সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এসআর গ্রুপের হাইওয়ের রেস্টুরেন্ট ‘ফুড ভিলেজ’ ও ‘ফুড ভিলেজ প্লাস’ এ ১৯৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। রাজধানীর নিকুঞ্জ-১ এলাকার এসআর গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক হিসাবপত্র জব্দ করে এ তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার ও ফেরদৌসী মাহবুব। এসময় জব্দকৃত কাগজপত্র যাচাই করে ভ্যাট গোয়েন্দার দল দেখতে পায় উত্তরবঙ্গে প্রতিষ্ঠানের দুটো হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছে।
এর মধ্যে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বগুড়ার শেরপুর ফুড ভিলেজ লিমিটেড, অন্যটি একই মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে অবস্থিত ফুডভিলেজ প্লাস। সিরাজগঞ্জ ভ্যাট সার্কেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে জুলাই ২০২০ পর্যন্ত ৩ বছর ৬ মাসে ফুড ভিলেজ প্লাস রেস্টুরেন্টে বিক্রি দেখিয়েছে ২৩ কোটি এক লাখ টাকা। এর বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। কিন্তু জব্দকৃত কাগজে দেখা যায় প্রকৃত বিক্রয়ের পরিমাণ ১২৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফুড ভিলেজ প্লাস এই সময়ে বিক্রয় গোপন করেছে ১০০ কোটি টাকা।
এখানে ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ বর্তায় ৪ কোটি সাত লাখ টাকা। অন্যদিকে, একই মালিকানাধীন ফুড ভিলেজ লিমিটেড ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত ৩ বছর ৫ মাসে মাসিক ভ্যাট রিটার্নে বিক্রয় দেখানো হয়েছে ২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এতে ভ্যাট দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তবে ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানে এই সময়ে ফুড ভিলেজ লিমিটেডের প্রকৃত বিক্রয় ১২২ কোটি ২২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এই তথ্য গোপন করায় ফুড ভিলেজ লিমিটেড কর্তৃক ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এতে সুদ আরোপযোগ্য হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ কোটি টাকা।
দুটো রেস্টুরেন্টে প্রকৃত বিক্রয় গোপন করা হয়েছে মোট ১৯৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
ভ্যাট রিটার্নে এসআর গ্রুপ প্রায় ৭২ শতাংশ তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এই অসৎ উপায়ে তথ্য গোপন করায় সরকার এই দুই রেস্টুরেন্ট থেকে ২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ভ্যাট থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
রেস্টুরেন্ট দুটো মূলত ঢাকা-রংপুর হাইওয়েতে বাসের যাত্রীদের খাবার পরিবেশন করে। এতে নন-এসি, এসি ডিলাক্সে খাবার বিক্রয় এবং একটি কর্নারে মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় পণ্য বিক্রি করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দা গোপন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এসআর গ্রুপের হেড অফিস বাড়ি ৪৬, লেক রোড, নিকুঞ্জ ১ এ অভিযান পরিচালনা করে এবং অফিসের কাগজপত্র ও কম্পিউটারের তথ্যাদি জব্দ করে।
এই অভিযানে উক্ত দুটো রেস্টুরেন্ট ছাড়াও দি গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি, সুং ফুড গার্ডেন, এসআর ট্রাভেল ও পার্সেলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রও আটক করা হয়। এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট রিটার্নের সাথে আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।