সাভারের আশুলিয়ায় অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা
আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধি,
প্রতিহিংসা এবং মালিকানার লভ্যাংশ নিয়ে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন তারই অংশীদাররা
সোমবার (৯ আগস্ট) দুপুর সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার তিনজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে দুপুরে ১টায় উপজেলার আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর ইউনিয়নের বেরন রুপায়ন মাঠ এলাকায় অবস্থিত সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মাটি খুঁড়ে নিহতের মরদেহের খণ্ডিত পাঁচ টুকরো উদ্ধার করা হয়। এরপরই সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
গ্রেফতাররা হলেন- সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মোতালেব, রবিউল এবং তার ভাগিনা বাদশা মিয়া। এদের মধ্যে বাদশাকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে, মোতালেবকে রাজধানীর আশকোনা থেকে এবং রবিউলকে আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার কলেজ অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন। তিনি অনেক ভালো কোচিং করাতেন বলে রবিউলের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল। এরই জেরে মিন্টু চন্দ্র বর্মনের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার লভ্যাংশ নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার মোতালেব, রবিউল ও তার ভাগিনা বাদশা মিলে অধ্যক্ষকে হত্যা করে লাশ গুমের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ জুলাই রাতে কোচিং শেষে মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে তারা প্রতিষ্ঠানটির ১০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে মিন্টু চন্দ্র বর্মনের মাথায় আঘাত করেন বাদশা। পরে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর মরদেহ ৬ টুকরো করেন তারা। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁচটি টুকরো প্রতিষ্ঠানের সামনেই মাটি চাপা দিয়ে রাখে এবং তার খণ্ডিত মাথা একটি পলিথিনে পেঁচিয়ে রাজধানীর আশকোনার নর্দ্দা এলাকার একটি ডোবায় ফেলে দেন। মাথাটি উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে রাখা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবহৃত দা, শাবল, কোদাল, সিমেন্ট, বালু, তাদের পরিহিত গেঞ্জি এবং জিনস প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল মরদেহটি পুঁতে রাখার পর জায়গাটি প্লাস্টার করে রাখবে এবং খণ্ডিত মরদেহের অংশ বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘মিন্টু চন্দ্র বর্মন নিখোঁজের ঘটনায় নিহতের ছোটভাই ২২ জুলাই আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ঘটনাটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও বিষয়টির ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে নিখোঁজের ২৭ দিন পর সোমবার মধ্যরাতে প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার রবিউলকে শনাক্ত করি এবং রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেফতার করি। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। রবিউলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোতালেবকে রাজধানীর আশকোনা এলাকা থেকে এবং বাদশাকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে মিন্টু চন্দ্র বর্মন মোতালেব, শামসুজ্জামান ও রবিউল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে সাভারের ইয়ারপুর রুপায়ন মাঠ বেরন এলাকার জাহিদুল ইসলামের বাড়ি ভাড়া নিয়ে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে পার্শ্ববর্তী স্বপ্ন নিবাসে ভাড়া থেকে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মিন্টু।
এর আগে থেকেই মিন্টু চন্দ্র বর্মন ওই এলাকার অন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করতেন। তিনি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়াইপাড়া গ্রামের শরত বর্মনের ছেলে।’
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy