প্রিন্ট এর তারিখঃ জানুয়ারী ২৪, ২০২৫, ১২:৫৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১, ১২:৩২ এ.এম
সাতক্ষীরায় আজ গুড়পুকুর মেলায় বোমা হামলার ১৯ বছর পূর্তি
মিহিরুজ্জামান জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ
সাতক্ষীরায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মাত্র দশ মিনিটের ব্যবধানে শহরের দুটি জনাকীর্ন স্থানে পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপের ভয়ংকর ঘটনার দিন সেই ২৮ সেপ্টেম্বর আজ।হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর সান্ধ্যকালীন অন্ধকার পরিবেশে এই সন্ত্রাসী তান্ডবে সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন তিন জন। আর গুরুতর আহত হয়ে এখনও পঙ্গুত্বের অভিশাপে ভুগছেন শত মানুষ। জোট সরকার আমলে জঙ্গিদের এই হামলার কোনো বিচার হয়নি আজ অবধি। এমনকি কারা এর সাথে সরাসরি জড়িত তাও খুঁজে দেখা হয়নি। ২০০২ সালের সেই দিনে সেই নিহতরা আজ ১৯ বছর পর আবারও স্মরিত হবেন তাদের স্বজনদের কাছে।তখন চলছিল প্রতিবারের মতো সাতক্ষীরার চিরায়ত ঐতিহ্য গুড়পুকুর মেলা। হাজার হাজার নর নারী সরব পদচারনায় শহরের মেলাঙ্গন যখন মুখরিত তখন সাতক্ষীরা ষ্টেডিয়ামে সার্কাস আর রকসি হলে চলছিল সিনেমা শো। এমন এক আনন্দঘন মুহূর্তে মাত্র দশ মিনিটের ব্যবধানে এই দুটি স্থানের জনাকীর্ন অনুষ্ঠানে পড়ে উপর্যুপরি বোমার আঘাত।
মুহূর্তেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় সবকিছু। দিগি¦দিক জ্ঞানশুন্য হয়ে মানুষ শুধুই ছুটতে থাকে। বিদ্যুতহীন এক ভৌতিক তান্ডবের মধ্যে কানে আসে শুধুই আর্তনাদ।সেদিন সেই মুহুর্তে অনেক হাতড়েও নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না এতে ক’জন নিহত হয়েছে। অসমর্থিত খবরে বলা হয় অজ্ঞাতনামা তিন জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। সব জাতীয় দৈনিকেও শীর্ষ শিরোনামে তিন জন নিহতের কথা প্রকাশ হয়। পরদিন রাত পোহাতেই সাতক্ষীরা পৌঁছান তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব মো. মোদাব্বির, বানিজ্য উপদেষ্টা ও সাতক্ষীরা জেলা মন্ত্রী বরকতুল্লাহ বুলু, খুলনার মেয়র শেখ তৈয়েবুর রহমান প্রমুখ। রুদ্ধদ্বার কক্ষে বৈঠক করে তারা বলেন এতে কেউই মারা যায়নি। বরং কিছু পত্রিকা চার দলীয় জোট সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে তিনজন নিহতের মিথ্যা প্রচার দিয়েছে।
এর পরই খবর এলো বোমার আঘাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ঢাকার স্কুল ছাত্র মেবতাউল ইসলাম মুক্ত, দেবহাটার হাফিজুর রহমান পিনু এবং সাতক্ষীরার ডা. সেলিনা রহমান।সাতক্ষীরা জজ আদালতের পিপি এড. আবদুল লতিফ জানান, বহুল আলোচিত এই তান্ডবের পর পুলিশ আওয়ামী লীগ দলীয় লোকজনকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকায় জেআইসিতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে কিছুই না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়। কয়েক দফায় হাত বদলের পর সিআইডি এ সংক্রান্ত দুটি মামলায় ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ফাইনাল রিপোর্ট দেয়। এতে বলা হয় ক্ষমতাসীন দল বিএনপির দুই গ্রুপের দিদান্দের জের হিসাবে এই ঘটনা ঘটেছে।
তবে এই বিরোধে কারা জড়িত ছিল তা আর চিহ্ণিত করার চেষ্টাও করেনি পুলিশ।এভাবেই মামলা দুটি শেষ হয়ে যায়। রাজধানী ঢাকার বাইরে কোনো জনাকীর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমাবাজির ঘটনা ছিল এটাই ছিল প্রথম।এদিকে পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে লেখালেখিতে বারবার সাংবাদিকরা উল্লেখ করেন যে, জঙ্গিরাই এই বোমাবাজির জন্য দায়ী।এরপর ২০০৫ সালে জেএমবি জঙ্গিদের সিরিজ বোমার পর প্রশাসন নিশ্চিত হয় যে ২৮ সেপ্টেম্বরের বোমাবাজির জন্য দায়ী ছিল জঙ্গিরাই।
ঢাকায় গ্রেপ্তার হুজি জঙ্গি বোমারু মিজান তার স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছিল তাদের নেতৃত্বে সাতক্ষীরায় বোমার ঘটনা ঘটেছিল। হুজি জঙ্গি মুফতি হান্নানও সাতক্ষীরায় বোমা হামলার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়।দীর্ঘদিন পর বোমা হামলার এই দুই মামলা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বোমারু মিজানকে সাতক্ষীরায় এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।সি,আই,ডি মামলা দুটি পুনঃতদন্ত করছে বলে জানান তিনি।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy