নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সাভার: মানবাধিকার শীর্ষক আলোচনা সভা ও ঈদ পূর্ণমিলনী ২০২০ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২২ আগস্ট) সকাল ১১ টায় সাভারের রাজাশন এলাকায় কিং থাই চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থা এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে চলতে মানুষকে তার নিজের অধিকার সচেতন হতে হয়। এসময় আইনি ঝামেলা সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্য বক্তব্য তুলে ধরেন বক্তারা। উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলা হয় হঠাৎ গ্রেফতার হলে কি করবেন ?
প্রথমত বিনা ওয়ারেন্ট অথবা নোটিশ না দিয়ে পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে না। (সিআরপিসি এক্ট ৫৪ ছাড়া) কোনো নাগরিককে গ্রেফতারের সময় গ্রেফতারের কারণ, গ্রেফতারকারী অফিসারের নাম, গ্রেফতারের সময় ও স্থান সম্পর্কিত একটি মেমো পুলিশ ওই নাগরিক বা গ্রেপ্তারকৃত নাগরিকের বাড়ির লোককে দিতে বাধ্য। এই জিনিসটি গ্রেপ্তারকৃতদের পরিবারকে অবশ্যই চেয়ে নিতে হয়। মামলার ক্ষেত্রে এটির গুরুত্ব অপরিসীম।
কোনো নাগরিককে গ্রেফতার করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে হাজির করতে বাধ্য এবং ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া আর একদিনও ওই নাগরিককে অতিরিক্ত আটকে রাখতে পারে না। কোর্ট ছুটি থাকলে সেক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেটের আবাসিকে হাজির করাতে হয়।গ্রেপ্তারকৃত নাগরিক যদি মহিলা হয় কোনভাবেই মহিলা পুলিশ ছাড়া গ্রেফতার বা তল্লাশী চালানো যায় না। আইন অনুযায়ী পুলিশ লক আপে নাগরিককে কোনও প্রকার শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার করতে পারে না। এমনকি চড় মারতেও পারে না।
উপস্থিত বক্তারা বলেন, পুলিশ হয়রানি করলে নাগরিকের করণীয় কি.?
আপনারা জেনে থাকবেন সাধারণ ভাবে সরকারবিরোধী বা শাসকদল বিরোধী কোনও পোষ্টের জন্য পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না। কারণ বাক স্বাধীনতার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত। কিন্তু পুলিশ মামলা দায়ের করে অন্য ধারায় নাগরিকগণ পুলিশী হয়রানির শিকার হতে পারেন যদি কোন নাগরিক তার ফেসবুক পোষ্টে- অশ্লীল কোনো শব্দ ব্যবহার করেন, ভিত্তিহীন গুরুতর অভিযোগ করেন, কারো চরিত্রহনন করেন। উপস্থিত সবাইকে এ বিষয়গুলি সম্বন্ধে সতর্ক থেকে এড়িয়ে চলারও আহ্বান জানান তারা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, স্থানীয় রেপুটেড কোনও ক্রিমিন্যাল ল'ইয়ার অথবা স্থানীয় মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী কিংবা মিডিয়ার ফোন নাম্বার হাতের কাছে রাখুন অথবা সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার সহায়তা নিন।
সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। আহবানে বলেন, কোনও ব্যক্তি পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন জানতে পারা মাত্র তার পাশে দাঁড়ান। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে খবরটি ছড়িয়ে দিন। এবিষয়ে বিজ্ঞ আইনজীবিদের আরও পরামর্শ সহযোগিতা নিন অথবা সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার বিনামূল্যে আইন সহায়তা কারি আইনজীবী রয়েছেন তাদের সহযোগিতা নিন।
বাংলাদেশ পুলিশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরুন। নেতিবাচক না ভেবে ইতিবাচক মনে পুলিশের সহায়তা পেতে কোন বেগ পেতে হয়না এ বিষয়ে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতি গন সচেতনতা তৈরিতে সহয়তা করুন।
সভায় সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান জে. এইচ. রানার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি মোঃ শাহ আলম সরকার, বিশেষ অতিথি মোঃ আবুল কালাম আজাদ পুলিশ পরিদর্শক, (প্রশাসন) ডি এমন পি। মোহাম্মদ আল-আমিন তালুকদার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টালিজেন্স) সাভার মডেল থানা। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জসিম উদ্দিন সোহাগ, আলী আশরাফ, মোঃ মফিজুর রহমান, হাজী সেলিম আহমেদ, মোঃ আল আমিন, প্রশিক্ষক ইঞ্জিনিয়ার অনিকুল ইসলাম শাওন, সঞ্চালনায় সোহেল রানা সহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো: আবু তাহের প্রমুখ।
এ সময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মো: শাহ আলম সরকার বলেন,মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণে আমাদের সকলকে বিশেষ ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন । মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হতে সামাজিক ও আইনি বিষয়ক সংস্থার টিমের সকল সদস্যবৃন্দের প্রতি এ বিষয়ে সুদৃষ্টি ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সংস্থা কর্তৃক রক্তদান কর্মসূচি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এলাকায় সহায়তা প্রদান সহ নাগরিকের আইনি সহায়তায় ভূমিকা রাখায় সংস্থাটির ইতিবাচক প্রশংসা করেন তিনি।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মো: আল আমিন পুলিশ পরিদর্শক(ইন্টেলিজেন্ট) প্রথমেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ ই আগস্টে তার পরিবারের নিহত সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু এই কথাটার বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে আরো সু- স্পষ্ট হয়েছে। পুলিশ সব সময় জনগণের পাশেই রয়েছে।
এ সময় সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার সকলকে পুলিশি কার্যক্রমে সহায়তা ও পুলিশের সেবা গ্রহণ করার আহ্বান জানান। সব সময় আইনের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ সেবাদানে প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন তিনি ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সংস্থার চেয়ারম্যান জে.এইচ. রানা বলেন, সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার কার্যক্রম দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিধি দ্রুত সময়ে সারাদেশে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দিন দিন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অধিকার সচেতন হয়ে এই পরিবারে যুক্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত যারা যুক্ত হয়েছেন তাদের সকলকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও সততা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি বৃন্দের মাঝে সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থা সংবলিত ক্রেস্ট ও চাবির রিং বিতরণ করা হয়। সংস্থায় নতুন যুক্ত হয়েছেন এমন সদস্যদের আইডি কার্ড বিতরণ করে ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্য সহ দেশের উন্নতিতে বিশেষ দোয়া করে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy