জবানবন্দিতে বিউটি বেগম জানান, তিনি টঙ্গী কোকাকোলা ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। তার স্বামী সাইফুল ইসলাম টঙ্গীর সড়কে পান-সিগারেট বিক্রি করতেন। তিনি আড়াই বছর ধরে স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করতেন। যেকোনো পুরুষকে জড়িয়ে বাজে কথা বলতেন। ঘটনার দিন সকালে বিউটি বেগম স্বামীকে খাইয়ে ও মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে ফ্যাক্টরিতে চলে যান। কিছুক্ষণ পর অসুস্থ বোধ করায় ছুটি নিয়ে বাসায় ফেরেন। এরপর হাত-মুখ ধুয়ে ঘরের মেঝেতে ওড়না বিছিয়ে শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর সাইফুল ঘরের দরজা বন্ধ করে বিউটির কাছে এসে শরীরে হাত দেন ও শারীরিক সম্পর্ক করতে চান। ওই সময় তিনি বিউটিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘চুল ভেজা ক্যান? কয়জনের লগে আকাম করে আসছিস?’ এই বলে স্ত্রীর গলায় খামচি দিয়ে গলা টিপে ধরেন সাইফুল। বিউটি তার হাত থেকে ছুটতে না পেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যান।
বিউটি আরো জানান, জ্ঞান ফিরে দেখেন তার স্বামী পাশেই ঘুমিয়ে আছে। তখন তিনি ক্ষোভে তরকারি কাটার ধারালো ছুরি দিয়ে স্বামীর গলা কাটেন। এরপর রক্ত দেখে আবার অজ্ঞান হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তার ছোট মেয়ে সানজিদা স্কুল থেকে ফিরে গোঙানির শব্দ পেয়ে দরজায় ধাক্কা দেন। আশপাশের লোকজনও বিষয়টি টের পেয়ে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। অনেকক্ষণ পর বিউটি বেগমের জ্ঞান ফিরলে তিনি দরজা খুলে দেন। তখন সবাই সাইফুলের মরদেহ ও পাশে একটি রক্তমাখা ছুরি, বিউটি বেগমের চুলে ও কাপড়ে রক্ত, তার গলা ও গালে নখের আঁচড়ের দাগ দেখতে পায়। এরপর বিউটি বেগম রক্তমাখা কাপড় ধুয়ে গোসল করে বড় মেয়ে শারমিনের বাসায় চলে যান।
শুক্রবার বিকেলে পিবিআই গাজীপুরের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাওসার উদ্দিন জানান, ৮ জুলাই সকালে টঙ্গী পূর্ব থানার হিমারদীঘি দত্তপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে সাইফুল ইসলামের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় মামলার পর পিবিআই গাজীপুর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হত্যাকাণ্ডের আলামত উদ্ধার করে। পরদিন সকালে নিহতের স্ত্রী বিউটি বেগমকে গ্রেফতার করা হয়।
পিবিআই পরিদর্শক আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেন বিউটি বেগম। ওইদিন বিকেলে গাজীপুর আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। মামলাটির তদন্ত চলছে। হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।