প্রিন্ট এর তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৫, ৩:০৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ৪, ২০২১, ১০:২১ পি.এম
![](https://i0.wp.com/surjodoy.com/wp-content/uploads/2021/03/20210304_195405.jpg?fit=859%2C558&ssl=1?v=1614874861)
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির অধীনস্থ শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের সভাপতির বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনায় ফুঁসে ওঠেছেন সংগঠনের প্রায় ৬ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী।
অভিযুক্ত ওই সভাপতির নাম তুলা মিয়া।তিনি উপজেলার কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।অনিয়মের অভিযোগে ইতোমধ্যে সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন সংগঠনটি।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সভায় তাকে কল্যাণ তহবিলের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।শিক্ষক সমিতির এক জরুরি সভায় কল্যাণ তহবিলের প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগে তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,সমিতির হিসাব নিয়ে গঠিত নিরীক্ষা কমিটির (অডিট) প্রতিবেদন ও সুপারিশ নিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় কল্যাণ তহবিলের সভাপতি তুলা মিয়ার কাছে ২৭ লাখ ৪৬ হাজার ২০০ টাকা গচ্ছিত রয়েছে বলে দাবি করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ওই টাকা ফেরত চেয়ে গত ২৭ জানুয়ারি তুলা মিয়াকে চিঠি দেওয়া হয়।চিঠির জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সভায় তাকে কল্যাণ তহবিলের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে,বুধবার (৩মার্চ) কচুয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে সমিতির কার্যকরী কমিটি, কল্যাণ কমিটি,সমন্বয় কমিটি ও অডিট কমিটির নেতৃবৃন্দসহ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানরা যান। কিন্তু তুলা মিয়া বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না।
এ ব্যাপারে কল্যাণ তহবিলের সভাপতি পদ থেকে অব্যহতি পাওয়া তুলা মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত শিক্ষক সমিতির অডিট কমিটির সদস্য উপজেলার বানিয়ারছিট সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.কে ফজলুল হক, হতেয়া এইচ.এইচ.ইউ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, মহানন্দপুর বিজয় স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন,আমরা দীর্ঘদিন কল্যাণ তহবিলের বিষয়ে অডিট করেছি।তুলা মিয়ার কল্যাণ তহবিলের সাড়ে সাতাইশ লাখ টাকা নানাভাবে আত্মসাতের বিষয় অডিট প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাত সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষক সমিতির সমন্বয় কমিটির আহবায়ক ও উপজেলার নলুয়া বাছেত খান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন,সমন্বয় কমিটির সদস্য ও সখীপুর পিএম পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কায়উম হোসাইন,সদস্য ও উপজেলার ইন্দারজানি পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান,সদস্য ও উপজেলার বড়চওনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাল মিয়া,সদস্য ও উপজেলার গজারিয়া শান্তিকুঞ্জ একাডেমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান,সদস্য ও উপজেলার উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মিয়া, সদস্য ও উপজেলার শহীদ আবদুর রকীব বীরবিক্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম বলেন,কল্যাণ তহবিলের সভাপতি (বর্তমান অব্যাহতি প্রাপ্ত) ও উপজেলার কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুলা মিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এ কারনে কল্যাণ তহবিলের ভাবমূর্তি ব্যাপক ভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।এফডিআর-এর মুনাফা উত্তোলন ও খরচ কোনোক্রমেই সংগঠনের বিধি মোতাবেক করেন নাই। কল্যাণ তহবিল পরিচালনার ক্ষেত্রে দায়িত্ব জ্ঞানহীন কর্মকান্ড করেছেন। এ জন্যে তিনি মূল সমিতি ও কল্যাণ তহবিলের সকল কিছু থেকে নৈতিকতা হারিয়েছেন। তিনি কল্যাণ তহবিলের সাড়ে সাতাইশ লাখ টাকা আত্ম করেছেন। অবশ্যই এ টাকা তার পরিশোধ করতে হবে।
সখীপর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম হোসেন বলেন,কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুলা মিয়া সমিতির কল্যাণ তহবিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার কাছে থাকা ওই তহবিলের প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা ফেরত না দেওয়ায় ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও কল্যাণ তহবিলের সমুদয় কাগজপত্র,এফডিআর, রেজিস্টার,ব্যাংক চেকবই ফেরত চেয়ে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেন,তুলা মিয়া নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে ওই টাকা আত্মসাত করেছেন। শুধু অব্যাহতি নয় ওই টাকা ফেরত না দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ওই প্রতিষ্ঠানে সমিতির কার্যকরী কমিটি,কল্যাণ কমিটি,সমন্বয় কমিটি ও অডিট কমিটির নেতৃবৃন্দসহ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বুধবার (৩মার্চ) গিয়েছিলেন। তুলা মিয়াকে আগে অবগত করলেও তিনি এদিন উপস্থিত থাকেন নি। আমরা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সকলকে বিষয়টি অবগত করেছি। তারা এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিষয়টির সমাধান দিবেন।
তুলা মিয়া গত কয়েক মাস ধরে সমিতিতে উপস্থিত হচ্ছেন না। টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সংগঠনের ৬ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
তারা আরও জানান,ইতোমধ্যে উপজেলার ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে চলে গেছেন। তুলা মিয়া ওই টাকা ও কাগজপত্র সমিতিতে ফেরত না দেওয়ায় আমরা ওই ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের টাকা দিতে পারছি না। দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে সংগঠনের ভাবমূর্তি। দ্রুত গতিতে টাকা এবং কাগজপত্রাদি ফেরত না পেলে সংগঠনের ৬ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী তুলা মিয়ার বিরুদ্ধে নানা আন্দোলনে যাবেন।