কার্ডের স্ক্যান কপি জমা দিতে হবে।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সব শর্ত মেনে নাইমের জন্য শ্রুতিলেখক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু নাইম নয়, এই সমস্যার কারণে টাঙ্গাইলের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী উৎস সিদ্দিকী, রাজবাড়ির সূবর্ণা রানী দাসেরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চয়তায়।
নাইম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সব নিয়ম মেনে শ্রুতিলেখক ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দূরত্ব আর করোনা মহামারির কারণে কোনো অভিভাবক তাদের সন্তানকে রাজশাহীতে পাঠাতে রাজি হচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত কোনো শ্রুতিলেখক পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি। এক প্রকার অনিশ্চিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ। তবে কি আমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবো না?
ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সংগঠন পিডিএফ’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সমস্যা সমাধানে সংগঠনটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা, কলা অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তাদ্বয়, আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পায়নি। ফলে এক প্রকার অনিশ্চিতায় তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ।
রাবি পিডিএফর সভাপতি মুজাহিদ হোসেন বাবু বলেন, তিনজন শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতরে ঘুরে কোনো কাজ হয়নি। যখন প্রধানমন্ত্রী তনয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ডিজেবল ফ্রেন্ডলি সোসাইটি গঠনের জন্য বিশ্বব্যাপী কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে বাংলাদেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম আইন-কানুন সত্যিই দুঃখজনক। রাবি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নিয়ম পরিবর্তন করে প্রতিবন্ধী সহায়ক নিয়ম প্রবর্তন করুক। কলেজ ছাত্রদের শ্রুতিলেখক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ দিয়ে এবং প্রতিবন্ধীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠনে ভূমিকা রাখবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারেরর পরিচালক অধ্যাপক বাবুল ইসলাম বলেন, ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যে নিয়ম রয়েছে তা মেনেই শ্রুতিলেখক নিতে হবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীকে। এখন নিয়ম পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আগামীতে যাতে শিক্ষার্থীরা এমন সমস্যার সম্মুখীন না হয়, সেজন্য নিয়ম শিথিলের বিষয়ে আলোচনা করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় বিষয়ে পরীক্ষা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষার্থী যে ইউনিটের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে সে ইউনিটভুক্ত অনুষদ ডিনদের সঙ্গে কথা বললে সমস্যার সমাধান হতে পারে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy