রিয়াজুল হক সাগর,রংপুর :
পাঠদানে গাফিলতি, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত, ম্যানেজিং কমিটি গঠনে জালিয়াতি, স্বাক্ষর জাল করা, খেয়াল-খুশিমত স্কুলে যাতায়াতসহ অনিয়ম-দূর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাকুড়িয়া শরিফ আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই প্রধান শিক্ষককে অসদচারণ ও দূর্নীতির দায়ে সরকারী কর্মচারী বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এনিয়ে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ জারী করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরাখস্তের ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গঙ্গাচড়ার বড়বিল ইউনিয়নের পাকুড়িয়া শরিফ আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন। তিনি নিজের খেয়াল-খুশিমত স্কুলে যাতায়াত করেন। লেখাপড়া নিয়ে অভিভাবকরা অভিযোগ তুললে তাদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করা, গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, শিশু শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করাসহ নানা অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এনিয়ে এলাকাবাসীরা গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন-সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাগমা শিলভিয়া খান দুই সদস্য বিশিস্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গত বছরের ১০ অক্টোবর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আশেকুল আহাদ ও আল ইমরান সরেজমিনে তদন্ত করেন এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা’র বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়।
স্থানীয় অভিভাবক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ স্কুলের শিক্ষকরা খেয়াল খুশি মত আসেন। মন চাইলে বাচ্চাদের পড়ান, না মন চাইলে যখন-তখন চলে যান। এতে করে শিক্ষার্থীরা কিছুই শিখতে পারছে না। আমরা এর প্রতিবাদ জানালে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি আমলে নেন না। সেই সাথে প্রধান শিক্ষক স্কুলে নানা অনিয়ম দূর্নীতি করছেন। আমরা প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে মানববন্ধনও করেছিলাম।
অভিভাবক জিকরুল, জিয়ারুল, জাহাঙ্গীর, তোতা মিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক গোপনে ম্যানেজিং কমিটি করেছেন। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করেছেন। এমন দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের কাছে আমাদের শিশুরা কি শিখতে পারে। প্রধান শিক্ষক নিজের দোষেই বরখাস্ত হয়েছেন।
গঙ্গাচড়া পাকুড়িয়া শরিফ আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি চক্র ষড়যন্ত্র করেছে। তাদের কারণে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাগমা শিলভিয়া খান বলেন, পাকুড়িয়া শরিফ আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিস্তর অভিযোগ ছিল। এর প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং সেই কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা’র বিরুদ্ধে সময় মত স্কুলে যাতায়াত না করা, গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা, শিক্ষার্থীকে মারধর, স্বাক্ষর জালিয়াতি করা, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করার সত্যতা পাওয়া যায়। আমরা সেই তদন্ত প্রতিবেদন দু’মাস আগে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছিলাম। গত ৩১ জানুয়ারী প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।