মিহিরুজ্জামান জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ
যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে সাতক্ষীরায়। শহরের নারিকেলতলা থেকে পাকাপোলে ইজিবাইকে এ পথ পার হতে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু যানজটের কারণে সময় লেগে যায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। প্রতিদিন এ পথে আসা-যাওয়া করতে ২ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। ইজিবাইকে বসে আশরাফুল ইসলাম যানজট নিয়ে নিজের বিরক্তি ঝাড়লেন এভাবে।তীব্র যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে সাতক্ষীরার শহরে। মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৪০-৪৫ মিনিট। এ কারণে শহরবাসীর একদিকে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছে। শহরের একাধিক স্থানের যানজট ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। যাত্রীদের চরম ভোগান্তি চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্ভোগ চলে আসলেও তা নিরসনে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন শহরবাসী। তবে নগরবাসী এই যানজটের জন্য পৌরসভা ও ট্রাফিক পুলিশের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন।এদিকে দীর্ঘ যানজটে পড়ে যাত্রীরা যেমন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে তেমনি যানবাহন চালকরাও।পথচারী ও যাত্রীদের অভিযোগ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, সড়কের প্রস্থ কম হওয়া সহ বিভিন্ন কারণে সাতক্ষীরা শহরে তীব্র যানজট হচ্ছে। যানযটের অন্যতম কারণ হচ্ছে বাস, অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওঠানো ও নামানো। অবৈধভাবে ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত ভ্যান চলাচল। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। সড়কের প্রস্থ কম হওয়া এবং পাশে ফুটপাত না থাকা।সাতক্ষীরা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়তন ৩১ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। পৌরসভায় ২০১ কিলোমিটার পাকা সড়ক আছে। শহরের মধ্যে পড়েছে ৩০ কিলোমিটার সড়ক। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকায় সড়কের প্রস্থ অনেক কম। সড়কের পাশে নেই ফুটপাত। তা ছাড়া সড়কে যত্রতত্র বাস, অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওঠানো ও নামানো হয়। এসব কারণে সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে।স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সড়কের দুই পাশ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি দখল করে রেখেছে অনেক জায়গা। সড়কে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস সহ অন্যান্য যানবাহন অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে। এতে শহরে যানজট হচ্ছে। শহরের শহীদ নাজমুল সরণি, শহীদ কাজল সরণি, শহীদ সিরাজ সরণি, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের শহীদ আলাউদ্দিন চত্বর থেকে ইটেগাছা পর্যন্ত, সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের নিউ মার্কেট থেকে সার্কিট হাউস মোড় পর্যন্ত, তুফান মোড়, সুলতানপুরের কেষ্টময়রার মোড়, বড়বাজার মোড়, পুরোনো সাতক্ষীরায় যানজট বেশি থাকে।সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরে অবস্থান করে দেখা গেছে, সাতক্ষীরাকালীগঞ্জ সড়ক ও সাতক্ষীরা-যশোর সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট চলছে। যানজটের কারণে যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকায় যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ফুটপাত না থাকায় মানুষ হেঁটেও যাতায়াত করতে পারছে না।সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছেন স্কুল শিক্ষক নাসিমা আক্তার। তিনি আলিপুরের বাসিন্দা। তিনি বলেন, মেডিকেল থেকে সদরে আসতে একাধিকবার যানজটের সম্মুখীন হয়েছি। সবচেয়ে বেশি সময় যানজটে ছিলাম নিউমার্কেটের সামনে।ওখানে দেখি সবসময় যানজট লেগেই থাকে।সাতক্ষীরা নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার জানান, যানজটের কারণে তার ১০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগেছে প্রায় ১ ঘণ্টার মতো, উপরন্তু সড়কে ধুলা ওড়ার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।সাতক্ষীরা শহরের ব্যবসায়ী আজিজুল ইমরান জানান, সাতক্ষীরা শহরে একবার কেউ এলে আর আসবে বলে মনে হয় না। আরেক ব্যবসায়ী মেহেদি হাসান জানান, ধুলার কারণে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে ধুলোয় বসা যায় না।বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের জেলা শাখার সভাপতি এড. এসএম শরিফ আজমীর হুসাইন রোকন বলেন, পৌর এলাকায় সড়কের প্রস্থ অনেক কম। সড়কের পাশে নেই ফুটপাত। তাছাড়া সড়কে যত্রতত্র বাস, অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওঠানো ও নামানো হয়। এসব কারণে সড়কে তীব্র যানজট হয়। তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা শহরে এক দশকে লোকসংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে যানবাহন বেড়েছে। কিন্তু সড়কের প্রস্থ বাড়েনি। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি। বর্তমানে ছোট্ট এ শহর ঘিরে চার হাজারের মতো ইজিবাইক চলে। ইঞ্জিন চালিত ভ্যান চলে তার চেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শহরবাসি।সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ৫০ বছরে এই শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৪/৫ গুন। আর প্রতিদিন শহরে চলাচলকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১৫/২০গুন। বিশেষ করে শহরতলীর পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার মানুষ চা খেতেও এখন শহরে আসে। এক সময়ে শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ উপজেলার মানুষ শহরে আসার জন্য ১৫দিন পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নিত। নদী পথে আসতো। ২/৩দিন শহরে থেকে কাজ মিটিয়ে ফিরে যেত। কিন্তু এখন জেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকার মানুষও যখন মনে করছে শহরে আসছে, আবার কাজ মিটিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ৫০ বছর পূর্বে রাস্তা ঘাট যেমন ছিল আজও তেমনই আছে। শহরের কোন রাস্তার প্রস্থ বাড়ানো হয়নি। তাছাড়া ভাঙাচোরা রাস্তার কারনে ধীর গতিতে চলাচলের কারনে সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। এক সময়ে সাতক্ষীরা শহরে দুর দুরন্ত থেকে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম প্রাণসায়র খালের নৌপথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারনে ঢাকা শহরের চেয়েও এখন সাতক্ষীরা শহরে আরো তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি ফোন রিসিভ না করায় পৌর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।শহরের যানজট প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শহরমুখী ইজিবাইকের লাইসেন্স সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রদান করে, আমরা পৌরসভাকে বলেছি যে সব গাড়ির লাইসেন্স দেওয়া হয়নি সেগুলো আটক করার জন্য। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, অবৈধ যানবাহন আটক করে রাখার মতো পর্যাপ্ত যায়গা পুলিশের নেই। তিনি আরও বলেন, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে বিগত দুই বছর ধরে প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দেওয়া জন্য আবেদন করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোন জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়নি। যার ফলে এসব যানবাহন আটক করা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে যানবাহন সংক্রান্ত কোন নিয়ম মানা না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন ট্রাফিক পুলিশ। যানযট নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy