1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
শবে মেরাজের রজনীতে হাবিব ও মাহবুবের একান্ত সাক্ষাৎ
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন

শবে মেরাজের রজনীতে হাবিব ও মাহবুবের একান্ত সাক্ষাৎ

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১, ১১.৪৪ এএম
  • ২৩৫ বার পঠিত
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী
 মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। পরিভাষায় মেরাজ হলো, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সশরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় হযরত জিবরাইল (আ.) ও হযরত মিকাইল (আ.)এর সঙ্গে বিশেষ বাহন বোরাকের মাধ্যমে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা হয়ে প্রথম আসমান থেকে একে একে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ; মহান আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ ও জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করে ফিরে আসা।
মেরাজের একটা অংশ হলো ইসরা। ইসরা অর্থ রাত্রিকালীন ভ্রমণ। যেহেতু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজ রাত্রিকালে হয়েছিল, তাই এটিকে ইসরা বলা হয়। বিশেষত বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়ে থাকে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন: তিনি পবিত্র (আল্লাহ) যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা-১৭ [৫০] ইসরা-বনি ইসরাইল, রুকু: ১, আয়াত: ১, পারা: ১৫, পৃষ্ঠা ২৮৩/১)।
মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল নবুওয়াতের ১১তম বছরের ২৭ রজবে। তখন নবীজির বয়স ৫১ বছর। মেরাজ হয়েছিল সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের অস্বীকৃতি ও অবিশ্বাস। যদি আধ্যাত্মিক বা রুহানিভাবে অথবা স্বপ্নযোগে হওয়ার কথা বলা হতো, তাহলে তাদের অবিশ্বাস করার কোনো কারণ ছিল না। মেরাজের বিবরণ পবিত্র কোরআন শরীফের সুরা নাজমে সুরা ইসরায় বিবৃত হয়েছে। হাদিস শরিফ, বুখারি শরিফ, মুসলিম শরিফ, সিহাহ সিত্তাসহ অন্যান্য কিতাবে এই ইসরা ও মেরাজের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য বিশুদ্ধ সূত্রে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘শপথ নক্ষত্রের যখন তা বিলীন হয়। তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপথগামী হননি এবং বিভ্রান্ত হননি। আর তিনি নিজে থেকে কোনো কথা বলেন না। (বরং তিনি যা বলেন) তা প্রদত্ত ওহি (ভিন্ন অন্য কিছু) নয়। তাকে শিখিয়েছেন মহাশক্তিধর (জিবরাইল আ.)। সে (জিবরাইল আ.) পাখাবিশিষ্ট, সে স্থিত হয়েছে দূর ঊর্ধ্বে। অতঃপর নিকটবর্তী হলো, পরে নির্দেশ করল। তারপর হলো দুই ধনুকের প্রান্তবর্তী বা আরও নিকট। পুনরায় তিনি ওহি করলেন তাঁর বান্দার প্রতি যা তিনি ওহি করেছেন। ভুল করেনি অন্তর যা দেখেছে। তোমরা কি সন্দেহ করছ তাকে, যা তিনি দেখেছেন সে বিষয়ে। আর অবশ্যই দেখেছেন তিনি তাকে দ্বিতীয় অবতরণ স্থলে; সিদরাতুল মুনতাহার কাছে; তার নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া। যখন ঢেকে গেল সিদরা যা ঢেকেছে; না দৃষ্টিভ্রম হয়েছে আর না তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন; অবশ্যই তিনি দেখেছেন তাঁর রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ।’ (সুরা-৫৩ [২৩] নাজম, রুকু: ১, আয়াত: ১-১৮, পারা: ২৭, পৃষ্ঠা ৫২৭/৫)।
মেরাজ সফরে যাঁদের সঙ্গে দেখা হলোঃ-
প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদ্রিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.), সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)। প্রত্যেকের সঙ্গে সালাম, কালাম ও কুশল বিনিময় হয়েছে। তিনি বায়তুল মামুর গেলেন, যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আসেন ও প্রস্থান করেন; তাঁরা দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ পান না। অতঃপর সিদরাতুল মুনতাহার কাছে গেলেন। সেখানে চারটি নদী দেখলেন; দুটি প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য। অপ্রকাশ্য দুটি নদী জান্নাতের আর প্রকাশ্য নদী দুটি হলো নীল ও ফোরাত। তারপর বায়তুল মামুরে পৌঁছালে এক পেয়ালা শরাব, এক পেয়ালা দুধ ও এক পেয়ালা মধু পেশ করা হলো। তিনি (সা.) দুধ পান করলেন, এটাই স্বভাবসুলভ (ইসলাম)। (বুখারি শরিফ: ৩৬৭৪, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা ৫৪৮-৫৫০)।
মেরাজের সিদ্ধান্তবলিঃ-
মেরাজের রজনীতে হাবিব ও মাহবুবের একান্ত সাক্ষাতে ১৪টি বিষয় ঘোষণা হয়েছে। যথা ১. আল্লাহকে ছাড়া কারও ইবাদত করবে না, ২. পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ৩. নিকট স্বজনদের তাদের অধিকার দাও; ৪. মিসকিনদের ও পথসন্তানদের (তাদের অধিকার দাও); ৫. অপচয় কোরো না, অপচয়কারী শয়তানের ভাই, ৬. কৃপণতা কোরো না, ৭. সন্তানদের হত্যা করবে না, ৮. ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না, ৯. মানব হত্যা কোরো না, ১০. এতিমের সম্পদের কাছেও যেয়ো না, ১১. প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কোরো, ১২. মাপে পূর্ণ দাও, ১৩. অবস্থান কোরো না যাতে তোমার জ্ঞান নেই, ১৪. পৃথিবীতে গর্বভরে চলো না। এ সবই মন্দ, তোমার রবের কাছে অপছন্দ। (সুরা-১৭ [৫০] ইসরা-বনি ইসরাইল, রুকু: ৩-৫, আয়াত: ২২-৪৪, পারা: ১৫, পৃষ্ঠা ২৮৫-২৮৭/৩-৫)। নবীজি (সা.) জান্নাত-জাহান্নামও পরিদর্শন করেছেন।
কী পাপে কী শাস্তিঃ-
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি দেখানো হলো। বেনামাজির শাস্তি দেখলেন, বড় পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হচ্ছে, আঘাতে মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, পুনরায় ভালো হয়ে যাচ্ছে, আবার আঘাত করা হচ্ছে। জাকাত না দেওয়ার শাস্তি দেখলেন। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে পাওনাদারেরা থাকবে। তারা পশুবৎ চরবে এবং নোংরা আবর্জনা ময়লা ও পুঁজ এবং কাঁটাযুক্ত আঠালো বিষাক্ত ফল খাবে, জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর ভক্ষণ করবে।
চোগলখোরের শাস্তি দেখলেন, তাদের পার্শ্বদেশ হতে গোশত কেটে তাদের খাওয়ানো হচ্ছে; আর বলা হচ্ছে, যেভাবে তোমার ভাইয়ের গোশত খেতে, সেভাবে এটা ভক্ষণ করো। অনুরূপ দেখলেন গিবতকারীদের শাস্তি। তাদের অগ্নিময় লোহার নখর দিয়ে তারা তাদের চেহারা ও বক্ষ বিদীর্ণ করছে। বললেন, হে জিবরাইল! (আ.) এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো সেসব লোক যারা পশ্চাতে মানুষের গোশত খেত (আড়ালে সমালোচনা করত)। দেখলেন সুদখোরদের বড় বড় পেট, যার কারণে তারা তাদের অবস্থান থেকে নড়াচড়া করতে পারছে না। তাদের সঙ্গে রয়েছে ফেরাউন সম্প্রদায়, তাদেরকে অগ্নিতে প্রবিষ্ট করানো হচ্ছে।
জেনাকার বদকার নারী, যারা ব্যভিচার করেছে এবং ভ্রূণ ও সন্তান হত্যা করেছে, তাদের দেখলেন পায়ে আংটা লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে; তারা আর্তচিৎকার করছে। ব্যভিচারী জেনাকার পুরুষের শাস্তি দেখলেন। এক সম্প্রদায় তাদের সামনে একটি উত্তম পাত্রে উপাদেয় তাজা ভুনা গোশত এবং অন্য নোংরা একটি পাত্রে পচা মাংস। তারা উত্তম পাত্রের উন্নত তাজা সুস্বাদু গোশত রেখে নোংরা পাত্রের পচা মাংস ভক্ষণ করছে। বললেন, হে জিবরাইল! (আ.) এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো ওই সব পুরুষ যারা স্বীয় বৈধ স্ত্রী রেখে অন্য নারী গমন করেছে এবং ওই সব নারী যারা স্বীয় বৈধ স্বামী রেখে পরপুরুষগামিনী হয়েছে।
দেখলেন এক লোক বিশাল লাকড়ির বোঝা একত্র করেছে, যা সে ওঠাতে পারছে না; কিন্তু আরও লাকড়ি তাতে বৃদ্ধি করছে। বললেন, হে জিবরাইল! (আ.) এটা কী? তিনি বললেন, এ হলো আপনার উম্মতের সে ব্যক্তি যে মানুষের আমানত আদায় করেনি; বরং আরও অধিক গ্রহণ করেছে। দেখলেন অশ্লীল বাক্য ব্যবহারকারী ও ফেতনা সৃষ্টিকারীদের শাস্তি। তাদের জিহ্বা ও ঠোঁট অগ্নিময় লোহার কাঁচি দ্বারা কর্তন করা হচ্ছে, পুনরায় তা আগের মতো হয়ে যাচ্ছে এবং আবার কাটা হচ্ছে; এভাবেই চলছে। দেখলেন ছোট্ট একটি পাথর হতে বিশাল এক ষাঁড় বের হলো; পুনরায় ওই ষাঁড় সে পাথরের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল; কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছিল না। বললেন, হে জিবরাইল! (আ.) এটা কী? তিনি বললেন, এটা হলো সেসব লোকের দৃষ্টান্ত যারা বড় বড় দাম্ভিকতাপূর্ণ কথা বলে লজ্জিত হয়, পরে আর তা ফিরিয়ে নিতে পারে না।
এতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারীদের দেখলেন। তাদের ওষ্ঠ-অধর যেন উটের ঠোঁটের মতো। তাদের মুখে আগুনের জ্বলন্ত কয়লা প্রবিষ্ট করানো হচ্ছে এবং তা তাদের পায়ুপথ দিয়ে বের হয়ে আসছে। মদ, মাদক ও নেশা গ্রহণকারীদের শাস্তি দেখলেন। তারা জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত নোংরা পুঁজ পান করছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মালিক নামে জাহান্নামের রক্ষী ফেরেশতাকে দেখলেন। সে মলিন মুখ, হাসি নেই, বলা হলো জাহান্নাম সৃষ্টির পর থেকে সে কখনো হাসেনি। (বুখারি ও মুসলিম)। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শবে মেরাজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের জীবনকে সুন্দর করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখকঃ- বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও গবেষক হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews