নিজস্ব প্রতিবেদক: এক মানবপাচারকারী চক্রের ‘হোতাসহ’ দুইজনকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা শতাধিক বাংলাদেশিকে লিবিয়ায় পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, বুধবার রাতে যাত্রাবাড়ীর কাজলা থানা এলাকা থেকে মো. সেলিম শিকদার (৩৫) ও মো. মনির হাওলাদার ওরফে মনির হোসেন (২৬) নামে ওই দুইজনকে তারা গ্রেপ্তার করেন।
গত ৬ জুন মতিঝিল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ২৭ জনের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল, তাতে আসামির তালিকায় প্রথম দুটি নাম ছিল সেলিম ও মনিরের।
গত মে মাসের শেষে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে মানবপাচারকারীদের একটি বন্দিশালায় ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় পাচারকারী ও দালালদের বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলা হয়, গ্রেপ্তার করা হয় ৭১ জনকে।
উপ-কমিশনার মশিউর বলেন, সেলিম ও মনির শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফেনী, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় যেতে আগ্রহী করে তুলত। এরপর তাদের পাসপোর্ট ও ছবিসহ পাঠিয়ে দিত ঢাকায় শরীফ ও কবির নামের দুই দালালের কাছে।
“যাদের পাচার করা হত, তাদের অভিভাকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা আদায় করে তার একটি অংশ মনিরের স্ত্রী, শ্বশুর বা বাবাকে এবং আরেকটি অংশ দালাল শরীফে ও কবিরকে পাঠাতো তারা। এ কাজের জন্য সেলিম জনপ্রতি হারে কমিশন পেত।”
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ২৬ বছর বয়সী মনির হাওলাদারই লিবিয়ায় মানবপাচারকারী এই চক্রের ‘হোতা’।
উপ-কমিশনার মশিউর বলেন, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা মনির ‘অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন’।
“অল্প সময়ের মধ্যেই সে লিবিয়ার মিলিশিয়া এবং লোকাল পুলিশের সঙ্গে অবৈধ সখ্যতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এবং তাদের সহযোগিতায় বেনগাজির মাঝুরি, ত্রিপোলির সুলেমান এবং জোয়ারায় অভিবাসীদের ক্যাম্প পরিচালনা করত সে। এগুলোকে বলা হয় গেইমিং ক্যাম্প।”
২০১০ সালে শাহজালাল নামে এক আত্মীয়র মাধ্যমে প্রথমবার লিবিয়ায় যান মনির। তখন তিনি বয়সে কিশোর। এরপর ২০১৫ সালে এবং ২০১৮ সালে দালাল শরীফ ও কবিরের মাধ্যমে তিনি আরও দুই দফা লিবিয়ায় যান।
পুলিশ বলছে, লিবিয়ায় প্রথমে একটি কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে শ্রমিকের চাকরি করতেন মনির। পরে যুক্ত হন মানব পাচারে।
“ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে সে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়াতে লোক নিয়ে যেত। দালাল শরীফ ও কবিরদের পরিচালিত স্বাধীন ট্রাভেলসের মাধ্যমে শতাধিক বাংলাদেশিকে সে এভাবে পাচার করেছে,” বলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর।
তিনি বলেন, পাচারের শিকার মানুষগুলোকে বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে প্রথমে লিবিয়ার বেনগাজীতে নেওয়া হত।
“প্রথম দফায় দালাল শরীফের মিসরাতা বন্দিশালায়, দ্বিতীয় দফায় বাদশাহ ও মনিরের মাঝুরি বন্দিশালায় এবং তৃতীয় দফায় ত্রিপোলিতে মনিরের সুলেমান বন্দিশালায় তাদের আটকে রেখে দেশে তাদের পরিবারের কাছে বাড়তি টাকা দাবি করা হত।
“সেই টাকা আদায়ের জন্য তাদের প্রচণ্ড মারধর করা হত। সেই ভিডিও ধারণ করে, কান্নার শব্দ মোবাইলে রেকর্ড করে পাঠানো হত দেশে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে।
“পরে লিবিয়ার কোস্টগার্ড, মিলিশিয়া, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ছত্রছায়ায় ওই মানুষগুলোকে প্লাস্টিক, ফাইবার বা কাঠের বোটে তুলে দেওয়া হত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছানোর জন্য।”
মশিউর বলেন, লিবিয়ায় মনিরের পরিচালিত একাধিক ক্যাম্পে আরও ‘বেশকিছু’ বাংলাদেশি বন্দি অবস্থায় আছেন বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে।
“ইতোমধ্যে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার বাদশাহর মাধ্যমে যোগাযোগ করে ১৭ জনকে মুক্ত করা হয়েছে। তারা ফিরে পেয়েছেন তাদের পাসপোর্ট ও পকেট মানি। পুলিশ সদরদপ্তর এ বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।”
সেলিম ও মনিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy