একান্ত ভাবনা-
রফিক তালুকদার (সংবাদকর্মী, সমাজকর্মী)
করোনা ঠেকাতে 'লকডাউন'। তাতে করোনার প্রকোপ হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রন করা গেল, কিন্তু ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে যে ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রনের বাস্তবিক পরিকল্পনায় কি এগোচ্ছি আমরা!!
লকডাউনে রপ্তানিমুখী শিল্প সহ বেশকিছু জরুরী প্রতিষ্ঠান খোলা আছে, ফলে সেইসব খাতে ক্ষতি হবে কম। কিন্তু নানান পণ্য উৎপাদনকারী ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্টান ও উদ্যোক্তা যারা ঈদ সহ নানান উৎসবকে ঘিরে তাদের পণ্য বিক্রয়ের পসরা সাজান তারা পড়েছেন মারাত্মক বিপাকে। সেই সাথে আছে রেস্টুরেন্ট, পরিবহন,সহ নানান রকম আইসিটি সম্পৃক্ত সেবা -যারা তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারছেন না। এই সকল উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত আছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী। এসকল খাতের উদ্যোক্তাদের পক্ষে তাদের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন কতদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব?
বড় বড় উদ্যোক্তাদের যেখানে শ্রমিকের বেতন/পাওনা মেটাতে সরকারের সাহায্য নিতে হয়, সেখানে এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কিভাবে তা চালিয়ে যাবেন?
গতবছরের প্রণোদনা প্যাকেজের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বন্টন হয়েছে খুব ধীরগতিতে। তাতেও আবার অনেক উদ্যোক্তা সেই সুবিধা পাননি। বিশেষ করে যাদের ব্যাংকের সাথে লেনদেন নেই কিংবা যাদের ব্যবসার ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছিল, তারা কিন্তু এই প্রণোদনার আওতার বাইরেই রয়ে গেছেন।
আবার যারা প্রণোদনার ঋণ সুবিধা পেয়েছিলেন, তারা যদি এখন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে না পারেন, তাহলে ঋণের টাকা ফেরত দিবেন কিভাবে, সেটিও চিন্তার বিষয়।
দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা, দোকানপাট মার্কেটের কর্মী, দারোয়ান, কুলি, মুচি, এইসব সাধারন মানুষগুলো কতদিন এভাবে চলতে পারবেন?
এটা পরিস্কার যে,এই লকডাউনের পরেই কিন্তু করোনা বিদায় হচ্ছেনা।
বৈশ্বিক এই মহামারীর সাথে আমাদের চলতে হবে আরও কয়েক মাস কিংবা বছর, এভাবে দিনের পর দিন লকডাউন থাকলে তার অর্থনৈতিক চাপ সহ্য করা অনেক মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।
তাই সার্বিক পরিস্হিতি মোকাবেলায় সরকারকে নিতে হবে দির্ঘ এক বছরের পরিকল্পনা।
যেমন অতি দরিদ্র মানুষের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ব্যাবস্হা করতে হবে পুরো বছর জুড়েই, আওতা বাড়াতে হবে খাদ্য বিতরণেরও।
যেসকল খাতকে লকডাউন এর আওতায় রাখা হয়েছে অর্থাৎ যারা তাদের ব্যবসা বাণিজ্য কিংবা কাজ করতে পারছেন না তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে। এদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে ঋণ নিয়েছেন তা ফেরত দেয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দিতে হবে।
আর যে সকল খাত লকডাউন এর আওতার বাইরে আছে অর্থাৎ যারা তাদের উৎপাদন কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন, তাদেরকে আর কোন নতুন প্রণোদনা দেয়া যাবে না।
স্বাস্থ্য বিধি মানা কঠোরভাবে আরোপ করতে দরিদ্র মানুষের মধ্যে মাস্ক ও সাবান বিতরণ করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধির মানা এবং এর গুরুত্বের বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকতে হবে । আগামী অন্তত এক বছর কোনভাবেই স্বাস্থ্য বিধি মানার ব্যাপারে শিথিলতা আনা যাবে না, বন্ধ রাখতে হবে সব ধরণের সভা সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্টান সমূহ। এটি পালন করতে পারলে হয়ত সহসাই আবার লকডাউন দেয়ার প্রয়োজন পড়বেনা।
এদেশে অনেক স্বচ্ছল(বিত্ত্ববান) মানুষ আছেন যারা মাসের-পর-মাস ঘরে থাকতে পারবেন, কোন কাজ না করলেও জীবনযাপনের স্বাভাবিক গতি ধরে রাখা কোন সমস্যা হবে না তাদের জন্য।
কিন্তু স্বল্প আয়ের জনগোষ্টির পক্ষে তা কিছুতেই সম্ভব না । সরকারের পাশাপাশি সামর্থ্য অনুযায়ী বিত্ববানদেরকেও এই কঠিন দুঃসময়ে এগিয়ে আসতে হবে।
মানুষের জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে আরও বৃদ্ধি ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় এগিয়ে নিতে হবে।