লন্ডন থেকে জমির উদ্দিন সুমন :
করোনা মহামারী জনিত কারণে টাওয়ার হ্যামলেটসে এবারের অমর একুশে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস উদযাপনে জন সমাবেশ বাতিল করা হয়েছে। কমিউনিটি এবং এনএইচএস-এর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার স্বার্থে এবং করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ি ঘরে বসে এবং অনলাইনে মহান এই দিবসটি উদযাপন করার জন্য কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শহীদ দিবসটি জাতি সংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে উদযাপন করা হয়। ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্রতার ব্যাপারে জনসচেতনতা এবং বহুভাষিক তাকে তুলে ধরার লক্ষ্যেই প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী বিশ্বব্যাপি পালিত হয়ে থাকে। এটা এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ যে, জাতিসংঘের মতে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি ভাষা তার সম্পূর্ণ সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত ঐতিহ্য নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি আদায়ের আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশে অনেক ছাত্র-যুবক পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন। ১৯৫৩ সাল থেকেই দিনটি শহীদ দিবস পালিত হয়ে আসছে। ভাষার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নির্মান করা হয় শহীদ মিনার। তারই একটি রেপ্লিকা বা প্রতিলিপি হোয়াইটচ্যাপলের আলতাব আলী পার্কে স্থাপন করা হয়েছে, যা মূলত টাওয়ার হ্যামলেটসে জনসাধারণের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
এ বছর, দিবসটি স্মরণের জন্য শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করতে কিংবা স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আলতাব আলী পার্কে না যাওয়ার জন্য কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস বলেন, বহু জাতিসত্বা ও বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি-কৃষ্টির মানুষের আবাস হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটস গর্বিত। এই শহীদ দিবস আমাদেরকে বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসী মানুষগুলোর আত্মদানকেই মনে করিয়ে দেয় এবং বিশ্বব্যাপি ভাষা ও বহুসাংস্কৃতিকতার গুরুত্ব তুলে ধরতে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে এটি পালিত হয়ে আসছে। কোভিড-১৯ এর কারণে স্বাভাবিক সময়ের মতো এবার যেহেতু কোনরূপ গণসমাবেশ বা সাবর্জনীন অনুষ্ঠান করা যাবেনা এবং আমাদের কমিউনিটিকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে আমাদেরকে অবশ্যই ঘরের মধ্যে থাকতে হবে। তবে মহান এই দিবসটি আমরা ঘরে থেকে এবং অনলাইন উদযাপন করবো।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কমিটি ইউকে এর জেনারেল সেক্রেটারী নুরুল ইসলামও এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারী মধ্যরাতে আমরা বরাবরের মতো এবার মহান শহীদ দিবসের পালনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারছি না। আমরা বিশ্বাস করি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে এবং ২০২২ সালে আবারও সবাইকে নিয়ে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবো বলে আমরা আশাবাদি।
তিনি বলেন, আমাদেরকে অবশ্যই সরকারের লকডাউন বিধি মেনে চলতে হবে। ভয়ানক এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘরে থাকুন, এনএইচএস-কে রক্ষা করুন এবং জীবন বাচাঁন। নিজের যতœ নিন এবং নিরাপদ থাকুন।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেছেন, মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর আমি আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে যোগ দিয়ে থাকি। এছাড়া বহুভাষিকতা, বৈচিত্র ও বিশ্ব শান্তির গুরুত্ব তুলে ধরতে লন্ডনের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রতি বছর উদযাপন করে অমর একুশে ফেব্রুয়ারী। এবছর আমরা একুশে ফেব্রুয়ারীকে ‘মুজিব ইয়ার অব মাল্টিলিঙ্গুয়ালিজম ডে’ হিসেবে আমাদের বৈদেশিক কূটনীতিক বন্ধুদের নিয়ে ভার্চ্যূয়ালি উদযাপন করবো।
হাই কমিশনার মুনা ‘করোনাভাইরাস থেকে পরিবার ও বন্ধু-স্বজনদের নিরাপদ রাখতে এবারের একুশে ফেব্রুয়ারী নিজেদের ঘরে থেকে পালন করার জন্য টাওয়ার হ্যামলেটসে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই-বোনদেরকে’ অনুরোধ করেছেন।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy