ডেস্ক: কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ বিবেচনা করে বিশ্বের সব দেশ যাতে এই টিকা সময়মত এবং একই সঙ্গে পায় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারিগরি জ্ঞান ও মেধাসত্ত্ব প্রদান করা হলে, এই ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণেরও অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভার্চুয়াল অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। এ অধিবেশনের মূল পর্ব সাধারণ বিতর্কে শনিবার বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘে এটি শেখ হাসিনার ১৭তম ভাষণ। এরআগে ১৬ বার সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিশ্বশান্তি ও সৌহার্দ্যরে ডাক দিয়েছেন তিনি। এবারই ব্যতিক্রম ঘটেছে। করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের কোনো রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান নিউইয়র্কে যাননি। আগে ধারণ করা ভিডিওতে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তৃতার একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল করোনা পরিস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রমাণ করেছে, আমাদের সকলের ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। আমরা কেউই সুরক্ষিত নই যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি। এই ভাইরাস আমাদের অনেকটাই ঘরবন্দি করে ফেলেছিল। যার ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি আর্থনীতিক কর্মকাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের এই অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করেছে।’
করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম থেকেই ‘জীবন ও জীবিকা’ দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন যাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছি। এতে ১০ মিলিয়নের বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছেন। আমরা ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছি। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ ৫ মিলিয়ন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায়ের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা প্রতি বছর প্রায় ৩৯ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করি। এ ছাড়া বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলাদের জন্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং সমাজের অনগ্রসর শ্রেণিসহ অন্যদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও ভাতার প্রচলন করেছি যার মাধ্যমে প্রায় ৯.১ মিলিয়ন পরিবার উপকৃত হচ্ছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি সহায়তার পাশাপাশি আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে তহবিল সংগ্রহ করে এতিম ও গরীব শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, স্কুল শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ যাঁরা সাধারণভাবে সরকারি সহায়তার আওতাভুক্ত নন, তাঁদের মধ্যে ২.৫ বিলিয়নের বেশি টাকা বিতরণ করেছি। যার ফলে সাধারণ মানুষকে করোনা ভাইরাস খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগী সনাক্তের সাথে সাথে আমরা ৩১-দফা নির্দেশনা জারি করেছিলাম। করোনাভাইরাস যাতে ব্যাপকহারে সংক্রমিত হতে না পারে, তার জন্য আমরা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছি। যার সুফল হিসেবে আমরা লক্ষ্য করছি, ঋতু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশে যেসব রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, এবার সেসব রোগ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।’
করোনা মহামারিতে আর্থিক খাতের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানিমুখী শিল্প, শ্রমিকদের সুরক্ষা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ওয়ার্কিং ক্যাপিট্যাল প্রদান, রপ্তানি বৃদ্ধিতে ঋণ প্রদান, কৃষি ও কৃষকদের সহায়তা, কর্মসৃজনের জন্য ঋণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বীমা চালুকরণ-ইত্যাদি খাত প্রণোদনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’ এ পর্যন্ত মোট ১৩.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যা দেশের মোট জিডিপি’র ৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা করোনাকালে খাদ্য উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। সেই সঙ্গে পুষ্টি নিশ্চয়তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের শিল্প কারখানা সচল রাখা এবং কৃষি ও শিল্পপণ্য যথাযথভাবে বাজারজাতকরণের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে বাংলাদেশের স্ব্যাস্থ্য ও অর্থনীতি এখনও তুলনামূলকভাবে অনেক ভাল আছে।’
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে স্থবিরতা সত্তে¡ও ৫.২৪ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলেও আশা প্রকাশ শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীআশাপ্রকাশকরেনবিশ্বশিগগিরইকোভিড-১৯এরভ্যাকসিনপাবে।তিনিবলেন, ‘এইভ্যাকসিনকেবৈশ্বিকসম্পদহিসেবেবিবেচনাকরাপ্রয়োজন।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy