আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রিং আইডির সাইফুলের জামিন মেলেনি
রাজধানীর ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মমালায় রিমান্ড শেষে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালত এই আদেশ দেন।
এদিন আসামি সাইফুলের পক্ষে তার আইনজীবী জামিন শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা।
এসময় আসামি পক্ষে তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তবে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে জামিন শুনানির জন্য ১১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
গত ১ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গত ২ অক্টোবর আসামি সাইফুলকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী সিআইডির উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা। শুনানি শেষে আদালত তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিং আইডিতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন এমন অভিযোগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী আঁখি বেগম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং কন্ট্রোল অ্যাক্ট- এর আওতায় মামলা করেন। শিডিউলভুক্ত হওয়ায় এ মামলাটি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- শরিফুল ইসলাম, ইরিন ইসলাম, সালাহউদ্দিন, আহসান হাবিব, রফিকুল ইসলাম, নাজমুল হাসান, আব্দুস সামাদ, রেদোয়ান রহমান ও রাহুল।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, একটি সংঘবদ্ধ ডিজিটাল প্রতারক চক্র রিং আইডির আড়ালে কয়েন বিক্রি করে ইলেক্ট্রনিক লেনদেনের সাহায্যে অর্থ সংগ্রহ করতো। অভিযুক্তরা সহজে আয়ের পথ হিসেবে মানুষকে রিং-আইডি’তে বিনিয়োগে প্ররোচিত করেছে। ২০১৯ সালে বাদী আঁখি বেগম, তার দুই ভাই ও এক ভাগ্নে সর্বমোট ৮৬ হাজার টাকা কয়েক ধাপে সেখানে বিনিয়োগ করেন। সবার মধ্যে আঁখির এক ভাইই একবার কেবল সামান্য অংকের কিছু টাকা উত্তোলন করতে পেরেছিল। কিন্তু, এরপর আর কোন লাভও পাননি, পাননি বিনিয়োগের মূল অঙ্ক ফেরত।
এর আগে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) রিং আইডির ব্যাংক একাউন্টের বিবরণ চেয়েছে। রিং আইডি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড ও রিং আইডি বিডি লিমিটেডের সঙ্গে সম্পর্কিত কোন একাউন্ট থাকলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সে তথ্য প্রদানেও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট। রিং-আইডি এর আগে এদেশে প্রতারণা করা অন্যান্য কয়েকটি কোম্পানির মতোই এমএলএম মডেলে চলে, কিন্তু কোম্পানিটি নিজেদের কমিউনিটি বিজনেস বলে প্রচার করে।
এমএলএম- এর মতোই এখানে পুরনো সদস্যদের মাধ্যমে নতুন সদস্য আনার চর্চা আছে। একজন নতুন সদস্য যোগ করলেই ১,৫০০-১,৭০০ টাকা লাভ দেওয়ার অফার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তারা ছাত্রদের অনলাইন বিজ্ঞাপন দেখা ও শেয়ার করার জন্য টাকা দিয়ে নতুন সদস্য আকৃষ্ট করার পর তাদের কাছে নিজেদের পণ্য ও কয়েন বিক্রি করে। আকর্ষণীয় আয়ের এসব প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হয়ে পুরনো সদস্যরা নিজ পরিবারের সদস্য, বন্ধ-স্বজনদের এই প্ল্যাটফর্মের সদস্য বানাতে উৎসাহিত হন।
সামাজিক চাকরির ব্রান্ড প্রচারণার মাধ্যমে রিং-আইডি এখন- সিলভার ও গোল্ড এ দুই ধরনের সদস্যপদ দিচ্ছে। সিলভার ক্যাটাগরির সদস্যপদ পেতে হলে ১২ হাজার টাকা দিতে হয়, সেখানে দিনে ৫০টির বেশি অনলাইন বিজ্ঞাপন দেখে ২৫০ টাকা আয়ের অপশন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গোল্ড মেম্বারশিপ পেতে দিতে হবে ২২ হাজার টাকা, যাতে প্রতিদিন ১০০টির অধিক বিজ্ঞাপন দেখে ৫০০ টাকা আয়ের সুযোগ থাকবে। রিং-আইডি নামের এই সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মটি ডিজাইন ও ডেভেলপ করেছে কানাডার কুইবেক রাজ্যের মন্ট্রিয়ালে অবস্থিত রিং ইঙ্ক কোম্পানি।