আসমা আহমেদ: নিঃসন্তান বোনের কাছে নিজ শিশুকন্যাকে লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান প্রাথমিকের শিক্ষক মোমিনুল ইসলাম। কিন্তু স্ত্রী কিছুতেই নিজ সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিতে রাজি নন। এ নিয়ে মতানৈক্য হলে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ওই গৃহবধূ।
নির্যাতিত গৃহবধূ উন্মে রুহানী রুমী প্রাণ রক্ষায় শিক্ষক স্বামীর বাড়ি ছেড়ে এখন তার বাবার বাড়ি চিরিরবন্দরের হযরতপুরে আশ্রয় নিয়েছেন।
উন্মে রুহানী রুমীর অভিযোগ, তার স্বামী মোমিনুলের কড়া নির্দেশ তাদের ৮ মাসের শিশুকন্যাকে সারাজীবনের জন্য স্বামীর বোনকে দিতে হবে। এজন্য তাকে দেয়া হবে এক লাখ টাকা। নির্দেশ মানা না হলে স্ত্রী ও সন্তানের মধ্যে যে কোন একজনের জীবনহানী ঘটবে বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে।
ঘটনা দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের হয়বতপুর চৈতপুকুর গ্রামের। গ্রামের বাসিন্দা ও হয়বতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের শিশুকন্যাকে বিক্রির জন্য স্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলো। কিন্তু স্ত্রী এতো ছোট বয়সী সন্তানকে অন্যের কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে প্রায়ই তার ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন।
ওই গৃহবধূ বলেন, দুধের শিশুকন্যাকে অন্যের কাছে বিক্রি করতে স্বামীর অমানবিক চাপ ও নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি সকল সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি যায়। এরপর তার স্বামী সেখানে এক লাখ টাকা নিয়ে আসে এবং সন্তানকে হস্তান্তর করতে চাপ দেয়।
স্বামীর এমন নির্দেশ পালন করতে অস্বীকৃতি জানালে সেখানেও তার ওপর চলে নির্যাতন। ওই শিক্ষক তার শ্বশুর-শাশুড়িকেও অকথ্য ভাষায় গালিগলাজ করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ত্যাগ করেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষক মমিনুল ইসলাম তার বোনের ইচ্ছা পূরণ করতে গৃহবধূর ওপর চাপ দেয়।
এ সময় নির্যাতিত গৃহবধূ কৌশলে আবার স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে বাবার বাড়িতে যায়। শুক্রবার সন্ধায় ওই শিক্ষক তার স্ত্রী রুমী ও সন্তানদের আনতে আবার যায় শশুরবাড়ি। এ সময় নির্যাতিতা গৃহবধূ ভয়ে তার স্বামীর সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।
গৃহবধূ উন্মে রুহানী রুমী জানান, তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বামীর বাড়িতে ফিরে যেতে চায় এবং শিশু সন্তানসহ জীবনের নিরাপত্তা চায়।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় শিক্ষক মোমিনুল ইসলামের মা মোমেনা খাতুনের সাথে। ছোট দুধের শিশুকে তার নিজ মেয়ের কাছে লাখ টাকায় দত্তক রাখতে স্ত্রীর ওপর তার ছেলের নির্যাতন ও চাপ সৃষ্টির কথা অকপটে স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মোমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখেছি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে তাদের আইনি সহায়তা পাইয়ে দিতে আমি উদ্যোগ নেবো।