প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ২২, ২০২৫, ১১:৫০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অগাস্ট ১২, ২০২০, ১:২৫ পি.এম

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ
শ্রীশ্রীদুর্গা মহাপূজায় মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথির সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজা। প্রকৃত পক্ষে দুর্গতিনাশিনী ভগবতী দুর্গা দেবীর মহাপূজা চলাকালীন সময়ে মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথির সন্ধিক্ষণে শ্রীশ্রীভগবতী দুর্গা দেবীর যে বিশেষ পূজানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেই বিশেষ পূজানুষ্ঠানকেই সন্ধিপূজা নামে অবহিত করা হয়েছে। তবে আমাদের হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রের পুরাণে ও তন্ত্রে এই বিশেষ পূজা অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান কারণও কিন্তু রয়েছে। আর সন্ধি পূজা দেওয়ার সেই বিশেষ কারণ আমি আপনাদের জ্ঞাতার্থে নিন্মে প্রদান করলাম।
শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে যে মহাদেবী শ্রীশ্রী ভগবতী দুর্গা সব সময় এই বিশেষ পূজা ( সন্ধি পূজা ) চলাকালিন সময়ে মৃন্ময়ী প্রতিমায় আবির্ভূতা হয়ে থাকেন। প্রকৃত পক্ষে সন্ধি পূজার পর থেকেই মহাদেবীর প্রতিটি মৃন্ময়ী প্রতিমা হয়ে যায় চিন্ময়ীস্বরূপিনী অন্যথায় কখনো নয়। অতপ কারণে ভগবতী শ্রীশ্রীদুর্গা মহাপূজার মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথির সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজানুষ্ঠান সুচারুরূপে সম্পাদন করা কিন্তু একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
সনাতন হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রের বৃহদ্ধর্মপুরাণে এ বিষয়ে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই বর্ণনার মর্মানুযায়ী--
পিতামহ ব্রহ্মা দেব রাক্ষস রাজ রাবণকে নিধন করার নিমিত্তে নিজে শ্রীশ্রীভগবতী দুর্গা দেবীর অকাল বোধন করে;ছিলেন। তবে তিনি ( ব্রহ্মা ) যে তিথিতে শ্রীশ্রীদুর্গা মহাদেবীর অকাল বোধন করেছিলেন। সেই তিথিটি কিন্তু আশ্বিনের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথি ছিল না । পিতামহ ব্রহ্মা দেব মহাদেবী দুর্গার বোধন করেছিলেন আশ্বিনের কৃষ্ণা নবমী তিথিতে। তবে সে যাই হোক না কেন ব্রহ্মা দেবের দ্বারা মহাদেবী দুর্গার অকাল বোধনের মূল বিষয় কিন্তু একই ছিল।
তখন পিতামহ ব্রহ্মা দেব শ্রীশ্রীদুর্গা মোহাদেবীর অকাল বোধন করে অসুর নিধনের জন্য মহাদেবী দুর্গার নিকট বর প্রার্থনা করেছিলেন। ব্রহ্মা দেবের অকাল বোধনে মহাদেবী দুর্গা তাঁর প্রতি সদয়ে হয়ে ছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ব্রহ্মা দেবের প্রার্থনায় পরিতৃপ্তা হয়ে শ্রীশ্রীভগবতী চণ্ডিকা দেবী তাৎক্ষণিক জাগ্রতা হয়ে ব্রহ্মা দেবকে যথারিতী তার অভিলসিত সকল রাক্ষস নিধনের বর দিয়ে ছিলেন।
বর প্রদান করার সময়ে মহাদেবী চণ্ডিকা ব্রহ্মা দেবকে বলে ছিলেন--
অত্যাচারী রাক্ষস রাজ রাবণ সহ পর্য্যায় ক্রমে তার সকল অসুর সৈন্য নিধন হবে। আর কখন কার অস্ত্রাঘাতে কোন অসুর নিধন হবে তিনি তাও একে একে ব্রহ্মা দেবকে বলে দিয়ে ছিলেন। মহাদেবী দুর্গার কথামত সকল পরাক্রমশালী অসুরগণ একে একে নিধনও হয়েছিল। পাঠক বৃন্দ আপনারা সকলে এখন দেখে নিন কার অস্ত্রাঘাতে কখন কোন অসুরের মৃত্যু হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন--
( ১ ) মহাদেবী ভগবতী চণ্ডীকার বরে কৃষ্ণা নবমী তিথিতে নিধন হবে কুম্ভকর্ণ।
(২ ) কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে লক্ষণের অস্রাঘাতে নিহত হবে অতিকায় নামক অত্যাচারী রাক্ষষ।
( ৩ ) অমাবস্যা তিথির রাত্রিতে লক্ষণ কর্তৃক ইন্দ্রজিৎ অর্থাৎ মেঘনাদ নিহত হবে।
( ৪ ) শুক্লা প্রতিপদী তিথিতে নিহত হবে মকরাক্ষ নামক অত্যাচারী রাক্ষষ ও
( ৪ ) শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে নিহত হবে দেবান্তক প্রভৃতি অত্যাচারী রাক্ষসগণ ।
তাছাড়া মহাদেবী ভগবতী চণ্ডীকা আরো বলেছিলেন--
আশ্বিনের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে আমি শ্রীরামের দিব্য ধনুকে প্রবেশ করবো । অষ্টমী তিথিতে শ্রীরামচন্দ্রের সাথে অত্যচারী রাক্ষষরাজ রাবণের মধ্যে মহারন আরম্ভ হবে। মহারন আরম্ভ হবে বেলেই ঐ তিথির পূর্বে মহা শব্দটি সংযুদ্ধ হয়ে হয়েছে "মহাষ্টমী"। মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথির সন্ধিক্ষণে অত্যাচারী রাক্ষষরাজ রাবণের শীর সমূহ তার ধর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
আর তখন রাক্ষষ রাজ রাবণের সেই ছিন্ন শির সমূহ পুনঃর্যোজিত হলে। নবমীতে রাবণ নিহত হবে।
মহাদেবীর প্রদত্ত বর অনুসারে শ্রীরামচন্দ্র অষ্টমীতিথি ও নবমীতিথির সন্ধিক্ষনে রাক্ষষরাজ রাবণের দশটি মুণ্ড ছিন্ন করেছিলেন। নবমী তিথিতে শ্রীরাম তাঁর প্রাণাধিকা পত্নী শিতা দেবীকে লঙ্কা নগরীর অশোক বন থেকে উদ্ধারও করে ছিলেন।
মহান কিছু উদ্ধার হয়েছিল বলে ( শিতা দেবীকে ) ঐ তিথিটির পূর্বে মহা শবদটি সংযুক্ত হয়ে "মহানবমী" তিথি হয়েছে।
অত্যাচারী রাক্ষষ রাজ রাবণকে বধ করে শ্রীরামচন্দ্রের প্রাণাধিকা পত্নী শিতা দেবীকে উদ্ধার করায়। শ্রীরামচন্দ্র দশমী তিথিতে বিজয় উৎসব করেছিলেন। সেই সুবাদে দশমী তিথিটির পূর্বে বিজয়া শব্দটি সংযুক্ত হয়ে তিথিটির নাম হয়েছে "বিজয়া দশমী" তিথি।
পাতয়ামাস দশ বৈ মস্তকান্ কালসন্ধিকে।।
অতপ কারণেই মহাদেবী ভগবতী শ্রীশ্রীদুর্গা দেবী বলেছেন--
মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথির সন্ধিক্ষণে আমার পূজার মহিমা অন্য সময়ের পূজার চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশী--
অষ্টমীনবমীসন্ধিকালোহয়ং বৎসরাত্মকঃ।
তত্রৈব নবমীভাগঃ কালঃ কলাত্মকো মম।।
অর্থাৎ মহাষ্টমীতিথি ও মহানবমী তিথির সন্ধিক্ষণে আমার পূজা করলে ,এক বৎসর কাল যাবৎ প্রত্যহ পূজা করার সমতুল্য ফল লাভ হয়। তার মধ্যে যদি মহানবমী তিথি ভাগে আমার পূজা কেহ করে। তবে সেই পূজা কল্পকাল পর্যন্ত পূজা করার সমতুল্য ফল লাভ হয়।
পুরাকালে শরৎ ঋতুর সূচনা লগ্ন ছিল বৈদিক যুগে ঠিক অষ্টমীতিথি ও নবমীতিথির সন্ধিক্ষণে।
তখন"হিম বৎসরের আট চান্দ্রমাস গতে অষ্টমীতিথি ও নবমীতিথির সন্ধিক্ষণে শরৎ ঋতু আরম্ভ হতো। অতপ কারণেই ভগবতী শ্রীশ্রীদুর্গা মহাপূজায় সন্ধিপূজার মাহাত্ম্য এত প্রকটরূপ ধারন করেছে। জয় মা মহাদেবী দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা।