নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রাখাইনের আদি নিবাসে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করে না। তাই মিয়ানমারের সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার সংকট কমাতে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় বেসামরিক লোকজনকে পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত করতে পারে। আসিয়ান, চীন, রাশিয়া, ভারত কিংবা পছন্দের যেকোনো বন্ধু দেশের নাগরিকদের মিয়ানমার যুক্ত করতে পারে।
আজ শনিবার আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) ২৭তম বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য এই প্রস্তাব করেন। বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ভার্চ্যুয়াল এ বৈঠকে অংশ নেন।
আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভিয়েতনামের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফাম বিন মিন।
তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশের জোটের (আসিয়ান) সহযোগিতা চাইলে ওই জোটের দেশগুলো আদৌ কী করবে, সেটা স্পষ্ট নয়। আসিয়ানের সনদ অনুযায়ী এক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশ নাক গলায় না। জোটের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী দেশ মালয়েশিয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো মালয়েশিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকে।
আজ এআরএফের আলোচনায় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামউদ্দিন তুন হোসেন বলেন, ‘কোভিড মহামারিসহ সামগ্রিকভাবে আমাদের সম্পদ ও সামর্থ্য সীমিত হয়ে পড়ায়, আমাদের পক্ষে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আর আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়।
মালয়েশিয়া স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে রাখাইনের বাস্তুচ্যুত লোকজনের প্রত্যাবাসনকে সমর্থন করে। তাই দ্রুততার সঙ্গে এই সমস্যার টেকসই সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে অনুরোধ জানায় মালয়েশিয়া।’
দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়ে হিশামউদ্দিন তুন হোসেন বলেন, এই সমস্যার তাড়াতাড়ি সুরাহা না হলে ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গারা অব্যাহতভাবে অসৎ মানব পাচারকারী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শিকারে পরিণত হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে তাদের আদি নিবাসে ফিরে গিয়ে সেখানকার সমাজে পুনরায় মানিয়ে নিতে পারে, সে জন্য আমরা এআরএফের অংশীদারদের সহযোগিতা চাই। নিজেদের আদি নিবাসে ফিরে গেলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচক কূটনীতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জোর দিচ্ছে। মিয়ানমার বন্ধু দেশ বলে প্রত্যাবাসনের জন্য তিনটি চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। যাচাইবাছাই শেষে মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। মিয়ানমার তাদের দেশের বাস্তুচ্যুত লোকজনের স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে ফেরার স্বার্থে সেখানে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে রাজি হয়েছে। নিরাপত্তা দিতেও রাজি হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ পর্যন্ত তাদের একজনও ফিরে যায়নি। রাখাইনে সহায়ক পরিবেশের পরিবর্তে লড়াই ও বোমা বর্ষণ অব্যাহত আছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে উগ্রপন্থার বিকাশ ঘটতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। কারণ সন্ত্রাসীদের কোনো সীমানা নেই, ধর্ম নেই। কাজেই একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্থিতিশীল অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমাদের স্বপ্নকে চুরমার করে দেওয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে।’
আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের ওই আলোচনায় কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া শেম্পেইন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিতসু মোতেগিসহ ২৬টি দেশের মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত এবং ইইউর প্রতিনিধি অংশ নেন।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy